অর্থনীতি-ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও উন্নয়ন-দর্শন by রুশিদান ইসলাম রহমান

পরিকল্পনা কমিশন সম্প্রতি ‘ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করছে। মূল রূপরেখা ও একটি খসড়া প্রস্তুত হয়েছে। এই বিষয়ে সম্পৃক্ত যে ‘অর্থনীতিবিদ প্যানেল’ গঠিত হয়েছে, তার সদস্যদের মধ্যে আমি একজন। দলিলটির শুরুতেই এ পরিকল্পনার পটভূমি হিসেবে যে উন্নয়ন-দর্শন রয়েছে, তা ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন।


সেই বিষয়ে কিছু লিখিত মতামত প্রেরণ করেছি। আরও ভাবনা-চিন্তা মিলিয়ে কিছু লেখার একটি তাগিদ অনুভব করলাম (যা আমার ব্যক্তিগত মতামত)।
যদি এই বিশ্বাস নিয়ে অগ্রসর হই যে, এই পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার বোধ এসেছে কিছু উন্নয়ন-দর্শন থেকে, তাহলে প্রথমেই সেই উন্নয়ন-দর্শনকে চিহ্নিত করতে হবে। এই দর্শন হতে হবে একেবারেই স্বকীয়, এই মাটি-জলের অভিজ্ঞতাপ্রসূত। এই দর্শন আসবে নীতি-নির্ধারকদের, অর্থনীতিবিদদের, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের আয়োজকদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা, মূল্যায়ন ও আগামীর স্বপ্ন থেকে। বইয়ের তত্ত্ব, অন্য দেশের অনুকরণ, আন্তর্জাতিক সংস্থার দিকনির্দেশনা বা পরামর্শ থেকে নয়।
এই উন্নয়ন-দর্শনের চিত্রটি কোনো আকস্মিক বিষয়বস্তু হতে হবে, তেমন নয়। এটি হঠাৎ কোনো নির্দেশ দেওয়া বা দৈববাণীর মতো নয়। বরং এ দেশের উন্নয়নপ্রবাহের চলমান প্রক্রিয়া থেকে উত্থিত প্রত্যাশা এবং প্রয়োজনগুলো প্রতিফলিত হবে আগামী দিনের উন্নয়ন-দর্শনে।
তা ছাড়া আর এক দিক থেকেও বিষয়টি দেখতে হবে, সেটিও শুরুতেই বলে নেওয়া ভালো। এ ধরনের বৃহত্তর ও সামগ্রিক উন্নয়ন-ভাবনা থাকলে তবেই একটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রয়োজন হয়। গতানুগতিক জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি বা মাথাপিছু গড় আয়ের বৃদ্ধি হয়তো বাজারে ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের হাতে ছেড়ে দিলেই সহজে ঘটতে পারে এবং তখন অতি সীমিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজের মধ্যে সরকার তার ভূমিকা রাখতে পারে। উন্নয়ন-প্রক্রিয়াকে যখন এর চেয়ে ব্যাপকতর বিষয় হিসেবে দেখা হয়, তখনই আসে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রাসঙ্গিকতা।
এই উন্নয়ন-প্রক্রিয়ার প্রথম ও কেন্দ্রীয় বিষয় হচ্ছে, সেখানে থাকবে একটি অংশগ্রহণের বোধ। এ দেশের মানুষ এটা প্রতিষ্ঠিত করেছে যে তারা উন্নয়ন চায়। আপাতদৃষ্টিতে যাদের মনে হবে প্রান্তিক অবস্থানে, ভাগ্যের হতে সমর্পিত, তারাও যুদ্ধ করছে প্রকৃতির বিরূপতার সঙ্গে, যুদ্ধ করছে পরিবারের সদস্যদের হাতে খাদ্য তুলে দেওয়ার জন্য। যাদের নিত্যসঙ্গী ছিল কুসংস্কার, আধুনিকতার প্রতি ছিল যারা বিরূপ, তাদের মানসিকতায় এসেছে পরিবর্তন। কয়েকটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। শিশুদের টিকা দেওয়ার জন্য কিশোরী মা, নিরক্ষর মাতামহীরা ভিড় করে আসছেন, খাবার স্যালাইনে প্রাণ বাঁচাচ্ছেন কত শিশুর, ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পেলে ছুটে যাচ্ছেন আশ্রয়কেন্দ্রে, সেখানেই জন্ম নিচ্ছে নতুন শিশু। শিল্পশ্রমিকদের ঊর্ধ্বশ্বাসে হেঁটে কর্মস্থলে যাওয়া—এসবই প্রমাণ করে যে, এ দেশের মানুষ জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে চায়।
কিন্তু এই উন্নয়ন কি শুধু মাস শেষে কিছু আয়ের সংস্থান, যাতে হবে দেশের গড় মাথাপিছু আয়ের বৃদ্ধি? ওপরের খণ্ডচিত্রগুলো থেকে বোঝা যায়, জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের আরও নানাবিধ দিক রয়েছে, যেগুলো সবার নাগালের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। এবারে এগুলো আলাদাভাবে চিহ্নিত করি।
শুরুতেই আয় বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। দেশের উন্নতি বলতে সবচেয়ে প্রথমে জাতীয় উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির কথাই বলা হয়ে থাকে। এটা অবশ্যই প্রয়োজন এবং এই প্রবৃদ্ধি এমন স্তরে নিয়ে যেতে হবে, যাতে দেশটি মধ্যম আয়ের সীমা অতিক্রম করবে। কিন্তু সেই লক্ষ্যে ধাবিত হয়ে উন্নয়নের অন্যান্য দিককে ভুলে যাওয়া চলবে না। এমনকি অন্যান্য দিকের উন্নয়নের জন্য এই মধ্য আয়ের দেশে পৌঁছানোর দিনক্ষণ যদি কিছুটা সরাতেও হয়, সেটা মেনে নিতে হবে।
উন্নয়নের এই অন্যান্য দিক কী কী? এখানে আমাদের কিছু রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা আছে। কিছু সামাজিক-আন্তর্জাতিক পটভূমিতে প্রতিশ্রুতি রয়েছে। সেগুলোর ভিত্তিতেই আসবে একটি সামগ্রিক চিত্র।
বিগত সব পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতে (এবং অবশ্যই পিআরএসপিতে) আয়ের প্রবৃদ্ধির পরই গুরুত্ব পেয়েছে ‘দারিদ্র্য হ্রাস’-এর লক্ষ্যমাত্রা ও কৌশল। সেখানে দ্রুততর হারে আয় বৃদ্ধিকেই ধরা হয়েছে দারিদ্র্য হ্রাসের প্রধান কৌশল হিসেবে। অর্থাৎ বিষয়টি একটি চক্রাকার ধারণার মধ্যে আবর্তিত হচ্ছে।
দারিদ্র্য হ্রাসের সঙ্গে দেখতে হবে, তাদের আয় বৃদ্ধি যেন স্থায়িত্ব পায়, সে বিষয়টি। কোনোভাবে ‘সামাজিক সুরক্ষার’ মাধ্যমে ঠেলেঠুলে কিছু পরিবারকে ‘ব্যয়ভিত্তিক দারিদ্র্য রেখার’ ওপরে উঠিয়ে দায়সারাটা যথেষ্ট নয়।
দারিদ্র্যের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত এবং বঞ্চনার আরও বাস্তব ও চরম রূপ হচ্ছে ক্ষুধা, খাদ্যের নিরাপত্তাহীনতা ও অপুষ্টি। এসব বঞ্চনাকে চিরতরে বিদায় দিতে হবে। আসলে এমডিজিতে (সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য) কিন্তু এই বিষয়গুলোকে একসঙ্গেই দেখা হয়েছে।
বিগত পরিকল্পনাগুলোতে এবং পিআরএসপিতে সমাজের বৈষম্যের বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়নি। কিন্তু বৈষম্য বাড়তে থাকলে দারিদ্র্য হ্রাস কঠিনতর হবে। এ দেশে আয়ের বৈষম্য প্রতিবেশী অনেক দেশের চেয়ে বেশি। ১৯৮০-এর দশকের পরে এই বৈষম্য বেড়েছে। বলাই বাহুল্য, ভোগ্যপণ্যের ওপর ব্যয়ের ভিত্তিতে বৈষম্য হিসাব করা হয় অনেক গবেষণায়, তাতে বৈষম্য কম দেখায়। ধরা উচিত আয়ের বৈষম্য। কারণ, আয় যাদের বেশি, তারা ভোগ্যপণ্যে ব্যয় তত বাড়ায় না, বরং সম্পদ ও সঞ্চয় বাড়ায়।
তবে আয়ের বৈষম্যটিকে সামনে আনার অনেক সমস্যা। এটা একটু অস্বস্তিকর হবে অনেক পক্ষের জন্য। আর সরাসরি আয়বৈষম্য কমানোর মতো বাস্তব কৌশল সরকারের জন্য সহজলভ্য নয়। আরও কিছু বিতর্ক রয়েছে বৈষম্য, প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য হ্রাসের সম্পর্ক নিয়ে, প্রবৃদ্ধি দ্রুততর হলে প্রথম পর্যায়ে বৈষম্য বাড়তে পারে, তবে সেটা দারিদ্র্য হ্রাসের জন্য ক্ষতিকর নাও হতে পারে। এই বিতর্ক চলতে থাকলেও বৈষম্য হ্রাসের বিষয়টি আমাদের উন্নয়ন-দর্শনের বাইরে রাখলে চলবে না।
বৈষম্য হ্রাসের পরিকল্পনাতে কতটা শক্ত কৌশল গ্রহণ করা সম্ভব, সে বিষয়ে একটা অবস্থান নিতে হবে সরকারকে এবং পরিকল্পনা কমিশনকে। কিছু পরোক্ষ কৌশলও কার্যকর হতে পারে মধ্য মেয়াদে। তার মধ্যে প্রথমেই আসে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় কম আয়ের পরিবারগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়।
শিক্ষাক্ষেত্রে যে অর্জন, সেখানে বৈষম্য কমাতে হবে। সর্বজনীনভাবে প্রাথমিক শিক্ষাতে ভর্তি হলেও প্রাথমিক, মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কম আয়ের পরিবার অনেক পিছিয়ে আছে। উচ্চশিক্ষা খাতে এই বৈষম্য আরও বেশি। এই বৈষম্য দূর করার জন্য বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া খুব কঠিন নয়। কিছু নতুন উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে: একেবারে দরিদ্র পরিবারের উচ্চ মেধাসম্পন্ন ছাত্রছাত্রীদের বেছে নিয়ে তাদের জন্য মাধ্যমিক সমাপন পর্যন্ত মনোযোগ দেওয়ার মতো পৃথক স্কুল/ ক্যাডেট কলেজ ইত্যাদি এবং এদের উচ্চশিক্ষা সমাপনে এগিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা। তারা তখন নিজেদের আয় বাড়ানোর কাজ নিজেরাই বেছে নেবেন। পরবর্তী প্রজন্মে এই পরিবারগুলো উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে। এমনিভাবে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রেও বৈষম্য কমাতে হবে। এসব বৈষম্যের মধ্যে সেবার মানের বিষয়টিকেও দেখাতে হবে।
চাওয়ার তালিকাটিকে দীর্ঘতর না করে বরং এই উন্নয়ন-দর্শনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত আরেকটি বিষয় নিয়ে কিছু উল্লেখ করা উচিত। এই পর্যায়ে গতানুগতিক কৌশলে আয়ের প্রবৃদ্ধি এবং কিছু নিরাপত্তা জাল দিয়ে দারিদ্র্য হ্রাস ঘটিয়ে কিন্তু উন্নয়নের বড় পদক্ষেপ হবে না। বরং এ দেশে সব সময়ই উন্নয়ন কৌশলের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছেই। স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তনও আসছে। যেমন উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বর্গাদারদের জন্য কৃষিঋণ দেওয়া এই অংশগ্রহণের মাধ্যমে উন্নয়নের একটি পদক্ষেপ, স্টাইপেন্ডের মাধ্যমে কিশোরীদের স্কুলে ধরে রাখা, অতীতের কৃষি উন্নয়নের নানা ধরনের সমবায় মডেল-স্বনির্ভরতার প্রচেষ্টা, এসব ইতিবাচক কৌশলই আমাদের উন্নয়নের ইতিবাচক দিক। উদ্ভাবনী প্রচেষ্টাগুলোকে আমাদের আগামী পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে একাত্ম করতে হবে।
এ বছর থেকে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পথে ফিরে যাওয়ার একটি কারণ এই যে, জাতির জন্য বিশেষ লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে এবং স্থিরকৃত কৌশলের মাধ্যমে সেখানে পৌঁছাতে হবে। পরিকল্পনার পশ্চাৎপটে যে দর্শন থাকবে, তার একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হবে, ‘সবার আন্তরিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে এমন একটি উন্নয়ন-প্রক্রিয়া, যার সুফল দেশের সুবিধাবঞ্চিত বৃহৎ অংশের কাছে দ্রুত পৌঁছাবে।’ এই উন্নয়ন-প্রক্রিয়ায় কী কী বিষয় গুরুত্ব পাবে? এখানে সর্বপ্রধান কয়েকটির উল্লেখ করা হচ্ছে:
সুবিধাবঞ্চিত অংশ যেন উন্নয়নে অংশ নিতে পারে তার জন্য প্রয়োজন সম্পদ, কর্মসংস্থান ও রাষ্ট্রীয় পরিষেবাতে তাদের বৃহত্তর অংশ।
বিভিন্ন ধরনের শ্রমশক্তির জন্য উপযোগী যথেষ্ট কর্মসংস্থান ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ (যেমন তরুণ স্কুলশিক্ষিত ছেলেমেয়ে, অদক্ষ নারী শ্রমিক, কৃষি খাতের অতিরিক্ত পুরুষ শ্রমিক)। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশজ আয়ের প্রবৃদ্ধি ত্বরায়ণ ও অংশীদারি উন্নয়ন, দুটিই সম্ভব হবে।
শুধু দুটি শহরকে ‘উন্নয়নের কেন্দ্র’ হিসেবে তৈরি করে দূরান্তরের জনগোষ্ঠীকে ‘দারিদ্র্য বিমোচনের’ জন্য সেখানে আকর্ষণ করা যাবে না। বরং আঞ্চলিকভাবে সুষম উন্নয়নের জন্য দেশের বিভিন্ন অংশে শিল্প-সেবার নতুন ‘উন্নয়ন কেন্দ্র’ গড়ে উঠতে হবে। রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনায় তিনটি এলাকায় তিনটি কেন্দ্র হতে পারে এবং জেলা শহরগুলো এগুলোর সঙ্গে যুক্ত হবে। এর ফলে এসব এলাকার জনগণের, বিশেষ করে, নারীর শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ সহজ হবে।
আগামী বছরগুলোতে কৃষি থেকে শ্রমশক্তিকে শিল্পের দিকে যেতে হবে। কাজেই শিল্পের জন্য এমন নীতিমালা ও দৃষ্টিভঙ্গি নিতে হবে, যাতে শ্রমঘন শিল্পের প্রসার হয়।
সুবিধাবঞ্চিত অংশ বিশেষত, নারীসমাজ যেন মানসম্পন্ন পরিষেবার সুযোগ পায়, যাতে দারিদ্র্য-বেকারত্ব-অসহায়ত্ব চক্র থেকে নিষ্ক্রমণের পথ খুঁজে নিতে পারেন, তাতে তাঁরা উন্নয়নে নিজেদের অংশগ্রহণকে অনুভব করবেন এবং উন্নয়নের সুফলকে নিজের করায়ত্ত করার সন্তুষ্টি পাবেন।
দক্ষতা উন্নয়ন, ডিজিটাল প্রযুক্তি ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত উন্নয়ন অবশ্যই প্রয়োজন হবে। সেই প্রযুক্তি আহরণক্ষেত্রে সমাজের দরিদ্রতর অংশ পিছিয়ে থাকবে না, বরং সমানভাবে অংশগ্রহণ করবে। এসব প্রযুক্তি প্রয়োগ করে আয় ও কর্মনিয়োজনে কিন্তু নিম্ন আয়ের পরিবারের শ্রমশক্তিই বেশি আগ্রহী হবে।
ওপরের সবগুলোই নামেমাত্র গ্রহণ করার একটা আপাত ধারণা দিয়ে আসলে পুরোনো ধাঁচের ‘প্রবৃদ্ধি-বিনিয়োগ-বিদেশি বিনিয়োগ-সুবিধাপ্রাপ্ত কিছু শিল্প খাত’ এ পথকেই গ্রহণ করার প্রবণতা থাকতে পারে। সেই পথ পরিহার করে সবার, বিশেষত সুবিধাবঞ্চিতদের অধিকারসম্পৃক্ত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।
পরিকল্পনার আদর্শের মধ্যে এটিও থাকতে হবে যে, প্রণয়নের পর তা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এই লক্ষ্যে সুদৃঢ়ভাবে অগ্রসর হতে হবে। ইতস্তত মনোভাবের কোনো সুযোগ নেই। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার ব্যাপারে সাম্প্রতিককালে একটি নৈরাশ্যবাদী ধারণা তৈরি হয়েছে, এমন একটি মনোভাব যে এটা লেখার জন্যই লেখা। অতীতের পরিকল্পনাগুলোর বাস্তবায়নের ব্যর্থতা এর একটি বড় কারণ।
অতীতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৫ শতাংশ ধরা হয়েছে, যখন ৪ শতাংশও অর্জিত হয়নি। সুতরাং পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রাগুলো অবাস্তব পর্যায়ের উচ্চকাঙ্ক্ষী না হওয়াই সব দিক থেকে ভালো হবে। আর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শুরু থেকেই বাস্তবায়নের দিকে মনোযোগী হতে হবে। নিয়মিত পরিবীক্ষণ হওয়া উচিত এই বাস্তবায়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং সেটা শুধু পরিকল্পনার শেষ অধ্যায়ে সংযোজন করা নয়, এর মূল আদর্শ বলেই গৃহীত হতে হবে।
এই ক্ষুদ্র পরিসরে পরিকল্পনার দর্শন নিয়ে পুরো ধারণা তৈরি করা সম্ভব নয়। আলোচনা কিছুটা বিক্ষিপ্তও মনে হতে পারে। এ পর্যন্ত যা বলা হয়েছে, তার সঙ্গে পরিকল্পনা কমিশন একমত হবে, তেমনটিও ধারণা করছি না, কিন্তু এখানে তাঁরা কিছু ভাবনার উপকরণ হয়তো পাবেন। তার সঙ্গে অন্য সবার চিন্তা ও দিকদর্শনকে একত্র করে একটি উজ্জ্বল গতিশীল সমাজ ও অর্থনীতির চিত্র গড়া সম্ভব হবে।
রুশিদান ইসলাম রহমান: গবেষণা পরিচালক, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
rir1312@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.