তারা হাসিনাকে ডুবাচ্ছেন, নির্বাচনে নৌকাও ডুববে! by সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল

বাংলাদেশের অনেক মানুষ আওয়ামী লীগ না করেও তারা ‘নৌকা’য় ভোট দেন। কারণ, তাদের আর কোনো উপায় নেই। তারা সরাসরি দলীয় সমর্থক নয়; কিন্তু মনে প্রাণে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। এই ‘পক্ষ’টাই আওয়ামী লীগের একটা বড় প্লাস পয়েন্ট। সেই প্লাস পয়েন্টকে তারা যথার্থ কাজে লাগাতে পারেন না। দুঃখজনক হলেও সত্য, দলের অনেক নিষ্ঠাবান-দক্ষ-সৎ নেতাকর্মীদেরকেও মুল্যায়ণ করতে পারেন নি।

পেছনের দিকে ফিরে তাকিয়ে বলতে হয়, বঙ্গবন্ধুর কাছের মানুষ হয়ে উঠেন ‘মোশতাকে’রা আর দূরের সরে যান ‘তাজউদ্দিনে’রা। শেখ হাসিনার ক্ষেত্রেও অনেকটা তাই ঘটছে। ক্ষমতার অপব্যবহারকারী, দুর্নীতিবাজ হিসেবে অভিযুক্ত, বিতর্কিত আমলা, এমপি, নেতামন্ত্রী, উপদেষ্টারা প্রতিনিয়ত সরকারকে বিব্রত করছে। যা সামাল দিতে স্বয়ং শেখ হাসিনাকেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।

জাতীয় সংসদে তোফায়েল-সেলিমেরা তো রীতিমতো বিরোধী দলের ভাষায় ও ভূমিকায় তীব্র সমালোচনা করছেন এই সব সুবিধাবাদী আমলা, নেতামন্ত্রী, উপদেষ্টাদের আচরণে। এদের তালিকা দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে। এখন আমলারাও এই তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন। যেমন, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব নজরুল ইসলাম খান, বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘সৎ’ সচিব এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
আরেক ‘সৎ’ এবং মহা দুর্নীতিবাজ আমলা সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে পুরস্কৃত করে মরক্কোয় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত করা হয়েছে। অথচ বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি ছিল। নূর মোহাম্মদের চেয়ে আর কি কোনো যোগ্য লোক বাংলাদেশে ছিল না?

তারেক-কোকো-ফালু-মামুনেরা ‘দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য’ বানিয়েছিলেন। আর এখন কেন প্রশ্ন উঠছে, বর্তমান সরকারের লোকজন ‘দুর্নীতির নরকরাজ্য’ বানাচ্ছেন? তাহলে খালেদা আর হাসিনার মধ্যে কি তফাৎ থাকলো।

তিনি গত বছর কানাডায় এসে বলেছিলেন, ‘আমরা আমাদের ছেলেমেয়েকে চুরি করার শিক্ষা দেই নি, দিয়েছি উচ্চশিক্ষা। সেটাই তাদের বড় সম্পদ’। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নেতাকর্মী, মন্ত্রী-উপদেষ্টারা কি করছেন? একের পর এক তাদের বিরোদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। আর তিনি তাদের পক্ষে বলছেন, আমার ‘আবুলেরা’ সৎ আর দেশপ্রেমিক। কেন? কয়েকজন আবুল বড় নাকি সরকারের ভাবমূর্তি বড়। আমার মতো সামান্য একজন মানুষের মনে এই প্রশ্ন জাগে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কি একবারও সেই বিষয়টি ভেবে দেখেন না!!

বহুল আলোচিত শেয়ার কেলেঙ্কারির পর প্রশাসনে নিয়োগবাণিজ্য ও পদোন্নতি নিয়ে জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে। তারপর ধারাবাহিকভাবে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান আর শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএসের ঘুষ কেলেংকারি, পদ্মা সেতু দুর্নীতির আর্থিক কেলেংকারির কারণে যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের পদত্যাগ, উপদেষ্টা মসিউর রহমানের পদত্যাগপত্র জমা এবং সর্বশেষ হলমার্ক কেলেংকারির স্বাস্থ্য উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীর জড়িত থাকার ঘটনা সরকারকে ধাপে ধাপে নীচের দিকে নামাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী ‘আবুল মাল আব্দুল’ মুহিত নিজেকেই সব চেয়ে ‘ঘৃণিত’ লোক বলে সংসদে স্বীকার করেছেন।

সরকারের অনেক যুগান্তকারী দৃষ্টান্তমূলক কাজকে ম্লান করে দিচ্ছেন মাত্র কয়েকজন আব্দুল-সৈয়দ-সেন-খানেরা। তাদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের জন্য আগামী নির্বাচনে নৌকা ডুববে, তা টের পাওয়া যাচ্ছে।



সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল: কবি ও সাংবাদিক, কানাডা প্রবাসী
                                      saifullahdulal@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.