সংসদ সদস্যদের আমলনামা-তবু যদি সুপরিবর্তন হয়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দলীয় সংসদ সদস্যদের কৃতকর্মের খতিয়ান সংগ্রহ করেছেন। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত সেসব খতিয়ান পর্যালোচনাও করছেন গুরুত্বসহ। সংবাদে প্রকাশিত ভাষ্যের ইঙ্গিত প্রদান করে খুব একটা সন্তোষ প্রকাশ করতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী। তাঁর দলীয় সংসদ সদস্যদের আমলনামা পাঠ করে তিনি ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন সময়মতো। অভিযুক্ত এমপিদের মধ্যে যাঁরা দোষী বলে প্রমাণিত হবেন, তাঁদের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলেও আভাস দিয়েছেন তিনি।

তাঁর এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গেলে যে লোম বাছতে গিয়ে কম্বল উজাড় হয়ে যাবে। কারণ দলীয় এমপিদের ব্যাপারে তিনি নিজেই যেসব অভিযোগের কথা বলেছেন, সেগুলো মোটেও সুখকর নয়। জনপ্রিয়তা হ্রাস হয়েছে এমন এমপিদের ব্যাপারেও তাঁকে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই ব্যবস্থা হবে আগামী নির্বাচনে তাঁদের মনোনয়ন না দেওয়া। এটা আপাতদৃষ্টিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে গণ্য হলেও আসলে বর্তমানেও দল ও দেশকে বড় আকারের ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে সেসব এমপির কারণে। কোনো কোনো এমপি জনগণের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। কিন্তু কোনো কোনো এমপি আবার নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন। দলীয় কর্মকাণ্ড ছাড়া দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু জনগণের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করলে তা হবে দেশের জন্য ক্ষতিকর এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে জনগণের প্রাপ্য আচরণের পরিপন্থী। এমন এমপিও আছেন, যাঁদের আচরণ অগণতান্ত্রিক তো বটেই, অশোভনও। যেমন- দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এক এমপি শারীরিকভাবেও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিগৃহীত করেছেন বলে অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের এক এমপি নদী দখল থেকে শুরু করে হরেক দুর্নীতির পাশাপাশি মানুষের সঙ্গে অসদাচরণ করার দায়ে দীর্ঘদিন পর্যন্ত অভিযুক্ত হয়ে আসছেন। সারা দেশে এমন আরো এমপি রয়েছেন বলেই সবাই জানে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাঁদের শাস্তি হিসেবে পরবর্তী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া না হলে সেটাই ক্ষতিপূরণ হবে বলে মনে করা যায় কি? তাই প্রধানমন্ত্রী যেভাবে তাঁদের আমলনামা সংগ্রহ করেছেন, সেই আমলনামা নিয়ে তিনি নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না বলেই আমরা আশা করি। যেহেতু একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে এসব আমলনামা সংগ্রহ করা হয়েছে, তাই মনে করা যায়- এগুলোর ভিত্তি শক্ত হবে। অর্থাৎ এসব আমলনামার বিশ্বাসযোগ্যতার পরিমাণ বেশি হবে।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শিগগিরই এমপিদের সঙ্গে গ্রুপভিত্তিক বৈঠক করবেন এবং সেখানে প্রত্যেকের আমলনামা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে। আমরা আশা করতে পারি, প্রধানমন্ত্রী এমনভাবে কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন, যাতে এমপিদের কেউই আর দুর্নীতিতে অংশ নেবেন না। প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা হ্রাস পায় এমন কোনো কাজ করা থেকে যদি এমপিরা বিরত থাকেন, তাহলে দেশ ও তাঁদের দল উভয়েরই মঙ্গল হবে।

No comments

Powered by Blogger.