কারণ অনুসন্ধান ও প্রতিকারের উদ্যোগ চাই-শিক্ষার্থীদের ঝরে যাওয়া

সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির হার শতভাগের কাছাকাছি পৌঁছেছে—এই তথ্য বাংলাদেশকে গর্বিত করে। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া বাংলাদেশের শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত একটি বড় বাধা হিসেবেই রয়ে গেছে। প্রকৃতপক্ষে, প্রাথমিক ধাপেই যেসব শিক্ষার্থী ঝরে যায়, শিক্ষার কোনো সুফলই তারা পায় না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা তাদের যৎসামান্য শিক্ষাটুকুও ভুলে যায় এবং শেষ পর্যন্ত শিক্ষাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়।


ফলে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর আকারও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।এই হতাশাব্যঞ্জক প্রেক্ষাপটে বাড়তি হতাশা যুক্ত হয়, যখন মাধ্যমিক পর্যায়ে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা হয় নজরে পড়ার মতো। ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষে সারা দেশের এসএসসি বা সমমানের ১০টি বোর্ডের অধীনে নবম শ্রেণীতে নিবন্ধিত হয়েছিল ১৫ লাখ ৮৯ হাজার ৭৪৩ জন শিক্ষার্থী। দুই বছর পড়াশোনার পর আগামীকাল বুধবার থেকে যে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা শুরু হচ্ছে, তাতে তাদের সবারই অংশগ্রহণ করার কথা। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, পরীক্ষা দেবে ১১ লাখ ৪৩ হাজার ৯৫১ জন। মানে, এ দুই বছরে ঝরে গেছে প্রায় সাড়ে চার লাখ শিক্ষার্থী। যখন আমরা ২০১৫ সালের মধ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আকাঙ্ক্ষা করি, যখন আমরা স্বপ্ন দেখি যে বাংলাদেশের জনবলের একটি বড় অংশ হবে ন্যূনতম উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, তখন মাধ্যমিক স্তরেই ২৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়া একটি বড় দুশ্চিন্তার বিষয়।
শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি পেয়েছে, বিষয়টি এমন নয়। যে মাত্রায় ঝরে পড়ার হার কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, সে মাত্রায় তা কমছে না। ঝরে পড়ার মূল কারণ দারিদ্র্য—এ সত্য যথার্থই চিহ্নিত করা হয়েছে। এ জন্য সরকার বিনা মূল্যে বই, উপবৃত্তি, দুপুরের খাবার দেওয়াসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এসবের সুফল প্রত্যাশিত মাত্রায় দৃশ্যমান হচ্ছে না কেন, সেটাই আর গভীরভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। জনগোষ্ঠীর মানসিকতা, পাঠদান ও পরীক্ষা পদ্ধতি, বিদ্যালয়ের পরিবেশ ও অবকাঠামো, বিশেষত মেয়ে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার পথে নিরাপত্তা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আরও সৃজনশীল ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, যাতে করে ঝরে পড়ার প্রবণতা আরও হ্রাস পায়।

No comments

Powered by Blogger.