আজি হতে ৪২ বর্ষ পরে by জামান সরদার

ভবিষ্যৎ কে না জানতে চায়? বটতলার গণক ঠাকুর থেকে ওয়ালস্ট্রিটের শেয়ারবাজার বিশ্লেষকের কাছে ভিড় কমে না সে কারণেই। সবচেয়ে বেশি জানতে চায় রাজনৈতিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস। কারণ এর ভবিতব্য জানতে পারলেই বাকি অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এই বাস্তবতা আরও স্পষ্ট।


বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদ যখন শেষ হয়ে আসছে, নির্বাচনী কুস্তির আগামী রাউন্ডের জন্য যখন প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন বাসের ভিড়ে, চায়ের দোকানে, বসার ঘরে একটি প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে_ কার দখলে যাচ্ছে 'বাংলার মসনদ'? প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় না চতুর্থ শক্তি? 'পঞ্চম বাহিনী'র কথাও কি শোনা যাচ্ছে না? উত্তর সহজ নয়।
মোটা দাগে একটা উত্তর অবশ্য বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া দিয়েছেন। কয়েক দিন আগে গাজীপুরের কাপাসিয়ার এক জনসভায় তিনি বলেছেন, আগামী ৪২ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। যারা বৃষ্টির তোড় বুঝে ছাতা ধরতে চায়, তাদের উপকারই করেছেন বটে বিএনপি প্রধান। কিন্তু ফাঁকও রয়ে গেছে। কারা ক্ষমতায় আসবে না, সেটা বলে দিলেও কারা আসবে সে সম্পর্কে কিছু জানাননি তিনি। ধরে নেওয়া যায়, প্রকারান্তরে নিজের দলের কথাই বুঝিয়েছেন। তার নেতৃত্বাধীন সরকার দুই মেয়াদে জাতিকে যে উন্নয়ন, সুশাসন, মানবাধিকার উপহার দিয়েছে; বিরোধী দলে থেকেও যে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন; সে কথা কি ভোটের সময় নাগরিকের মনে থাকবে না? এই যে রাজনীতি নিয়ে এত দীর্ঘ ভবিষ্যদ্বাণী করলেন, তাও কি জনসাধারণের সুবিধার্থেই নয়?
ভালো হতো কেবল রাজনৈতিক ক্ষমতা নয়, খোদ রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন নিয়ে তিনি যদি কিছু বলতেন। যেমন আগামী ৪২ বছর ধরে রাজনীতিতে এখনকার মতো হানাহানি থাকবে কি-না; বিরোধী দল দায়িত্বশীল হবে কি-না; সংসদ বর্জনের রাজনীতি অব্যাহত থাকবে কি-না; রাজনীতি ও তাদের পরিবার দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করবেন কি-না; রাজনৈতিক নেতৃত্ব জনমত, গণতন্ত্র, ভোটাধিকারের প্রশ্ন অগ্রাহ্য করে মর্জিমাফিক কাউকে ২১ বছর বা ৪২ বছর রাজনীতি থেকে দূরে রাখার আলটিমেটাম দেবেন কি-না ইত্যাদি। রাজনীতির পাশাপাশি আগামী ৪২ বছরে দেশের অর্থনীতি, সমাজ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি, জীবনধারা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, শিল্প-সাহিত্য, সভ্যতা, ক্রীড়া, জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পর্কেও নিজের ভাবনার কথা জনসাধারণকে জানাতে পারতেন। তাতে উপকার বৈ অপকার হতো না।
যারা এসব বিষয়ে ভবিষ্যতের চিত্র জানতে আগ্রহী, তাদের নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। কাজটি করেছে ব্রিটেনের বহুল প্রচারিত দৈনিক 'দ্য টেলিগ্রাফ'। তাদের রবিবাসরীয় প্রকাশনা সানডে টেলিগ্রাফের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আগামী ৫০ বছরের সম্ভাব্য চিত্র তুলে ধরেছে। উপরোক্ত বিষয়গুলোতে স্বনামধন্য ৪৩ জনের মতামত প্রকাশ করেছে তারা। বলাবাহুল্য, প্রেক্ষাপট যুক্তরাজ্য। স্বভাবতই সেখানকার রাজনীতি নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
এমন আয়োজন আমাদের এখানেও হতে পারে। আজ থেকে ৪২ বছর পর দেশের ভবিষ্যৎ বোঝা সহজ হবে তাতে। সবচেয়ে কঠিন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাতটি সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণীর মাধ্যমে কেন্দ্রবিন্দু নির্ধারণ করে দিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেত্রী। প্রান্তিক কাজগুলো করা আর কঠিন কী?
 

No comments

Powered by Blogger.