দামেস্কের কিছু এলাকায় সিরীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের পূর্বাঞ্চলের কিছু এলাকায় বিদ্রোহীদের হটিয়ে পুনরায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে সরকারি বাহিনী। যদিও বিদ্রোহীদের দাবি, কৌশলগত কারণে তারা সেখান থেকে সরে এলেও সার্বিকভাবে তাদের উপস্থিতি এখনো অব্যাহত রয়েছে। গত দুই দিনের রক্তক্ষয়ী অভিযানের পর এসব স্থানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করল সেনারা।


মানবাধিকারকর্মীরা জানান, দেশটি থেকে পর্যবেক্ষকদের সরিয়ে নেওয়ার আরব লিগের ঘোষণার এক দিন পর রোববার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সেনাদের সংঘর্ষে ৬০ জনের মতো নিহত হয়েছেন।
মানবাধিকারকর্মীরা জানান, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত সেনারা ব্যাপক অভিযান চালিয়ে রোববার রাতে দামেস্কের কেন্দ্রস্থল থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে শহরতলির কয়েকটি এলাকা পুনরায় নিয়ন্ত্রণে নিতে সমর্থ হয়েছে। ইতিপূর্বে সরকারি বাহিনীর পক্ষত্যাগী সেনাদের দল ‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মি’র সদস্যরা গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীদের সহায়তায় ওই এলাকাগুলো দখল করে নেয়।
মানবাধিকারকর্মীরা আরও জানান, পক্ষত্যাগী সেনাদের দখলে থাকা দামেস্কের শহরতলির কাফার বাতনা, জিসরিন, আরবিল ও সাকবার পুনর্নিয়ন্ত্রণ নিতে সরকারি বাহিনী শনিবার সর্বশেষ ওই অভিযান শুরু করে। রোববার প্রায় অর্ধশত ট্যাঙ্ক ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দুই হাজারের বেশি সেনা এ অভিযানে শরিক হয়। কাফার বাতনা এলাকা থেকে এক মানবাধিকারকর্মী বলেন, ‘এটি একটি নগরযুদ্ধ। সড়কগুলোতে পড়ে আছে লাশের সারি।’
ব্রিটেন-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের প্রধান রামি আবদুল রহমান বলেন, ‘রাজধানীর প্রান্তে দুই পক্ষে প্রচণ্ড লড়াই চলছে। সেনারা কিছু এলাকার ভেতরে প্রবেশে সক্ষম হলেও অন্য অংশে এখনো তীব্র বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।’ এ লড়াইকে তিনি সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর রাজধানীর কাছে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা হিসেবেও উল্লেখ করেন।
রাজধানীর উপকণ্ঠে সাকবা এলাকায় গতকাল সোমবারও গোলাগুলি ও বোমাবর্ষণ অব্যাহত ছিল বলে জানা গেছে। বিদ্রোহী ফ্রি সিরিয়ান আর্মি দখল করা এলাকা থেকে রোববার পিছু হটলেও তারা এখনো সেখানে তাদের অবস্থান বজায় রাখার দাবি করছে। ১০ মাস ধরে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে রোববারই রাজধানীতে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সহিংস ঘটনা ঘটে। সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের তুমুল সংঘর্ষে কেবল দামেস্কেই এ দিন নিহত হন কমপক্ষে ২৬ জন। আর দেশব্যাপী এ সংখ্যা প্রায় ৬০ জন। গত এক সপ্তাহের সহিংস ঘটনায় প্রায় অর্ধশত সেনাও নিহত হয়েছেন।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও মানবাধিকারকর্মীদের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র রাজধানীর পূর্বাঞ্চলীয় উপকণ্ঠের ঘাওতা এলাকায় রোববার প্রেসিডেন্ট আসাদের অনুগত বাহিনী ঝোড়ো অভিযান চালায়। এক মানবাধিকারকর্মী জানান, শহরতলির বিভিন্ন স্থান থেকে ফ্রি সিরিয়ান আর্মি সরে গেছে। পাশাপাশি আসাদ বাহিনী বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে।
তবে পার্শ্ববর্তী লেবানন থেকে বিবিসির জিম মুর বলেন, এ ধরনের বড় অভিযান সিরিয়ার হোমস, হামা, ইদলিব, দেরাসহ অপরাপর অংশে বিদ্রোহ দমাতে ব্যর্থ হয়েছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে এই স্থানগুলোয় পরিচালিত অভিযানে অসংখ্য বেসামরিক লোক নিহত হন। রাজধানীর কেন্দ্রস্থল থেকে বাসিন্দারা জানান, দামেস্কের প্রধান প্রধান স্থাপনায় সেনা ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
অপ্রত্যাশিতভাবে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে শনিবার দেশটি থেকে পর্যবেক্ষক মিশন প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আরব লিগ। সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি এ জোটের নেতারা আবার বৈঠকে বসবেন। আরব শান্তি পরিকল্পনার ওপর সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে জোটের প্রধান নাবিল এলআরাবির আজ মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদে এক সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেওয়ার কথা। সিরিয়ার সহিংসতার ওপর নিরাপত্তা পরিষদে এক খসড়া নিন্দা প্রস্তাব পাশে বেইজিং ও মস্কোর বাধা অপসারণে সম্মত হবেন বলে ইতিমধ্যে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.