আগে মানুষ হওয়ার প্রশিক্ষণটি শেষ করুন-চিকিৎসকের অভব্য আচরণ

সমাজ ও রাষ্ট্র একজন চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসাসেবা ও মানবিক আচরণ আশা করে। আশা করে সহমর্মিতা ও সৌজন্যবোধ। কিন্তু গত রবি ও মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন প্রশিক্ষণার্থী-চিকিৎসক রোগী, রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসা দুই হোটেল কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন, তা অমানবিক ও অভদ্রজনোচিত।


গত রোববার মহাখালীর একটি হোটেলে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এক ব্যক্তি। হোটেলের দুই কর্মকর্তা গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডে কর্তব্যরত প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসক পীযূষ কান্তি মিত্র তাঁদের কাছে উৎকোচ দাবি করেন। অন্যথায় তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে তিনি হুমকি দেন। হোটেল কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত প্রথম আলোর প্রতিবেদকের সহায়তা চাইলে তিনি নিজেকে হোটেল কর্মকর্তাদের ভাই বলে পরিচয় দিয়ে ঘটনা জানতে চান। তাঁকে জানানো হয়, ‘এটি হমিসাইডাল ঘটনা।’
মঙ্গলবার প্রথম আলোর প্রতিবেদক সেখানে দায়িত্ব পালনরত অন্য সাংবাদিকদের নিয়ে ফের ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডে যান এবং নিজের পরিচয় দেন। ঘুষ চাওয়ার বিষয়টি ফাঁস হওয়ায় ওই প্রশিক্ষণার্থী-চিকিৎসক তাঁর ওপর চড়াও হন এবং অশালীন ভাষায় গালাগাল করেন। বিষয়টি হাসপাতালের পরিচালককে জানালে তিনি প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসককে ডেকে পাঠাবেন বলে জানান। এরূপ গুরুতর ঘটনায় তাঁকে ডেকে পাঠানো কি যথেষ্ট?
অভিযুক্ত পীযূষ কান্তি মিত্র ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউরো সার্জারি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। যে ব্যক্তি পূর্ণ চিকিৎসক হওয়ার আগেই প্রকাশ্যে ঘুষ নেওয়ার জন্য মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করেন এবং সেই ঘটনা ফাঁস হওয়ায় সাংবাদিকদের প্রতি তেড়ে আসেন, ভবিষ্যতে তাঁর কাছে রোগীরা কী ধরনের সেবা ও চিকিৎসা পাবেন, তা সহজেই ধারণা করা যায়। এই ভাবী চিকিৎসকের কাছে রোগী কেন, সুস্থ মানুষও নিরাপদ নয়।
আমরা পীযূষ কান্তি মিত্রের অভব্য আচরণের নিন্দা জানাই। রোগীর প্রতিবেদন দেওয়ার বিনিময়ে ঘুষ দাবি করে তিনি ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে এর বিচার হওয়া উচিত। শেষ কথা, চিকিৎসা শাস্ত্রের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার আগে তিনি যেন মানুষ হওয়ার প্রশিক্ষণটিও শেষ করেন—তাতে রোগী ও সেবাপ্রার্থীরা অযথা হয়রানি থেকে রেহাই পাবেন।

No comments

Powered by Blogger.