বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য-সীমান্ত হাটের প্রতীকী যাত্রা

বা ংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বহুল প্রত্যাশিত সীমান্ত বাণিজ্য পরিচালনার জন্য প্রথম হাট শনিবার যাত্রা শুরু করেছে। কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার বালিয়ামারী সীমান্তে দু'দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তাদের কেউ কেউ 'সীমান্ত হাটকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণে মাইলফলক' হিসেবে অভিহিত করেন।


গত বছর জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় এ বিষয়ে সমঝোতা হয়েছিল। এরপর দেড় বছর লাগল প্রথম হাটটি চালু করতে। বলা চলে, আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করায় দীর্ঘসূত্রতা রয়েই গেছে। স্মরণ করা যেতে পারে, পাকিস্তান আমলে এ ধরনের হাট বিভিন্ন সীমান্তে চালু ছিল এবং তা উভয় দেশের জনগণের কাঙ্ক্ষিত ছিল। কিন্তু ১৯৭১ সালে তা বন্ধ হয়ে যায় এবং আবার চালু করতে লেগে যায় চার দশক। দু'দেশের মোট বাণিজ্যের তুলনায় বালিয়ামারীর হাটে যে লেনদেন হবে, তা অবশ্যই প্রতীকী। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার ক্ষেত্রেও তা আদৌ অবদান রাখবে না। দুই দেশের স্থল সীমান্ত চার হাজার কিলোমিটারের বেশি বিস্তৃত। এর উভয় অংশের সীমান্ত সংলগ্ন অধিবাসীরা এ ধরনের শত শত হাট-বাজারে নিয়মিত কেনাবেচা করলেও বাণিজ্যের পরিমাণ হয়তো খুব বেশি হবে না। কিন্তু সীমান্তের কিছু নির্দিষ্ট স্থানে নিয়মিত উপস্থিত হয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও গৃহস্থালির টুকিটাকি পণ্য কেনাবেচা করতে পারলে সংলগ্ন এলাকার জনগণের জীবনযাপন সহজ হবে, অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়বে। স্থানীয়ভাবে উদ্যোক্তা শ্রেণীর বিকাশেও নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেক নিয়ম-কানুন থাকে। সীমান্ত হাটের ক্ষেত্রে তার ছায়া যেন না পড়ে, বরং এ প্রক্রিয়া যেন সহজ ও সাবলীল হয় এবং হয়রানি-ঝামেলা যেন সর্বনিম্ন মাত্রায় কমিয়ে আনা যায়, সেটা প্রত্যাশিত। এ ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রসারিত হওয়ার ফলে সীমান্ত এলাকার উভয় অংশের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির সম্পর্ক স্থাপিত হবে, মৈত্রীর বন্ধন দৃঢ় হবে। হাটের দিনগুলো তাদের কাছে হতে থাকবে বহুল প্রত্যাশিত এবং উৎসবের মেজাজেই নারী-পুরুষরা সেখানে মিলিত হবে। সীমান্ত বাণিজ্য পরিচালনার জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখাও অপরিহার্য। কাঁটাতারের বেড়া কিংবা 'অবৈধ অনুপ্রবেশ' মনে হলেই গুলি চালানোর মনোভাব এ লক্ষ্য অর্জনের সহায়ক নয়। এ ক্ষেত্রে ভারতের তরফে অধিকতর সংযম প্রদর্শনের তাগিদ এমনকি সে দেশের বিভিন্ন মহল থেকে বারবার দেওয়া হচ্ছে। নয়াদিলি্লরও রয়েছে প্রতিশ্রুতি। তা রক্ষায় চাই সর্বোচ্চ আন্তরিকতা।
বালিয়ামারীর হাটটি প্রতীকী এবং কলেবর সীমিত। প্রথম পর্যায়ে দুই পক্ষে ২৫ জন করে বিক্রেতা থাকবেন। আর ক্রেতার সংখ্যা হবে ৩০০ করে ৬০০ জন। ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যা বাড়ানোর মতো বাস্তব অবস্থা বিদ্যমান থাকলে তাতে শিথিলতা প্রদর্শনের মনোভাব থাকা চাই এবং বিষয়টিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার দিলি্ল-ঢাকা পর্যায়ে নয়, বরং উভয় দেশের স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের ওপর ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। এ হাটের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে অন্যান্য স্থানে তা চালুর বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, এটাই প্রত্যাশিত। দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক পা আগে তো দু'পা পেছনে_ এমন ঘটনা বারবার ঘটেছে। এর পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়।
 

No comments

Powered by Blogger.