সংবাদমাধ্যমের নীতিনির্ধারণীতে নারীরা এখনো পিছিয়ে

সংবাদমাধ্যমে সাধারণভাবে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। কিন্তু এই মাধ্যমের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তাঁরা এখনো পিছিয়ে আছেন। সংবাদমাধ্যমগুলোতে বয়স্ক ও অভিজ্ঞ নারীরা জায়গা পাচ্ছেন না। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘আর্টিকেল ১৯’ আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ কথা বলেন।


গতকাল সোমবার নগরের ব্র্যাক সেন্টার ইনে ‘প্রোমোটিং অ্যান্ড এনহ্যান্সিং রাইটস অব উইমেন জার্নালিস্টস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
আয়োজক সংগঠনের পরিচালক তাহমিনা রহমান বিভিন্ন সময়ে তাঁদের করা জরিপের তথ্য উল্লেখ করে বলেন, দেশের সংবাদমাধ্যমে এখন নারী কর্মীর সংখ্যা মোট কর্মীর ৭ শতাংশ। কিন্তু নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আছেন মাত্র দশমিক ৬ শতাংশ নারী। ঢাকার তুলনায় জেলা পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ খুবই কম। নারী কর্মীদের ৭৭ দশমিক ৬ শতাংশ কাজ করেন ঢাকায়। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানিসহ নানা বৈষম্যেরও শিকার হচ্ছেন এসব নারী।
নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক পারভীন সুলতানা ঝুমা বলেন, খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও সাংবাদিক নিয়োগের ক্ষেত্রে পুরুষদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। বয়স হলে পুরুষ সাংবাদিকেরা অভিজ্ঞ হন আর নারীরা বাতিল হয়ে যান। অনেক সংবাদমাধ্যম নারীদের অংশগ্রহণকে নিরুৎসাহিত করে। কারণ তাঁদের মাতৃত্বকালীন ছুটি দিতে হয়।
নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক বলেন, সংবাদমাধ্যমে যেন কমপক্ষে ২৫ শতাংশ পদ নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়, সে নিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলোর সঙ্গে তাঁরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আলোচকেরা নারী সাংবাদিকদের প্রতি বৈষম্যের বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত দেন।
প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমগুলোতে নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু পুরুষেরা এই বৈষম্যের বিষয়টি মানতে চান না।
পাক্ষিক অনন্যার সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, যোগ্যতা অধিকারের পটভূমি তৈরি করে। দেশে সংবাদমাধ্যম এখন একটি বিকাশমান খাত। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন লোক তৈরি করছে না। একেক জায়গা থেকে ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতাই প্রধান।
অনুষ্ঠানের পরিচালক বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, সাংবাদিকতা একটি নষ্ট প্রজন্মের সময় পেরোচ্ছে। এখানে এখন টাকাই সব। সাংবাদিকতার দাপট, প্রভাব নষ্ট হওয়ার সব উপাদান ঢুকে গেছে এই পেশায়।
এটিএন বাংলার বার্তা বিভাগের প্রধান ভানুরঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, সংবাদমাধ্যমগুলোয় নারীদের জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। অনেক কার্যালয়ে নারীরা ভালো আছেন। কিন্তু সেই বিষয়গুলো কখনোই আলোচনায় আসে না।
‘আর্টিকেল ১৯’ ও নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের বিভিন্ন সমীক্ষায় অংশ নেওয়া জেলা পর্যায়ের সাংবাদিকেরা বলেন, মফস্বলে বেতন না পাওয়া, সাংবাদিকতাকে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা ইত্যাদি কারণে নারীরা এই পেশায় যুক্ত হচ্ছেন না।
দৈনিক মানবজমিন-এর বরিশাল প্রতিনিধি জিয়া শাহীন বলেন, বরিশালে শিক্ষানবিশ নারী সাংবাদিক চেয়ে সাত দিন একনাগাড়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেউ আগ্রহী হননি। জেলার ২০০ সাংবাদিকের মধ্যে মাত্র চারজন নারী। অনেক সময় নারী সাংবাদিকেরা মালিকপক্ষ বা সহকর্মীদের যৌন হয়রানির শিকার হন। কিন্তু প্রতিকার পান না।
কক্সবাজার, রংপুর ও নরসিংদী থেকে আসা জেলা পর্যায়ের সাংবাদিকেরা নারী সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।

No comments

Powered by Blogger.