যেখানে মওদুদ সেখানেই প্রতিরোধঃ ছাত্রলীগ by রফিকুল ইসলাম রনি

বিএনপি নেতা ব্যরিস্টার মওদূদ আহমেদকে যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছে সাবেক ও বর্তমান ছাত্রলীগ নেতারা। তারা বলেছেন, ডিগবাজ দুর্নীতিবাজ মদ্যপ মওদুদকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে। বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ তুলে মওদুদের ব্যাপারে সজাগ থাকার জন্য ছাত্রলীগের নেতা কর্মিদের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

সোমবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা এসব কথা বলেন।
বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ছাত্রলীগকে নিয়ে কটাক্ষ করে বক্তব্য দেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে ছাত্রলীগ।

উল্লেখ্য, রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মিট দ্যা প্রেসে বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, বর্তমান সরকারের অনেকগুলো কলঙ্ক আছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কলঙ্ক হলো ছাত্রলীগ।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক।

বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওছার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি একেএম এনামুল হক শামীম, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী সাইফুজ্জামান শেখর প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের সভাপতি-সম্পাদকরা বক্তব্য দেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম সভা পরিচালনা করেন।

সভায় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, “বক্তব্যের শুরুতে নাউজুবিল্লাহ পড়ে নিচ্ছি যাতে শয়তান চলে যায়। কারণ পঁচা ডিমের সম্পর্কে বক্তব্য দিতে হবে। মওদুদ তুমি কার? যখন যার তখন তার। রতনে রতন চেনে শুয়োরে চেনে কচু। খালেদা জিয়া ঠিক ব্যক্তিকেই চিনেছেন। উনি এখন খালেদা জিয়ার সোনার চান পিতলাঘুঘু।”

ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এনামুল হক শামীম বলেন, “যেখানে মওদুদ সেখানেই প্রতিরোধ। মওদুদ সাহেব আপনাকে গৃহবন্দী থাকতে হবে। নিজের অবস্থান এবং পায়ের তলার মাটি মেপে কথা বলবেন। অন্যথায় আপনার পরিণতির জন্য আপনি নিজে দায়ী থাকবেন। ছাত্রলীগ কখনো পরাজয় দেখেনি।”

তিনি বলেন, “ছাত্রলীগ মানে দেশের ইতিহাস, গৌরব। একজন মিথ্যাবাদী মওদুদ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করলেই ছাত্রলীগের গৌরব ম্লান হয়ে যাবে না। দেশের পতাকার ইতিহাস যতদিন থাকবে, ছাত্রলীগের ইতিহাস ততদিন থাকবে।”

কৌতুকের ছলে এনামুল হক শামীম বলেন, মিয়া সাহেব(মওদুদ) হাতি ঘোড়া গেল তল, ঘোড়ায় বলে কত জল। ইতিপূর্বে ইয়াহিয়া, আইয়ুব খান এই ছাত্রলীগের হাতেই পরাজিত হয়েছে। ছাত্রলীগ প্রতিরোধ গড়ে তুললে আপনি টিকতে পারবেন না।” তিনি ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।

সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর একান্ত বিশেষ সহকারী সাইফুজ্জামান শেখর বলেন, “তার কথায়(মওদুদ) আমরা বিচলিত নই। কারণ সকল স্বৈরা শাসককের সুবিধা ভোগী এবং দল বদলের চ্যাম্পিয়ন তিনি। তার মুখ থেকে কখনোই সত্য কথা জাতি আশা করতে পারে না।”

তিনি বলেন,  “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাদের হাতে অস্ত্র  দেখা গেছে, তারা ছাত্রলীগের কেউ নয়। ছাত্রলীগ থেকে বহু আগেই তাদের বহিস্কার করা হয়েছে। সেদিন কি শিবিরের কারো হাতে কোনো অস্ত্র ছিলো না?  তাহলে কি শিবির ফুল নিয়ে ঢুকেছিল। সেই ছবিই বা দিলো না কেন? এ সবকিছুই ষড়যন্ত্র।”

সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজল হায়দার চৌধুরী রোটন বলেন, “ব্যারিস্টার মওদুদের ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অন্তর্জ্বালার কারণ হচ্ছে তিনি প্রতিটি সৈরাশাসকের সুবিধাভোগী ছিলেন। ওই সকল স্বৈরাশাসকের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ আন্দোলন করে পতন ঘটিয়েছিল। যে কারণেই ডিগবাজ মওদুদ ছাত্রলীগ নিয়ে ম্যিথাচার করে জাতিকে বিভ্রান্ত করছেন।”

ব্যারিস্টার মওদুদের ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবির তীব্র সমালোচনা করে ছাত্রলীগের সভাপতি এইএম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, “আপনি বিগত জোট সরকারের আইনমন্ত্রী ছিলেন। সে সময় ছাত্রদল ও শিবিরের ক্যাডারদের দ্বারা বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে  একের পর এক মেধাবী ছাত্র, শিক্ষকদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তখন কেন বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি।

তিনি বলেন, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বুয়েটের মেধাবী ছাত্রীকে নির্মমভাবে হত্যা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইউনুছ ও আবু তাহেরকে হত্যা করা। সেদিন শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছিল। এখন শিক্ষাঙ্গনে কোনো সন্ত্রাস করা হচ্ছে না।

মওদুদ আহমেদ দেশের স্বার্থে নয়, নিজের স্বার্থে বারবার দল বদল করে জাতির সাথে বেইমানি করেছেন। এই জন্য তাকে বিশ্ব বেইমান বলা হয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বলেন, ডিগবাজ খ্যাত মওদুদ সাহেব ছাত্রলীগকে নিয়ে বিষেদাগার করবেন না। ছাত্রলীগের গৌরব বাংলাদেশে ইতিহাসের সাথে জড়িত। ছাত্রলীগের রাজনীতি খাতা কলমের। ছাত্রলীগ অস্ত্রবাজির রাজনীতি করে না।”

ছাত্রদলের নেতাদের সমালোচনা করে সিদ্দিকী নাজমুল আলম বলেন, “বর্তমানে ছাত্রদলে কোনো ছাত্রনেতা নেই। ছাত্রদের সাথে আমাদের সহবস্থান, কোনো অছাত্রদের সাথে অবস্থান হতে পারে না।”

বিরোধী দলের নেত্রীর সমালোচনা করে নাজমুল বলেন, সীমান্তের ওপারে আমাদের বন্ধু আছে কিন্তু কোনো প্রভু নেই। আপনার প্রভু আছে বর্হিবিশ্বে। কিন্তু তাদের মনজয় করে ক্ষমতায় আসতে পারবেন না। বাংলাদেশের প্রতিটি সাংগঠনিক জেলার নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, গণতন্ত্র বিরোধী শত্রুরা অতীতে বারবার ষড়যন্ত্র করেছে। ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার জন্য বাংলার ছাত্র সমাজের প্রতি আহবান জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.