টেলিভিশনের টকশো নিয়ে সরকারের স্পর্শকাতরতা by ড. মাহবুব উল্লাহ্

খবরে প্রকাশ, সরকার টেলিভিশনের টকশো নিয়ন্ত্রণে অগ্রসর হচ্ছে। বেশ কিছুদিন আগে তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ টেলিভিশন সম্প্রচারে নীতিমালার কথা বলেছিলেন। তখন অনেকের মনেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল, এই নীতিমালার উদ্দেশ্য কী হবে। অনেকের মনেই নীতিমালা সম্পর্কে একটি আশঙ্কা কাজ করেছিল।
অর্থাত্ নীতিমালা করে অবাধ তথ্য ও মতামত ব্যক্ত করার ওপর শৃঙ্খল পরানোই যে নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য, এ ব্যাপারে সন্দেহমুক্ত হতে পারছিলেন না অনেকেই। নীতিমালা যদি সুনীতি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে প্রণীত হয় তাহলে কারোরই আপত্তি থাকার কথা নয়। যেমন—দর্শক বিশেষ করে কোমলমতি শিশু ও বালক-বালিকাদের মনোবৈকল্য ঘটতে পারে এমন কোনো আতঙ্কজনক দৃশ্য, কুরুচিপূর্ণ, যৌন আবেদনপূর্ণ দৃশ্য, জাতীয় ভাবধারা ও সংস্কৃতির সঙ্গে সংঘাতময় কোনো ধরনের বক্তব্য প্রচার অথবা অভিনয়, জাতিগত ও বর্ণগত সংঘাত উষ্কে দিতে পারে এমন কোনো প্রচারণা বা দৃশ্য সম্প্রচার প্রভৃতি অবশ্যই পরিত্যাজ্য। পাশ্চাত্য দুনিয়ায় যেখানে তথ্য ও মতামত সম্প্রচারের ওপর খুব সামান্যই বিধিনিষেধ আছে, সেখানেও এসব ক্ষেত্রে নিয়মনীতি মেনে চলা হয়। এটা সাংবাদিকতার এথিকসের পর্যায়ভুক্ত। রাষ্ট্রীয়ভাবে নির্দেশনা না থাকলেও পেশাগত এথিকসের কারণে এ ধরনের সম্প্রচার থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকার চেষ্টা করে পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমগুলো। তার পরও অনেক সময় বৃহত্তর সামাজিক নৈতিকতা প্রতিষ্ঠার দায় থেকে আপাতদৃষ্টিতে আপত্তিকর কিংবা অশোভন সম্প্রচারে নিয়োজিত হতে বাধ্য হয় পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমগুলো। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও মনিকা লিউনস্কির মধ্যে কথিত যৌন সম্পর্কের বিষয়টি মার্কিন সমাজে এমন আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল যে, প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের বিরুদ্ধে অভিশংসন বা ইমপিচমেন্ট হতে যাচ্ছিল। প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনকে বিষয়টি সম্পর্কে প্রায় ছয় ঘণ্টাব্যাপী যেভাবে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জেরা করা হয়েছিল, সেটাও টিভি মিডিয়া কোনোরূপ সেন্সর ছাড়াই প্রচার করেছিল। জেরা চলাকালে প্রশ্ন উঠেছিল, যৌন সম্পর্কের সংজ্ঞা কী? ক্লিনটন ও মনিকার মধ্যে সংঘটিত ঘটনাগুলো যৌন সম্পর্কের পর্যায়ে পড়ে কিনা। বিব্রত ক্লিনটনের মুখোচ্ছবি এতে রক্তিমবর্ণ ধারণ করলেও তিনি চেষ্টা করেছিলেন দৃঢ়তার সঙ্গে অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রেসিডেন্ট। এমন শক্তিধর ব্যক্তিকে কোনো অভিযোগ নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেরা করা যায় আমাদের মতো অসহিষ্ণু সমাজে আমরা তা কিছুতেই ভাবতে পারি না। মার্কিন মিডিয়া সরাসরি এসব সম্প্রচার করেছিল। জেরার সময় ক্লিনটনকে যেসব প্রশ্ন করা হয়েছিল সেগুলো আমাদের কালচারে আমরা কখনোই করি না কিংবা করা সঙ্গত মনে করি না। তাহলে মার্কিন মিডিয়া কী উদ্দেশ্য হাসিল করতে চেয়েছিল! অদ্ভুত দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে ব্যক্তিপর্যায়ে যাকে আমরা নৈতিকতা মনে করি তার ঘাটতি কোনোক্রমেই কম নয়। বিশেষ করে নারী ও পুরুষের যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে তো বটেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই সমাজ তার সর্বোচ্চ ব্যক্তির মধ্যে নৈতিকতার চরম পরাকাষ্ঠা দেখতে চায়। অদ্ভুত বৈপরীত্য বটে। এই বৈপরীত্য যতই প্রকট হোক না কেন সেদিন মার্কিন মিডিয়া বিল ক্লিনটনকে জেরা করার ব্যাপারটা সরাসরি সম্প্রচার করে একটি নৈতিকতাই প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল, তা হলো তাদের প্রেসিডেন্ট হবে সব ধরনের মানবিক বিচ্যুতির ঊর্ধ্বে। সুতরাং মিডিয়া কীভাবে একটি গণতান্ত্রিক সমাজে আচরণ করবে, সেটি একটি বিশাল নীতিশাস্ত্রবিষয়ক প্রশ্ন।
আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ মিডিয়ার কী করা উচিত বা কী করা উচিত নয়, সেটি নির্ধারণের দায়িত্ব মিডিয়ার কাছেই ছেড়ে দেয়া উত্তম। যারা মিডিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তারা জানেন ও বোঝেন এদেশের কালচার বা রুচি কী রকম। যতদিন তারা এই মূল্যবোধের আশ্রয়ে থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করবেন তা ততই মঙ্গলজনক। সমাজের অসঙ্গতি, নেতৃত্বের দুর্বলতা, সবলতা, আইনের লঙ্ঘন, সুবিচার ও ন্যায়নীতির প্রতি বিতৃষ্ণা দেশের অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন দুর্নীতি ও দূরাচার প্রভৃতি বিষয়ে মিডিয়ার পায়ে যদি বেড়ি পরানো হয়, তাহলে যে গণতন্ত্রের স্বপ্ন আমরা দেখি সেই গণতন্ত্র হয়ে পড়বে দুঃস্বপ্ন মাত্র। সরকার তার প্রণীত টিভি টকশো নীতিমালায় যে নির্দেশনা দিতে যাচ্ছে তাতে বলা হয়েছে, ‘টকশোগুলো অপরিকল্পিত ও নিয়ন্ত্রণহীনভাবে প্রচারিত হওয়ায় দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করেছে। এজন্য চ্যানেলগুলোকে নির্দেশনা দানকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে এবং টেলিভিশন কর্তৃপক্ষকে গাইড লাইন মেনেই টকশো চালানোর অঙ্গীকার করতে হবে। সরকারের এ যেন এক অদ্ভুত খেয়াল। সরকারের এই খেয়াল দেখে মনে হচ্ছে, সরকার যেন এরশাদীয় ‘স্বৈরশাসনের পথ ধরেই চলতে বদ্ধপরিকর।’ অবশ্য এতে আশ্চর্য হওয়ার কোনো কারণ নেই। ক্ষমতাসীন সরকার এরশাদকে মহাজোটের অংশীদার করে তাকে অনেক আগেই রাজনৈতিক বৈধতা দিয়েছে। এরশাদকে বৈধতাদানের গল্পের এখানেই শেষ নয়। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যারা এই নির্বাচনে অংশ নেবে তারা হবে জাতীয় বেঈমান। কিন্তু শর্বরী পোহাতে না পোহাতেই ঘোষণা এলো তারা এই নির্বাচনে অংশ নেবে। এভাবেই এরশাদের স্বৈরশাসন প্রলম্বিত হয়েছিল। এরশাদ আমলে সংবাদপত্রকে নিয়ন্ত্রণ করা হতো প্রেস অ্যাডভাইসের মাধ্যমে। তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলে দেয়া হতো এ খবর ছাপানো যাবে, ও খবর ছাপানো যাবে না। কোন খবর কত গুরুত্বের সঙ্গে ছাপানো হবে সেটাও বলে দেয়া হতো। এখন অবশ্য প্রেস অ্যাডভাইসের আশ্রয় নেয়া হচ্ছে না বটে; তবে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে নির্দেশনাদানকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে বলা হচ্ছে। অর্থাত্ চ্যানেলগুলোকে নিজ গরজেই কর্তৃপক্ষকে প্রতিনিয়ত অবহিত রাখতে হবে। এই বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে কোনো চ্যানেলই সংবাদ ও তথ্য প্রচার, সংবাদ বিশ্লেষণ, সংবাদ পর্যালোচনা কিংবা চলতি প্রসঙ্গে কোনোরূপ সৃজনশীল শিক্ষামূলক ও সচেতনতামূলক পরিবেশনায় উদ্বুদ্ধ হবে না। এর ফলে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিশেষ করে প্রাইভেট চ্যানেলগুলো ম্রিয়মাণ হয়ে পড়বে। আমাদের দেশে এক সময় বাংলাদেশ টেলিভিশনই ছিল একমাত্র টেলিভিশন মাধ্যম। কিন্তু ১৯৯১ সালের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার পর বেগম খালেদা জিয়ার সরকার প্রাইভেট টিভি চ্যানেলের অনুমোদন দেয়ায় টেলিভিশন মাধ্যমে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসে। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো প্রাণবন্ত অনুষ্ঠান প্রচার করতে শুরু করে। এসব অনুষ্ঠানের প্রভাবে দর্শকদের চিন্তার জগতেও অনেক পরিবর্তন আসতে শুরু করে। সে সময় সরকারদলীয় সমর্থকদের অনেককেই অনুযোগ করতে শুনেছি—এসব চ্যানেল কার স্বার্থ হাসিল করছে। সরকারি দলের সমর্থকদের অনেকেরই অভিযোগ ছিল চ্যানেলগুলো আওয়ামী স্বার্থ পূরণ করছে এবং আওয়ামী ধ্যান-ধারণার বিস্তারে দেদার মদত দিয়ে যাচ্ছে। তখন চ্যানেল মালিকদের কেউ কেউ বলতে চেয়েছেন, তারা এই কৌশল নিয়েছেন চ্যানেলের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে। কারণ সাধারণ দর্শকরা সরকারের সমালোচনা শুনতে আগ্রহী। সময় এলে তারা জাতীয়তাবাদী আদর্শের পক্ষেই সরাসরি অবস্থান গ্রহণ করবেন। কিন্তু সেই সময় আর আসেনি। এক কথায় বলা যায় প্রাইভেট চ্যানেলগুলোর পক্ষপাতিত্ব আওয়ামী ধারার প্রতি। এসব চ্যানেলের আরও যুক্তি হলো সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কুশীলবরা প্রায় একশ’ ভাগ আওয়ামীপন্থী। এদের বাদ দিয়ে কোনোরূপ বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান করা যায় না। এ কারণে চ্যানেলগুলোকে আওয়ামীপন্থী বলেই মনে হয়। এরকম যখন প্রাইভেট চ্যানেলের অবস্থা তা সত্ত্বেও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার টিভি টকশো নিয়ে যত্পরোনাস্তি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বুঝি সরকারের মহাসর্বনাশ ডেকে আনছে। অথচ যারা টেলিভিশন টকশো দেখে অভ্যস্ত তারা অবশ্যই সাক্ষ্য দেবেন টকশোর আসরে তিনজন আলোচক থাকলে অন্তত দু’জন থাকে আওয়ামীপন্থী কিংবা আধা আওয়ামীপন্থী। প্রশ্ন করার জন্য যেসব সাংবাদিককে হাজির করা হয় তাদের আওয়ামী পক্ষপাতও কম প্রকট নয়। বিগত সংসদ নির্বাচনের সময় কয়েকটি চ্যানেল আওয়ামী পক্ষপাতের চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছিল। তার পরও বলব, প্রাইভেট চ্যানেল কর্তৃপক্ষকে নিজস্ব নীতিমালায় চলতে দেয়া হোক। যদি তারা সত্যিই পক্ষপাতিত্বে অন্ধ হয়ে থাকে তাহলে দর্শক তার বিচার করবে এবং একদিন না একদিন ওই চ্যানেল থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেবে। মানুষকে অত বোকা ঠাওরানোর কোনো কারণ নেই। টিভির মধ্য দিয়ে কথাগুলো আসছে বলে সেগুলোকে যারা বেদবাক্য মনে করে তারাও একদিন বাস্তবতার ঘাতপ্রতিঘাতে বুঝতে পারবে সত্য কী। হিটলার বিশাল প্রচারযন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধ্বংস এড়াতে পারেনি। আসলে ভালো কাজের বিকল্প মিথ্যা প্রচারণা হতে পারে না। ভালো কাজ আপন গতিতেই সফল প্রচারণার কাজ করে। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট যখন জয়লাভ করেছিল, তখনও মিডিয়ার ওপর মুসলিম লীগের প্রাধান্য ছিল। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। এক ইত্তেফাক অন্য সব সংবাদপত্রের অপ্রতিরোধ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।
টিভি টকশোসংক্রান্ত খসড়া গাইডলাইনে বলা হয়েছে, কোনো ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য, অন্ধ ও পক্ষপাতদুষ্ট এবং বাংলাদেশের আইনসিদ্ধ ও নির্বাচিত সরকারের প্রতি অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রশ্ন হলো, কে নির্ধারণ করবে কোনটি উস্কানিমূলক বক্তব্য, কোনটি উস্কানিমূলক বক্তব্য নয়? কোনটি অন্ধ ও পক্ষপাতদুষ্ট মতামত এবং কোনটি অন্ধ ও পক্ষপাতদুষ্ট মতামত নয়? কী বললে আইনসিদ্ধ ও নির্বাচিত সরকারের প্রতি অসন্তোষ সৃষ্টি হয়? তাহলে কি নির্বাচিত সরকারের কোনো সমালোচনাই করা যাবে না? গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচিত সরকারের সমালোচনা হওয়াটাই স্বাভাবিক। এই সমালোচনা না থাকলে সরকার নিজেই চক্ষু ও কর্ণহীন হয়ে যাবে। ক্ষতিটা হবে সরকারের। কারণ সরকার তার ভুলগুলো শুধরে নিতে পারবে না। আর সরকার যদি শ্রেয়বোধ হারিয়ে ফেলে তাহলে রাখঢাক না করে বলেই ফেলুক তারা বাকশাল করতে চায়। কোনো রকম দ্বিমত সহ্য করার অবকাশ তারা দেবে না। সম্প্রতি একটি ওয়েবসাইটে সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির একজন স্বনামধন্য বাংলাদেশী অধ্যাপক একটি আলোচনা কলামের ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে লিখেছিলেন : বাংলাদেশে সেই কলামটিই শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হয়, যার সূচনা হয় বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা দিয়ে এবং সমাপ্তি হয় জয় বাংলা লিখে। এই সরকার কি সেই ধরনের একটি রেজিমেন্ট বাংলাদেশ দেখতে চায়? তাহলে আমাদের কী বলার আছে?
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন দুর্ভিক্ষ, ক্ষুধা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেছিলেন, যেসব দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকে সেসব দেশে সরকার দুর্ভিক্ষ এড়াতে তত্পর হয়। অন্যদিকে যেসব দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকে না সেসব দেশে সরকার ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে উদাসীন থাকে, ফলে মৃত্যুহার বাড়ে, দুর্ভিক্ষ প্রলম্বিত হয়। কেউ কেউ হয়তো যুক্তি দেখাবেন, খাদ্য সঙ্কটের কথা ফলাও করে প্রচার করলে খাদ্য মজুতকারী ও মুনাফাখোরদের লাভ হয়। এই বক্তব্যে আংশিক সত্যতা থাকলেও দুর্ভিক্ষ ও ক্ষুধা সম্পর্কে সংবাদপত্রের সাহসী প্রতিবেদন সরকারকে তত্পর হতে তাড়িত করে এবং গণদুর্ভোগ এর ফলে প্রশমিত হয়। টেলিভিশন টকশোগুলো নিয়ে সরকার যেভাবে স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে তাতে মনে হয় তারা ভুল পথেই এগুচ্ছে। সরকার যদি সত্যিই নিজ কাজের ভালো-মন্দ সম্পর্কে অবহিত থাকতে চায় তাহলে সরকারকে অবশ্যই গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে উত্সাহিত করতে হবে। দলনপীড়নের পথে কোনো মঙ্গল বয়ে আসবে না।
লেখক : অধ্যাপক, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.