পবিত্র কোরআনের আলো-মুনাফিকরা যতই বিত্তশালী হোক আসলে তারা এক দুর্বলচিত্ত সম্প্রদায়

৫৩. ক্বুল আনফিক্বূ ত্বাওআ'ন আও কারহান লান ইয়্যুতাক্বাব্বালা মিনকুম; ইন্নাকুম কুনতুম ক্বাওমান ফা-ছিক্বীন।
৫৪. ওয়া মা মানাআ'হুম আন্ তুক্ব্বালা মিনহুম নাফাক্বাতুহুম ইল্লা আন্নাহুম কাফারূ বিল্লা-হি ওয়া বিরাসূলিহী ওয়া লা ইয়া'তূনাস সালা-তা ইল্লা ওয়া হুম কুছা-লা ওয়া লা- ইউনফিক্বূনা ইল্লা ওয়া হুম কা-রিহূন।


৫৫. ফালা তু'জিব্কা আমওয়া-লুহুম ওয়া লা আওলা-দুহুম; ইন্নামা ইউরীদুল্লা-হু লিইউআ'য্যিবাহুম বিহা ফিল হায়া-তিদ্ দুনিয়া ওয়া তায্হাক্বা আনফুছুহুম ওয়া হুম কা-ফিরূন।
৫৬. ওয়া ইয়াহ্লিফূনা বিল্লা-হি ইন্নাহুম লামিনকুম; ওয়া মা-হুম্ মিনকুম ওয়া লা-কিন্নাহুম ক্বাওমুন ইয়্যাফ্রাক্বূন। [সুরা : আত্ তাওবা, আয়াত : ৫৩-৫৬]

অনুবাদ
৫৩. (হে নবী!) আপনি বলে দিন, চাঁদা তোমরা খুশি মনে দাও অথবা অসন্তুষ্ট হয়ে, তোমাদের সে দান কখনো কবুল করা হবে না। তোমরা তো এমন মানুষ, যারা ক্রমাগত পাপকর্মে লিপ্ত আছ।
৫৪. তাদের চাঁদা কবুল না হওয়ার পক্ষে বাধা তো এটা যে তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্য। তারা নামাজে আসলে গড়িমসি করে আসে এবং সৎ কাজে কোনো অর্থ ব্যয় করলে তা করে অসন্তুষ্ট হয়ে।
৫৫. তাদের অর্থবল ও লোকবল যেন তোমাদের বিস্মিত করে না দেয়। আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ায়ই এসব জিনিস নিয়ে তাদের শাস্তি দেবেন। আর যখন তারা মৃত্যুবরণ করবে তখন কাফির অবস্থায়ই মরবে।
৫৬. তারা আল্লাহর নামে কসম করে বলে যে তারা তোমাদের দলভুক্ত অথচ তারা তোমাদের দলভুক্ত নয়। প্রকৃতপক্ষে তারা এক দুর্বলচিত্ত সম্প্রদায়।

ব্যাখ্যা
৫৩ ও ৫৪ নম্বর আয়াত দুটি নাজিল হয়েছে পূর্বোলি্লখিত জাদ ইবনে কায়েসের একটি বক্তব্যের সূত্র ধরে। এক রেওয়াতে আছে : তাবুকের অভিযানে যাওয়ার ব্যাপারে একে তো সে নারীসংক্রান্ত বেহুদা ওজর পেশ করেছিল। এরপর সে প্রস্তাব করেছিল, যুদ্ধে অংশগ্রহণের পরিবর্তে সে যুদ্ধের জন্য চাঁদা দিয়ে দেবে। তার এ প্রস্তাবের জবাবে এ আয়াতগুলো নাজিল হয় এবং এতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়, মুনাফিকরা স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যেভাবে চাঁদা দিক না কেন তা কোনোভাবেই গৃহীত হবে না। মুনাফিকদের দান এ জন্যই গৃহীত হবে না যে তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্য ও পাপচারী।
৫৫ নম্বর আয়াতে দুনিয়ার বিষয়-সম্পত্তি সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ও মুসলমানদের কাঙ্ক্ষিত জীবনবোধ সম্পর্কে বলা হয়েছে। ইসলামের শিক্ষা হলো, দুনিয়ার বিষয়-সম্পত্তি এমন কোনো বিষয় নয়, যা মানুষের জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হতে পারে। মানুষের জীবনের প্রকৃত লক্ষ্য হতে হবে সত্য ও ন্যায়ের ওপর জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। তাই অসত্য ও অন্যায়ের পথে থাকা নিচু-চরিত্রের লোকদের বিত্ত-বৈভব ও জাঁকজমক দেখে বিচলিত হওয়ার বা থমকে যাওয়ার কিছু নেই। দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে এবং নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে অর্থ-সম্পদের প্রয়োজন হয়। সে জন্য বৈধ উপায়ে অর্থ-সম্পদ উপার্জন কোনো খারাপ কাজ নয়, বরং খুবই জরুরি, এমনকি মহৎ কাজও। তাই বলে অর্থ-সম্পদ জীবনের মূল লক্ষ্য হওয়ার যোগ্য নয়, বরং উপলক্ষ মাত্র। অন্যদিকে সম্পদ অনর্থের মূল। মানুষকে বিভ্রান্তি ও পাপাচারের দিকে নিয়ে যাওয়ারও অবলম্বন। অতিরিক্ত অর্থ বা অর্থ লালসা মানুষকে অন্যায়, অবিচার ও অসংযত জীবনের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এভাবে অর্থসম্পদ মানুষের শাস্তিরও কারণ হয়ে উঠতে পারে।
৫৬ নম্বর আয়াতে মুনাফিকদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। তারা তো নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করে এবং আল্লাহর কসম করে বলে যে তারা মুসলমানদের দলভুক্ত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা মুসলমানদের দলভুক্ত নয়। তাদের অন্তরে যে ব্যাধি রয়েছে এ কথা কোরআন মজিদের অন্যত্র অনেক জায়গায় বলা হয়েছে। তবে এ আয়াতে বিশেষভাবে বলা হয়েছে, তাদের দুর্বলচিত্ত ও দোদুল্যমানতার বিষয়টা।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.