ঘাটে ঘাটে পুলিশের চাঁদাবাজি-চিরতরে বন্ধ করা প্রয়োজন

প্রতিটি ব্যবসার যেমন মৌসুম বা সিজন আছে, তেমনি চাঁদাবাজিরও আছে সিজন। সারা বছর সারা দেশে অব্যাহতভাবে চাঁদাবাজি চললেও ঈদের সময় এলে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে, বিশেষ করে কোরবানির গরু-ছাগলের হাটগুলোকে কেন্দ্র করে।


সড়ক, মহাসড়ক, সীমান্ত এলাকা, ঢাকা শহরে প্রবেশের মুখ- সর্বত্র চলতে থাকে এ সময় চাঁদাবাজি। পরিস্থিতি ও পরিবেশের দিকে চোখ রাখলে মনে হয় চাঁদাবাজির মহোৎসব চলছে। বিশেষ করে গরু আমদানি, কেনা-বেচা ও পরিবহনে চাঁদাবাজির এই চিরাচরিত দৃশ্যে এবারও কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে না। আর এই চাঁদাবাজি করছে প্রধানত দেশের জনগণকে নিরাপত্তা প্রদানের দায়িত্বে নিয়োজিত এক শ্রেণীর পুলিশ সদস্য। সেই সঙ্গে মাস্তান, ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্য তো আছেই। খোদ মহাসড়কের দায়িত্বে থাকা পুলিশের একজন কর্মকর্তা এক সংবাদকর্মীকে জানিয়েছেন, মহাসড়কে পশুবাহী ট্রাক থামানোর ক্ষেত্রে আগে থেকে কড়াকড়ি আরোপ করায় টহলে থাকা অনেক পুলিশ ভীষণ নাখোশ হয়েছেন। এ কারণে অনেকে দায়সারা গোছে ডিউটি করছেন। এদিকে অপরাপর পুলিশ কর্মকর্তা যথানিয়মে বিবৃতি দিয়ে চাঁদাবাজি কমেছে বলে দাবি করলেও পরিবহন শ্রমিকরা জানিয়েছেন, চাঁদা আদায় কমেনি। বরং পুলিশ সরাসরি চাঁদা না নিলেও তাদের মনোনীত লোকজনই মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে চাঁদা আদায় করছে। অর্থাৎ ঘুরিয়ে খাচ্ছে।
অন্যায় ও অনিয়ম সমাজে দুষ্টচক্রের মতো কাজ করে। একটি অন্যায় বা অপরাধ থেকে জন্ম নেয় অনেক অন্যায়-অপরাধ। সমাজে অন্যায়-অপরাধ দমন করার মুখ্য দায়িত্ব পুলিশের। পুলিশ প্রশাসন যদি এমন লুটপাটের মানসিকতা নিয়ে চাঁদাবাজি চালায়, তাহলে সমাজের কোনো ক্ষেত্রেই ভালো কোনো সংবাদ পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। যে পুলিশ নিজেরা চাঁদাবাজির সঙ্গে প্রকাশ্যে জড়িয়ে থাকে, সেই পুলিশ সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি বন্ধ করবে কিভাবে? শর্ষের মধ্যেই ভূত থাকলে তা দিয়ে ভূত তাড়ানো যাবে কি! অন্যদিকে পুলিশের চাঁদাবাজির এই বোঝা ক্রেতাসাধারণের ঘাড়ে এসেই চাপছে। যাঁরা ভারত থেকে বা দীর্ঘ পথ পার করে, ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিয়ে রাজধানী ঢাকায় পশু বিক্রি করতে আসেন, অবশ্যই ওই চাঁদার টাকা তাঁর বিনিয়োগের অংশ। সুতরাং পরোক্ষভাবে এই চাঁদা আদায় করা হচ্ছে জনগণের কাছ থেকে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আমাদের পরামর্শ, আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে এমন একটি ব্যবস্থা রাখা হোক, যাতে কোনো কন্ট্রোল রুম থেকে গোটা দেশের চাঁদাবাজির এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। প্রাসঙ্গিক হওয়ায় আমরা আবারও প্রস্তাব করছি, পুলিশ বিভাগকে বিশেষ বেতন স্কেল প্রদান করে তাদের ঘুষ, অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ও সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা রেখে চাকরিবিধি প্রণয়ন করা হোক। কারণ এভাবে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে একটি দেশ চলতে পারে না, চলতে দেওয়া যায় না।

No comments

Powered by Blogger.