কুয়াকাটায় সংরক্ষিত বনের গাছ চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না

পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার সমুদ্রসৈকতের পূর্ব দিকে গঙ্গামতি সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে চোরেরা। বন বিভাগের লোকবল কম থাকায় চুরি ঠেকানো যাচ্ছে না। বন বিভাগের মহিপুর রেঞ্জ কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৬৫ সালে গঙ্গামতি এলাকায় ৫০০ একর জমিতে বন বিভাগ বনায়ন শুরু করে।


বর্তমানে এখানে ছোট-বড় মিলিয়ে তিন লাখেরও বেশি গাছ আছে। এসব গাছের মধ্যে রয়েছে কড়ই, তেঁতুল, রামতেঁতুল, গেওয়া, কেওড়া ও আকাশমণি। এ ছাড়া বন বিভাগ ওই এলাকায় আরও দেড় শ একর জমি বনায়নের উদ্যোগ নিয়েছে।
এদিকে সিডর, আইলা ও সমুদ্রের প্রবল জোয়ারের চাপে ওই বনের বহু গাছ উপড়ে পড়েছে। অনেক সময় বড় মূল্যবান গাছের গোড়ায় আগুন জ্বালিয়ে মেরে ফেলারও অভিযোগ আছে। গাছচোরেরা বনের উপড়ে পড়া এবং মরা গাছ কড়াত দিয়ে কেটে খণ্ড খণ্ড করে তা নিয়ে যায়।
সূত্র আরও জানায়, সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় দেড় হাজার গাছ বন বিভাগ বিক্রি করেছে। তবে এখনো এই বনাঞ্চলে উপড়ে পড়া গাছ রয়েছে পাঁচ শতাধিক। এ ছাড়া এক হাজারেরও বেশি মরা গাছ আছে।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, গঙ্গামতির পূর্ব দিকে সাত-আটজন লোক একটি বড় মরা গাছের গোড়া করাত দিয়ে কাটছে। এর আগে গাছটির ওপরের অংশ খণ্ড খণ্ড করে কেটে নিয়েছে তারা। কাছে যেতেই তারা গাছ কাটার সরঞ্জাম নিয়ে দৌড়ে বনের ভেতরে চলে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এভাবে প্রায় প্রতিদিনই চোরেরা দিনে-রাতে যখনই সুযোগ পায় গাছ কেটে গঙ্গামতির পূর্ব দিকে বয়ে যাওয়া খাল দিয়ে নৌকায় করে নিয়ে যায়। বন ঘুরে দেখা যায়, সিডর ও আইলার সময় জলোচ্ছ্বাসে উপড়ে পড়া বিভিন্ন প্রজাতির বেশ কিছু গাছের গোড়া কাটা।
কুয়াকাটা বন বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা খন্দকার ইয়াকুব আলী বলেন, ‘প্রথম দিকে কিছু গাছ সংগ্রহ করা হয়েছিল। সেগুলো বিক্রি করে রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। তবে উপড়ে পড়া ও মরা যেসব গাছ এখন আছে, তা সংগ্রহ করা যাবে না। কারণ তাতে বনের ক্ষতি হবে।
তিনি জানান, ৫০০ একর বনাঞ্চল দেখাশোনার জন্য আছে চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এর মধ্যে দুজন পাহারাদার, একজন ট্রলারচালক ও একজন বিট কর্মকর্তা। তাদের ওই বনের মধ্যে থাকার কোনো সুযোগ নেই। রাতে তারা অন্যত্র লোকালয়ে থাকে। এসব কারণে এত বিশাল এলাকা নজরদারি করে গাছ চুরি ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। গত বছর এলাকার ১৪ জন গাছচোর শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে তা বিচারাধীন। তিনি বলেন, চলতি বছর সেখানে আরও দেড় শ একর ভূমি বনায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বনের গাছ চুরি ঠেকাতে লোকবল বাড়ানো প্রয়োজন।
পটুয়াখালীর উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোবিন্দ রায় বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে চুরি ঠেকাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া চোরদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.