এইচএসসি ও সমমান-আজ ও কালকের পরীক্ষা শুক্র ও শনিবার

বিএনপি আজ রবিবার ও আগামীকাল সোমবার হরতাল ডাকায় এই দুই দিনের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব পরীক্ষার নতুন তারিখ আগামী শুক্র ও শনিবার (৪ ও ৫ মে) নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে জুমার নামাজের কারণে শুক্রবার সকালের পরীক্ষা সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হবে।


এ বিষয়ে আন্তশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন কালের কণ্ঠকে বলেন, হরতালের কারণে আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা পিছিয়ে আগামী শুক্র ও শনিবার নির্ধারণ করা হয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমরা চেষ্টা করছি বাচ্চাদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়। এ জন্য আমরা ছুটির দিনে পরীক্ষা নিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।'
ফাহিমা খাতুন জানান, এইচএসসিতে আটটি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আজ রবিবার সকাল ও বিকেলে যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল সেগুলো আগামী ৪ মে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা এবং দুপুর ২টা থেকে শুরু হবে। আর আগামীকাল সোমবারের সকাল ও বিকেলের পরীক্ষা হবে ৫ মে শনিবার সকাল ১০টা ও দুপুর ২টায়।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষাও পেছানো হয়েছে। বোর্ডটির চেয়ারম্যান আবদুন নূর কালের কণ্ঠকে বলেন, আজ রবিবারের পরীক্ষা আগামী শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হবে। আগামীকাল সোমবার মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে কোনো পরীক্ষা নেই। একইভাবে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। বোর্ডটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আবদুুর রেজ্জাক কালের কণ্ঠকে বলেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আজ রবিবারের পরীক্ষা শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় এবং আগামীকাল সোমবারের পরীক্ষা শনিবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হবে।
স্থগিত পরীক্ষা ফের স্থগিত
গত ২৩ ও ২৪ এপ্রিলের হরতালের কারণে স্থগিত হওয়া মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিভিন্ন শ্রেণীর প্রথম সাময়িক পরীক্ষা নেওয়ার দিন ছিল আজ রবি ও আগামীকাল সোমবার। কিন্তু এ দুই দিন ফের হরতাল দেওয়ায় এসব পরীক্ষা আবার স্থগিত করা হয়েছে। এই স্থগিত পরীক্ষা কবে নেওয়া হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক ডেকেছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম। তিনি গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এমন একটা সমস্যায় পড়েছি, বোঝাতে পারব না। স্থগিত পরীক্ষাটি আজ ও কাল নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু আবার হরতাল। এ অবস্থায় বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা বছরের সিলেবাস শেষ করতে পারবে না।'
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মঞ্জু আরা বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, আজ ও আগামীকালকের হরতালে স্কুলের সব পরীক্ষা স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। এসব পরীক্ষা আগামী ৪ ও ৫ মে নেওয়া হবে। এর আগে ২৩ ও ২৪ এপ্রিলের হরতালে স্থগিত হওয়া পরীক্ষা ২ ও ৩ মে অনুষ্ঠিত হবে বলে অধ্যক্ষ জানান।
গত ২২, ২৩ ও ২৪ এপ্রিলের হরতালের কারণে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গত শুক্রবার কয়েকটি স্কুল প্রথম সাময়িক পরীক্ষা নেয়।
পরীক্ষার্থীদের ক্ষোভ-হতাশা
'ইস, আবার হরতাল। কবে যে পরীক্ষা শেষ হবে। ভালো লাগে না। দুই দিন পরপর হরতাল। যারা হরতাল দেয় তারা কী জানে না আমাদের পরীক্ষা চলছে? পরীক্ষার সময় হরতাল দিয়ে আমাদের মনোযোগ নষ্ট করার মানে কি? চলমান এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পরপর হরতাল ডাকায় এভাবেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের পরীক্ষার্থী পাপিয়া। ঢাকার সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের পরীক্ষার্থী রিমি প্রশ্ন করে, 'হরতালে পরীক্ষার যে ছন্দপতন হয়েছে সেটি কে ফিরিয়ে দেবে?'
চলমান এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সময় হরতাল না দেওয়ার জন্য হাইকোর্টে রিট, সুশীল সমাজের অনুরোধ, শিক্ষামন্ত্রীর অনুরোধ এবং 'বিরোধী দল চায় না ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা শিখুক' প্রধানমন্ত্রীর এমন মন্তব্যও কাজে লাগেনি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিরোধী দলের ডাকা এসব হরতালের কারণে চলতি বছরের পুরো শিক্ষাপঞ্জি ভেঙে পড়েছে। বেকায়দায় পড়েছে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সেমিস্টার পরীক্ষা, সারা দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের প্রথম সাময়িক পরীক্ষাও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনো স্কুল সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারে পরীক্ষা নেওয়া শুরু করেছে। এ ছাড়া কোনো স্কুলে স্থগিত পরীক্ষা আবার স্থগিত হয়েছে।
রাজধানীর টিকাটুলীর সালেহ আহমেদ নামের একজন অভিভাবক কালের কণ্ঠকে বলেন, বিরোধী দল লাখ লাখ পরীক্ষার্থীর কথা চিন্তা না করেই আবার হরতাল ডেকে বসল! পরীক্ষার্থীদের কথা একটুও ভাবল না।
আন্তশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বাচ্চাদের বিষয়টি কেউ বিবেচনায় আনল না_এটাই অবাক লাগে। এত বিবৃতি-অনুরোধের পরও ফের হরতাল দেওয়া হলো। এতে কার কী লাভ হলো বলতে পারব না, তবে এটুকু বলতে পারব, এ হরতাল দেশের ৯ লাখ বাচ্চার মনে আঘাত দিয়েছে।'
উল্লেখ্য, গত ১ এপ্রিল থেকে সারা দেশে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা চলছে। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট ৯ লাখ ২৬ হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.