ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ-আবারও দুই পক্ষের কর্মসূচি ‘জনস্বার্থে’! by একরামুল হক

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার ঘটনায় চট্টগ্রামের রাজনীতির মাঠ আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বিষয়টিকে ঘিরে বিরোধী দল বিএনপি এবং সরকারি দল আওয়ামী লীগ ‘জনগণের স্বার্থে’ মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। গত সপ্তাহে টানা তিন দিনের হরতালের সময় দুই দলের নেতা-কর্মীরা মাঠে অবস্থান নিয়ে হরতালের পক্ষে-বিপক্ষে কর্মসূচি পালন করেছেন।


এদিকে এ ধরনের টানা কর্মসূচির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ। তাঁরা হরতালের বিকল্প কর্মসূচি দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহে ঘোষিত বিএনপির কর্মসূচিতে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা মাঠে থাকবেন। দলীয় কর্মসূচি কঠোরভাবে পালনের কথা ঘোষণা করেছেন নেতারা। পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগও মাঠে থাকবে বলে জানা গেছে। উভয় পক্ষই দাবি করছে, জনস্বার্থেই তারা কর্মসূচি দিতে বাধ্য হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, ইতিমধ্যে টানা হরতালের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ছে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি স্বল্প আয়ের মানুষও কষ্টের মধ্যে পড়ে। বিশেষ করে, দিনে এনে দিনে খাওয়া মানুষকে সীমাহীন কষ্টে পড়তে হয়েছে।
এ অবস্থায় আবারও দলীয় কঠোর কর্মসূচি প্রসঙ্গে নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই সরকার যত দিন ক্ষমতায় থাকবে, তত দিন জানমালের নিরাপত্তা থাকবে না। তাই জনগণের স্বার্থেই আমাদের হরতালের মতো কঠিন কর্মসূচি পালন করতে হচ্ছে।’
হরতালের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতাসহ সাধারণ মানুষের ভোগান্তি তো বাড়ছে—এর জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘হরতাল মানুষের ভোগান্তি বাড়ায়, তা অস্বীকার করি না। তবে দেশ এক কঠিন সময় পার করছে। এই ক্রান্তিলগ্নে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কিছু কঠিন কর্মসূচি দিতে হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের কষ্ট হলেও এই কষ্টের ফসল তো জনগণ ভোগ করবে।’
কর্মসূচিতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ততা কতটুকু আছে জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ‘আমরা রাজপথে আছি। মিছিল-সমাবেশ করার সময় জনগণ রাস্তার পাশ থেকে কিংবা গাড়ির জানালা দিয়ে হাত নেড়ে আমাদের অভিবাদন জানায়। এটা আসলে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ততা।’
অন্যদিকে হরতালের বিরোধিতা করে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বিরোধী দল দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণকে জিম্মি করতে চাইছে। ওরা ঘন ঘন হরতাল ডেকে দেশের ধ্বংস ডেকে আনছে। জনগণকে তারা জিম্মি করতে চাইছে। হরতালের কারণে ব্যবসায়ীসহ সাধারণ জনগণকে ক্ষতির বোঝা বহন করতে হচ্ছে। তাই জনগণের স্বার্থরক্ষার জন্যই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা হরতাল-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কর্মসূচি পালন করব।’
মহিউদ্দিন চৌধুরী আরও বলেন, ‘ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর তাঁকে সরকার খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। বিএনপির শাসনামলে আমাদের জনপ্রিয় নেতা অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া ও সাংসদ আহসান উল্লাহ মাস্টারকে হত্যা করা হয়েছিল। একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা চালিয়ে সভানেত্রীকে হত্যার চেষ্টা ও আইভি রহমানসহ ২৪ জনকে খুন করা হয়।’ মহিউদ্দিন চৌধুরী ওই সময়ের কঠিন দিনগুলোর কথা বিএনপির নেতাদের স্মরণ করিয়ে দেন।
এদিকে ব্যবসায়ী নেতারা জানান, গত সপ্তাহের টানা তিন দিনের হরতাল কর্মসূচির কারণে পণ্য পরিবহন ব্যাহত হওয়ায় নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। আবার একই ধরনের কর্মসূচি এলে ব্যবসার আরও ক্ষতি হবে বলে মনে করেন তাঁরা। তাই তাঁরা হরতালের বিকল্প কর্মসূচি দেওয়ার তাগিদ দেন।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা ভালো নয়। বিদ্যুৎ ও গ্যাস-সংকটের কারণে বিনিয়োগ কমেছে। এর মধ্যে আবার হরতাল দিলে ব্যবসায়ীরা যাবে কোথায়? এ ছাড়া পরোক্ষভাবে এ ক্ষতির বোঝা তো জনগণের কাঁধেই চাপে। তাই হরতালের বিকল্প কিছু চিন্তা করতে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আবেদন করছি।’ ভুক্তভোগীরা জানান, গত সপ্তাহের হরতালের প্রভাব পড়েছিল বাজারে। সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে পাঁচ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে যায় ওই সময়। ভোজ্যতেল, মুরগি, মাংস, ডিম ও মাছের দামও বেড়ে যায় কম-বেশি। এতে খেটে খাওয়া মানুষসহ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পরিবারগুলো বিপাকে পড়ে। লালখানবাজার এলাকার বাসিন্দা আবদুল করিম বলেন, ‘এ ধরনের কর্মসূচি বারবার দিলে, বিশেষ করে আমাদের মতো সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টের সীমা থাকবে না।’

No comments

Powered by Blogger.