মাননীয় অর্থমন্ত্রী একটু ভেবে বলুন by সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা

স্মরণকালের বৃহত্তম ব্যাংক ডাকাতি ঘটেছে রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংকে। অবশ্য তা হয়েছে কাগজপত্র জালিয়াতি করে, বন্দুকের মুখে ক্যাশ লুট করে নয়। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক, রূপসী বাংলা শাখার ব্যবস্থাপকসহ কতিপয় বড় কর্মকর্তা আর সমাজের প্রভাবশালী কিছু লোকের যোগসাজশে হলমার্ক নামের এক অখ্যাত প্রতিষ্ঠানসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠানকে ঋন দেয়ার নামে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে বের করে নিয়েছে।

এই ঘটনা জানাজানি হবার পর থেকে প্রশ্ন উঠেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বা সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কি করেছে? তারা কি তাদের দায়-দায়িত্ব এড়াতে পারে? সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ চুপ করে ছিলো, কারণ তারা নিজেরাই এই দুর্নীতির সাথে জড়িত। যে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই জালিয়াতির অভিযোগ, সেই অখ্যাত হলমার্ক গ্রুপ শুধু সোনালী ব্যাংক নয়, একইভাবে টাকা তুলে নিয়েছে আরো দুই সরকারি ব্যাংক জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক থেকেও। আবার সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখা শুধু হলমার্ক-কে নয়, এভাবে শত শত কোটি টাকার ঋন সুবিধা দিয়েছে আরো বাণিজ্যিক গ্রুপকে।

একটি কথা খুবই পরিষ্কার যে, সোনালি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সবাই না হোক, কেউ না কেউ অবশ্যই এটা জানতো কিংবা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মদদ দিয়েছে। নয়তো একটি সাধারণ শাখা থেকে ৩০০০ কোটি টাকা বেরিয়ে যেতে পারে?

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কি জোর দিয়ে বলতে পারে যে সেও জানতো না বিষয়টি? অনেকটাই পরিষ্কার যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেছে। তবে দেরীতে হলেও যখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থমন্ত্রণালয়কে সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনঃগঠনের সুপারিশ করেছে তখন সব অর্থমন্ত্রী যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তা সব বিবেকবান মানুষকে আহত করেছে। পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়ার সুপারিশ করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এখতিয়ার বহির্ভূত বলে অর্থমন্ত্রী মূলত রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন, সব ব্যাংকের অভিভাবক বাংলাদেশ ব্যাংককে অপমান করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি দুর্নীতিবাজদের উৎসাহিত করার প্রয়াস দেখিয়েছেন। শুধু তা নয়, অর্থমন্ত্রী আরো অবাক করা কথা বলেছেন মঙ্গলবার এক সেমিনারে। তিনি বললেন চার হাজার কোটি টাকার লোপাট বড় দুর্নীতি নয়, এটাকে বড় করেছে গণমাধ্যম।

সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনঃগঠনের যে সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, তা করা হয়েছে আইনের মধ্যে থেকেই।

প্রশ্ন উঠতে পারে অর্থমন্ত্রী এমনটা বললেন কেন? তারতো আইন জানার কথা। তবে কি তিনি এটা করেছেন এ জন্য যে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদে তার দলের লোকজন আছে? কিংবা পদ্মা সেতু প্রকল্পের মতো এখানেও  প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টার নাম উঠে এসেছে সে জন্য?

অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলার আগে একবারও কি ভেবেছেন যে সোনালী ব্যাংকের এই টাকা সাধারন মানুষের কষ্টার্জিত সঞ্চয়? যারা লুটপাট করেছে তারা দলের হলেও তারা আসলে লুটেরাই। 

দিন বদলের শ্লোগান দিয়ে আসা এই সরকারের কাছে প্রত্যাশা ছিল আগের সরকার আর দলীয় লোকজন যে লুটপাট করেছে তা থেকে তারা ভিন্ন পথে হাঁটবেন। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে উল্টোটা। 

যে অখ্যাত তানভির মাহমুদ জালিয়াতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটেছে, তাকে উৎসাহিত করেছেন অর্থমন্ত্রী। উৎসাহিত করেছেন তার দলের ভেতরে থাকা দুর্নীতিবাজদের। উৎসাহিত করেছেন উপদেষ্টা নামধারী আরো কিছু ক্ষমতালিপ্সু মানুষদের।

সাংবাদিক হিসেবে দুঃখ পেয়েছি যে তিনি পুরো ঘটনায় দায় চাপিয়েছেন গণমাধ্যমের ওপর। তার কাছ থেকে আশা ছিল তিনি গণমাধ্যমের প্রশংসা করবেন এমন একটি বড় অর্থ কেলেঙ্কারিকে ফাঁস করে দেয়ার জন্য। কিন্তু উল্টো তিনি দুষলেন।


অর্থমন্ত্রী কাছে একটি অনুরোধ, তিনি একটু ভেবে কথা বলবেন। কাকে কখন, কি কারণে রাবিশ বলছেন বা ভর্ৎসনা করছেন একটু চিন্তা করে করবেন। এতে আপনারই মঙ্গল হবে বেশি।

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা: পরিচালক (বার্তা), একাত্তর টেলিভিশন
                                 ইমেইল: ishtiaquereza@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.