অবহেলা আর উদাসীনতার অবসান হোক-জাহাজভাঙা শিল্পে শ্রমিকের মৃত্যু

জাহাজভাঙা ইয়ার্ডে জাহাজ কাটতে গিয়ে বিস্ফোরণে আবারও চার শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হলো। এ ধরনের মৃত্যু অতীতেও বারবার হয়েছে, এখনো হচ্ছে। আদালত এ শিল্পের কর্মপরিবেশ, শ্রমিকের নিরাপত্তার বিষয়ে বারবার নির্দেশনা ও রায় দিয়েছেন। তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল সরকারের।


চার শ্রমিকের করুণ মৃত্যু সেই দায়িত্ব পালনে সব পক্ষের গাফিলতিই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। কিন্তু অবিলম্বে এ ধরনের ঘটনা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।
জাহাজভাঙা এখন মোটামুটি শক্ত ভিত্তিসম্পন্ন একটি শিল্প। দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্পাতের চাহিদার ৯০ শতাংশ এ শিল্প থেকেই মিটে থাকে। বলা বাহুল্য, এ ক্ষেত্রে শিল্পমালিকদের লাভের সুযোগও অনেক বেশি। কিন্তু ক্ষতি-মৃত্যু-দুঃখ সব শ্রমিক একাই বহন করবেন, তা হয় না। শিল্পটির সূচনা থেকে এ পর্যন্ত শতাধিক শ্রমিক বিস্ফোরণে ও কাটা পড়ে নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও শত শত। খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে এর পরও শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো কাজের পরিবেশ এ শিল্পে তৈরি হয়নি। গত মঙ্গলবারের ঘটনায়ও দেখা যায়, গ্যাস দিয়ে জাহাজের লোহা কাটতে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণ এতই ভয়াবহ ছিল যে কয়েক কিলোমিটার দূরেও তার অভিঘাত টের পাওয়া যায়। প্রায় প্রতিটি বিস্ফোরণেই এ রকম মৃত্যুর ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। অথচ প্রতিকারের আশা দুরাশা মাত্র।
বিশ্বের অনেক দেশেই জাহাজভাঙা শিল্প নিষিদ্ধ। ইউরোপ-আমেরিকাসহ সে সব দেশের বাতিল ও বিষাক্ত জাহাজের কবল থেকে রেহাই পাওয়ার লাভজনক পথ হলো, বাংলাদেশসহ দরিদ্র দেশগুলোতে তা বিক্রি করা। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সরকারের বেঁধে দেওয়া নিয়ম হলো, বাতিল জাহাজ বিদেশি বিক্রেতাদের দিয়েই বর্জ্যমুক্ত করে, দূষিত তেল বা গ্যাস পরিষ্কার করার পরই তা এখানে আনা যাবে। শ্রমিকের জীবন ও পরিবেশ বাঁচাতে এটা বাধ্যতামূলক। কিন্তু কেউ তা শুনছেন না এবং সরকারও আইন মানতে তাদের বাধ্য করছে না।
এ শিল্পের মালিকদের মুনাফার খেসারত এভাবে দেশের পরিবেশ ও মানুষ দিতে পারে না। আবার শিল্পটি চালু রাখার স্বার্থেই শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এত দিন মালিকেরা বিধিবিধান মানেননি, এখন সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে শর্ত পালনে বাধ্য করা। উচ্চ আদালতের রায়ের পর উদাসীন থাকার সুযোগ নেই।

No comments

Powered by Blogger.