সীমান্তে গুলি এখনই বন্ধ করা উচিত-ভারতের বিলম্বিত দুঃখ প্রকাশ

বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশ যেমন বিলম্বিত প্রতিবাদ জানিয়েছে, তেমনই ভারত সরকারও এ নির্মম ঘটনায় ত্বরিত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ৭ জানুয়ারি এ হত্যার ঘটনার ১২ দিন পর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য ভারতের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়।


ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব জি কে পিল্লাই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘ওই ঘটনার জন্য গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। সীমান্তে হত্যা বন্ধের ব্যাপারে আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ তবে তিনি এটাও বলেছেন, সীমান্তে হত্যা বন্ধে বাংলাদেশের জনগণ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী ভারতকে সহযোগিতা করবে।
দুই দেশের স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে বৈঠক শেষে গতকাল ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব জানিয়েছেন, ফেলানী হত্যাকাণ্ডে জড়িত বিএসএফ সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশিদের হত্যা পুরোপুরি বন্ধের ব্যাপারে ভারতের আশ্বাসের কথাও তিনি জানিয়েছেন। আমরা চাই, এসব উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়িত হোক।
মাত্র ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানীকে হত্যার ঘটনায় শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারতেও বিভিন্ন মহল সমালোচনায় সোচ্চার হয়েছে। এ কিশোরী কোনো চোরাচালানি ছিল না, কোনো অপরাধীও নয়। তাকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা অনায়াসে আটক করতে পারতেন। যদি সম্ভব না হতো, ওয়্যারলেসে সীমান্তের এপারে বাংলাদেশি সীমান্তরক্ষীদের সহায়তা চাইতে পারতেন। কোনো অবস্থাতেই কোনো নিরীহ কিশোরীকে গুলি করা যায় না। এটা সীমান্ত রক্ষায় মাঠপর্যায়ের নিয়মনীতির (গ্রাউন্ড রুল) লঙ্ঘন। সুতরাং, এ ঘটনায় ভারতের তরফ থেকে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াই ছিল প্রত্যাশিত। কিন্তু এ ব্যাপারে ভারত কিছু জানায়নি।
বছর খানেক আগে ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বলা হয়েছিল, সীমান্তে আর গুলির ঘটনা ঘটবে না। কিন্তু ওই দিনই বিএসএফ গুলি ছুড়েছে। এরপর থেমে থেমে গুলির ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পরিসংখ্যানসূত্রে বিবিসি জানিয়েছে, কেবল গত বছর ৭৪ জন বেসামরিক নাগরিক বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছে। সভ্য জগতে এ রকম ঘটনা অচিন্তনীয়।
ফেলানীরা কেন ভারতে যায়, সেটাও চিন্তা করে দেখতে হবে। এটা ঠিক, ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। পেটের দায়ে অনেকে ভারতে কাজ করতে যায়। তাদের ভিসা থাকে না। কিন্তু এটাও ঠিক, ভারতে যখন কোনো নির্মাণপ্রকল্প গ্রহণ করা হয়, তখনই বাংলাদেশ থেকে সস্তা শ্রম আমদানির তাগিদ দেখা যায়। এই চাহিদা না থাকলে হয়তো ফেলানীদের কাজের জন্য বাবার সঙ্গে ভারতে যেতে হতো না। ভারতের যেসব নির্মাণপ্রতিষ্ঠান সস্তা শ্রমের জন্য বাংলাদেশি শ্রমদাতাদের প্রলুব্ধ করে নিয়ে যায়, তাদের বিরুদ্ধেও ভারত সরকারের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে বাংলাদেশ সম্প্রতি সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশি ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের কঠোর অবস্থান, আঞ্চলিক যোগাযোগ (কানেকটিভিটি) বৃদ্ধি ও ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের অনুমতিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশের এই উদ্যোগ ভারতের কাছেও উপযুক্ত মর্যাদায় সমাদৃত হতে হবে। সীমান্তে গুলি এখনই বন্ধ করা উচিত। শুধু আলাপ-আলোচনা ও দুই দেশের সীমান্তরক্ষী কর্তৃপক্ষের মধ্যে সক্রিয় যোগাযোগ এ ধরনের সমস্যার সমাধান দিতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.