র‌্যাবের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন

র‌্যাবের এখতিয়ার নিয়ে আবার প্রশ্ন। লিমনকে নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়া এলিট ফোর্স র‌্যাব নতুন আরেক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ল। এবার র‌্যাবের শিকার নোয়াখালীর মুজাহিদুল ইসলাম সোহেল। র‌্যাব-১-এর নির্দেশনায় নোয়াখালীর সোনারপুরের বদরীপুর গ্রাম থেকে গভীর রাতে তুলে আনা হয়েছে সোহেলকে।


কেন গভীর রাতে সোহেলকে তাঁর ঘরের দরজা ভেঙে তুলে আনা হলো, সে বিষয়ে জানে না স্থানীয় র‌্যাব ও পুলিশ। পরিবারের লোকদের দাবি_সোহেল নিরপরাধ। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। অন্যদিকে র‌্যাবের মিডিয়া উইংসের পরিচালক জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানাবলেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে সোহেলকে।
নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে মাস্টার্স পরীক্ষা দেওয়ার পর স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন সোহেল, জড়িত ছিলেন সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গেও। কালের কণ্ঠের পাঠক সংগঠন শুভসংঘের নোয়াখালী শাখার সম্পাদক তিনি। থাকতেন বড় বোনের বাড়িতে। অন্যদিনের মতো দিনের কাজ শেষে রাতে ঘুমাতে গিয়েছিলেন। রাত ১২টার দিকে তাঁর মোবাইল ফোনে একটি কল আসে। জানতে চাওয়া হয় তাঁর অবস্থান। সরল মনেই নিজের অবস্থান জানিয়ে দেন সোহেল। এরপর রাত ১টার পর বাড়িতে আসে র‌্যাবের পোশাক পরা কিছু লোক। কুমিল্লায় অবস্থানরত র‌্যাব-১১-এর সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে ঘরের দরজা খুলতে বলা হয়। বাড়ির লোকজন ডাকাত পড়েছে ভেবে চিৎকার দিলে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে সোহেলকে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় সোহেলকে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ আখ্যা দেওয়া হয়। অনুসন্ধানে র‌্যাবের নোয়াখালীর ডিএডি কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, স্থানীয় র‌্যাব এ ধরনের কোনো অভিযান চালায়নি। যে নম্বর থেকে সোহেলকে কল করা হয়েছিল, ওই মোবাইল নম্বরটি কুমিল্লার এক র‌্যাব কর্মকর্তার। তিনি কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, র‌্যাব-১১ নোয়াখালীতে অভিযান চালায় ঢাকার র‌্যাব-১-এর নির্দেশনা পেয়ে। র‌্যাব-১-এর কমান্ডিং অফিসার কালের কণ্ঠের কাছে স্বীকার করেছেন সোহেলকে উঠিয়ে আনার কথা। তবে সোহেলের বিরুদ্ধে কোনো থানায় মামলা আছে কি না সে ব্যাপারে তিনি কোনো তথ্য দিতে পারেননি। তিনি কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন সোহেলের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলার কথা। অন্যদিকে র‌্যাবের মিডিয়া উইংসের পরিচালক কালের কণ্ঠকে বলেছেন, সোহেলের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা আছে। মামলা করা হয়েছে আদালতে। স্থানীয় থানায় সোহেলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। স্থানীয় থানা কর্তৃপক্ষ সোহেলকে ভালো ছেলে হিসেবেই জানে।
তর্কের খাতিরে আমরা ধরে নিতে পারি সোহেল অপরাধী। সে ক্ষেত্রে নোয়াখালীর র‌্যাব কিংবা স্থানীয় থানার পুলিশ যথানিয়মে সোহেলকে গ্রেপ্তার করতে গেলে সেটাই স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া যেত। কিন্তু তা করা হয়নি। র‌্যাব-১-এর নির্দেশনায় র‌্যাব-১১ যেভাবে আতঙ্ক ছড়িয়ে সোহেলকে তুলে এনেছে, সেটা কতটুকু আইনানুগ বা যৌক্তিক? একজন দাগি অপরাধীকে ধরতে গিয়েও কি এভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি করা যায়? আগের রাতে আটক করে নিয়ে আসার পর বিকেল পর্যন্ত র‌্যাব সোহেল সম্পর্কে কোনো তথ্য দেয়নি। বুধবার আদালত থেকে তাঁর জামিন হয়েছে। সোহেল ফিরে আসতে পেরেছেন মুক্ত জীবনে। যে কাউকে আটক করার পর তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য জানাতে হয়। আটক করার পর আদালতে হাজির করার একটা নির্দিষ্ট সময় আছে। সোহেলের ব্যাপারে সেই নিয়ম কতটুকু মেনে চলা হয়েছে_সেটাও দেখার বিষয়। অনেক বিষয়েই র‌্যাবের এখতিয়ার থাকতে পারে। র‌্যাব এখতিয়ার মেনেই কাজ করবে। কিন্তু সাধারণ মানুষেরও স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপনের অধিকার আছে। র‌্যাবের এখতিয়ার যেন সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকার কেড়ে না নেয়, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়াটাই বোধ হয় সমীচীন।

No comments

Powered by Blogger.