হাসিনা-চ্যাংচুন সাক্ষাৎ-সহায়তা বাড়াতে বাংলাদেশ-চীন তিন চুক্তি সই

বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গতকাল রবিবার দ্বিপক্ষীয় এ তিন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এদিকে বাংলাদেশ সফররত চীনা প্রতিনিধিদলের সদস্যরা গতকাল রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।


তিন চুক্তি স্বাক্ষর : বিদ্যুৎ খাতসহ বিভিন্ন খাতে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মধ্যে একটি সমঝোতা, একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং একটি কাঠামোগত চুক্তি রয়েছে।
সূত্র জানায়, অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহায়তার ওপর চুক্তি ছাড়াও চীন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা শক্তিশালী করবে এবং অবকাঠামো চুক্তির আওতায় বাংলাদেশকে চীন কনসেশনাল ঋণ দেবে। চীনা প্রতিনিধিদলের সদস্য ও চীনের বাণিজ্যবিষয়ক ভাইস মিনিস্টার ঝিয়াং জেংগেল এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদ ও বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব আবুল কালাম আজাদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
সব ধরনের সহায়তা দেবে চীন : বাংলাদেশকে ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চীন সব ধরনের, বিশেষ করে অবকাঠামো, বাণিজ্য বিনিয়োগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সহায়তা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ সফররত চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কেন্দ্রীয় কমিটি রাজনৈতিক ব্যুরোর স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য লি চেংচুন গতকাল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ কথা জানান।
বৈঠককালে রাষ্ট্রপতি প্রতিনিধিদলকে চীনকে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করেন। এ সময় রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন, মিয়ানমার হয়ে ঢাকা-কুনমিং সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার পর বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক এক নতুন মাত্রায় উন্নীত হবে। বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি দেশের অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে চীন সরকারের আরো সহায়তা কামনা করেন।
চেংচুন বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে স্বাগত জানান এবং আশা প্রকাশ করেন, ২০২১ সালের মধ্যে দেশটি একটি মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
চীনা প্রতিনিধিদলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক মন্ত্রী ওয়াং জিয়ারুই, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী কাই উম, বেতার, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনবিষয়ক মন্ত্রী কাই ফুচাও, গণমাধ্যম ও প্রকাশনামন্ত্রী লিউ বিনজাই, প্রকাশনা বিভাগের উপমন্ত্রী সান ঝিজুন, বাণিজ্য উপমন্ত্রী জিয়ানফগ জেঙ্গ ওয়েই ও বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জুন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অধিকতর বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করে জ্বালানি, কৃষি ও অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে চীনকে আরো বেশি বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে তার বন্ধুত্বকে অধিক গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন, আঞ্চলিক যোগাযোগ ও বাণিজ্য ঘাটতি দূর করতে সহায়তার মাধ্যমে এ সম্পর্ককে আরো জোরদার করা সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল তাঁর কার্যালয়ে চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে রয়েছেন সিপিসির কেন্দ্রীয় কমিটির পলিটিক্যাল ব্যুরোর স্থায়ী কমিটির সদস্য লি চেংচুন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে চীনের কম্পানিগুলোর জন্য পৃথক একটি বিশেষ অর্থনৈতিক জোন গঠনে জমি দেওয়ার প্রস্তাব করে বিভিন্ন খাতে চীনের বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য প্রতিনিধিদলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা এক চীন নীতির প্রতি তাঁর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, দুই দেশই অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে বিভিন্ন বৈশ্বিক ইস্যুতে একত্রে অবস্থান নেয়। বাংলাদেশ থেকে অধিক পণ্য আমদানির জন্য চীনের ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতে প্রতিনিধিদলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, ওষুধ, যোগাযোগ এবং অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে চীনের অধিক বিনিয়োগকে স্বাগত জানাবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক, অ্যাম্বাসাডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব শেখ এম ওয়াহিদ উজ জামান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামান, ইআরডি সচিব ইকবাল মাহমুদ, বিদ্যুৎসচিব আবুল কালাম আজাদ ও চীনের রাষ্ট্রদূত লি ঝাং অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
চীনা প্রতিনিধিদলের প্রধান পাগলা পানি শোধনাগারের সম্প্রসারণ এবং সড়ক ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে সহযোগিতার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, চীন সরকার সে দেশে লেখাপড়ার সুবিধার্থে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি দুই দেশের মধ্যে অধিকতর রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সূত্র : বাসস।

No comments

Powered by Blogger.