টাকা অবমূল্যায়িত হচ্ছে-সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে

বাংলাদেশের মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা যেন কোনোক্রমেই আসছে না। টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য অব্যাহতভাবে বেড়ে চলেছে। গত বছর, অর্থাৎ ঠিক দুই মাস আগেও যে ডলারের মূল্য ছিল ৭৫-৭৬ টাকা, সেই ডলার দুই মাস না যেতেই এখন ৮৫ টাকায় উঠে গেছে। যেন পাগলা ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার এই মান পড়ে যাওয়ার কারণে স্থানীয় বাজারে যেমন অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, তেমনি আমদানি-রপ্তানিতেও এর প্রভাব পড়বে নিঃসন্দেহে।

সাধারণত রেমিট্যান্স না এলে, বিনিয়োগ না বাড়লে, এমনকি বৈদেশিক ঋণ পাওয়া না গেলে অসম্ভব পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারে ডলারের মূল্য। বাংলাদেশে যে রেমিট্যান্স আসছে না, তা নয়। দেশে রেমিট্যান্সের পরিমাণ অস্থায়ীভাবে কিছু কমেছে এটা সত্যি, কিন্তু রেমিট্যান্স প্রবাহের কমে যাওয়া অনুপাতে ডলারের মূল্য এতটা বাড়ার কথা নয়। দেশে আমদানিব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে ডলারের এই মূল্যবৃদ্ধি বলেই অর্থনীতিবিদরা মনে করেন। একটি পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে, আইএমএফের কাছ থেকে এক বিলিয়ন ডলার ঋণ পেতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক পর্যায়ে রাখার শর্ত রয়েছে। তাই অন্তত তিন মাসের আমদানি দায় মেটানোর মতো পর্যায়ে রিজার্ভ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে ডলার বিক্রি বন্ধ রেখেছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনো ডলার ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। বর্তমানে যে রিজার্ভ রয়েছে, তা আড়াই মাসের আমদানি দায় মেটানোর সমান।
টাকার এই অবমূল্যায়ন অব্যাহত থাকলে দেশে আমদানির পরিমাণও কমে যাবে। অন্যদিকে ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা এলসি খোলা নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন বা পড়বেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারার নামই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা। সুতরাং যে অবস্থা বিরাজ করছে, তার সঙ্গে স্রোতে না ভেসে বাংলাদেশ ব্যাংক তথা দেশের অর্থ মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য ওঠানামার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। প্রায় দুই বছর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলার থাকার পর হঠাৎ করেই গত বছরের শেষদিকে রিজার্ভ এক বিলিয়ন ডলার কমে যায়। আর সে কারণেই গত বছর টাকা বিশেষ অবমূল্যায়িত হয়নি। কিন্তু চলতি বছরে ইতিমধ্যে এক মাসের মধ্যেই ডলারপ্রতি তিন টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে। দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে এই পরিস্থিতিকে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকারকে মোকাবিলা করতে হবে। রেমিট্যান্স-প্রবাহকে আরো বৃদ্ধি করতে হবে, বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং সেই সঙ্গে আমদানি ও রপ্তানির মধ্যে একটি ভারসাম্য গড়ে তুলতে হবে। একটি কথা অপরিহার্য, রেমিট্যান্স ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির সঙ্গে সুশাসনের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তাই সব কিছুর ঊর্ধ্বে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.