মামলা প্রত্যাহারে আমার দেশ সংবাদকর্মীদের আল্টিমেটাম

ঈদুল আজহার আগে দৈনিক আমার দেশ’র সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন পত্রিকাটির সাংবাদিক-কর্মচারীরা। মামলা প্রত্যাহার করা না হলে ঈদের পর বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আমার দেশ’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আমার দেশ পরিবার আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে মাহমুদুর রহমান এ কথা বলেন। দৈনিকটির সব সাংবাদিকের রিমান্ড চাওয়ার প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
মাহমুদুর রহমান বলেন, “এই ফ্যাসিবাদী সরকার আমাকে ৫৭ টি মামলা ও ১৪ দিন রিমান্ডে নিয়েছিল। আবার নতুন করে আমার দেশ’র সাংবাদিকরা আওয়ামী আক্রমণের শিকার হয়েছেন। আজকে যা চলছে পৃথিবীর ইতিহাসে এ রকম দ্বিতীয় উদাহরণ আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।”

তিনি বলেন, “আমার দেশ’র চার’শ সাংবাদিকের নামে মামলা দিয়েছে। নাম না জানায় তাদের সবার রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। এ মামলায় এজহারভুক্ত আসামি সাতজন। এর মধ্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবের বর্তমান সেক্রেটারি সৈয়দ আবদাল হোসেনের নাম রয়েছে। গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারির রিমান্ড ও গ্রেফতারের কথা বলা হতে পারে-এর চেয়ে ধৃষ্ঠতা আর নেই। এ সরকার পৃথিবীর সব স্বৈরশাসককে হার মানিয়েছে। তাই এ সরকারকে গণতান্ত্রিক সরকার বলা যায় না।”

মাহমুদুর রহমান বলেন, “আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য আন্দোলনে আসিনি। আমরা আমাদের পেশার স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনে এসেছি।”

তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আমার সহকর্মীদের রিমান্ডে নয়, আমাকে রিমান্ডে নিন। আপনি একদিকে গণতন্ত্রের কথা বলবেন, আরেকদিকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করবেন-এটা হতে পারে না।”

মাহমুদুর রহমান বলেন, “আজ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা বিপন্ন। তাই এই পাগলের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে নামতে হবে। এই সরকার মস্তিষ্ক বিকৃত সরকার। কারণ, বিভিন্নভাবে গণতন্ত্রের স্বাধীনতাকে পদদলিত করছে।”

সমাবেশে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দীন সবুজ বলেন, “আজ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা বিপন্ন। সরকার মিডিয়ার ওপর যে নির্যাতন করছে এটা বন্ধ করা উচিত। এভাবে চলতে পারে না। এসব হয়রানি সংবাদপত্রের ওপর নগ্ন হামলা।”

প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারি সৈয়দ আবদাল হোসেন বলেন, “আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সাংবাদিকরা আক্রান্ত হয়। এ পর্যন্ত ১৬ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে, এর বিচার নেই। চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে এই সরকার মিডিয়া দলন করছে।”

তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের নাম জানার জন্য রিমান্ডের আবেদন করা কোনো সভ্য আচরণ নয়। এ সরকারের মধ্যে সভ্য কিছু নেই বলেই অসভ্য আচরণ করছে।”

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুস শহিদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের কথা বলেন। আবার তিনিই সংবাদপত্রের কভারেজ বন্ধ করে কণ্ঠ রোধ করেন। এটা গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত। তাই এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে হবে।”

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উদ্দেশে বলেন, “পারফরমেন্স যদি দেখাতে হয় তাহলে ভালো ভালো জায়গা আছে। সেখানে পারফরমেন্স দেখিয়ে মন্ত্রিত্ব পাকাপোক্ত করতে পারেন।”

তিনি বলেন, “রিমান্ডের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। ২০১০ সালে আপনার সরকারের ভরা যৌবন ছিল, এখনতো বার্ধক্য পৌঁছেছেন। যদি বোধ ও মান সন্মান থাকে তাহলে এ কাজ থেকে দূরে থাকবেন। অপেক্ষা করুন আপনাদের বিরুদ্ধেও রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হবে। তখন আপনাদের রিমান্ড নেয়া হবে।”

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কবি আব্দুল হাই শিকদার।

সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন, সাংবাদিক নেতা কে এম আব্দুল্লাহ, শহীদুল ইসলাম, নুরুল আমীন রোকন, এম এ আজিজ, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, আমার দেশ’র টিম লিডার বাছির কামাল, সাংবাদিক ওলিউল্লাহ নোমান ও আলাউদ্দীন আরিফ প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.