দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ দ্বিতীয়

অনেক মন্দের ভেতরেও যখন দেশের একটা-দুটা সুখবর পাওয়া যায়, তখন একজন বাংলাদেশি হিসেবে সবারই প্রাণটা ভরে যায়। তেমনি একটি খবর হলো, আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা মুডি'স-এর রেটিংয়ে বাংলাদেশ তার আগের অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এবারও বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে। এক নম্বরে আছে ভারত।


শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের চেয়ে এক পয়েন্ট এবং পাকিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে তিন পয়েন্ট কম পেয়ে এই রেটিংয়ে বাংলাদেশের নিচে অবস্থান করছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগসহ অনেক ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ বেশি সুবিধা পাবে।
বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে চাপ থাকায় এবার রেটিংয়ের ব্যাপারে অনেকেই আশঙ্কা করছিলেন, বাংলাদেশের অবস্থান হয়তো নিচে চলে যেতে পারে। কিন্তু তা হয়নি। তার একটি বড় কারণ, এর আগের রেটিংয়ের সময় বাংলাদেশের বিপক্ষে যে তিনটি সমালোচনা ছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল রপ্তানি ক্ষেত্রে পোশাক শিল্পের ওপর অত্যধিক নির্ভরতা। গত এক বছরে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। পোশাকের বাইরে বেশ কিছু পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের অগ্রগতি সন্তোষজনক। কেবল জাহাজ নির্মাণ শিল্পেই বাংলাদেশ এ বছর ৫০০ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আদেশ পেয়েছে। অন্য সব সমালোচনার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। যেমন_কর আদায়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বৃহৎ করদাতা ইউনিটকে পুনর্গঠন করা হয়েছে। আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর আইন আধুনিক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অবকাঠামো নির্মাণ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, মুডি'স রিপোর্টে তাকেও ইতিবাচকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্প্রতি নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অপসারণের ঘটনা নিয়ে কিছুটা তিক্ততার সৃষ্টি হয়েছিল। অনেকেই তাতে যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমা বিশ্ব এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ঋণদানকারী সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতির আশঙ্কা করছিলেন। গত সোমবার সিঙ্গাপুরে প্রকাশিত 'ক্রেডিট অ্যানালাইস : বাংলাদেশ' শীর্ষক প্রতিবেদনে এগুলোকে অপপ্রচার এবং সম্পূর্ণ অমূলক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মুডি'স ইনভেস্টরস সার্ভিস বলেছে, ড. ইউনূসের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা একটি আইনসম্মত পদক্ষেপ। কাজেই এ ধরনের পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাবই পড়বে না।
অনেক রক্ত, অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশ সুশাসন ও দুর্নীতিমুক্তভাবে বিশ্ব পরিসরে নিজের ভাবমূর্তি ক্রমান্বয়ে এগিয়ে নেবে_এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এই লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের কাছ থেকে আরো বেশি আন্তরিকতা আমাদের কাম্য।

No comments

Powered by Blogger.