মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নির্বিঘ্ন হোক-পাকিস্তান অবস্থান স্পষ্ট করেছে

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে পাকিস্তান হস্তক্ষেপ করবে না বলে ঢাকায় নিযুক্ত সে দেশের হাইকমিশনার আশরাফ কোরেশী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা ইতিবাচক। গত মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করে তিনি এ আশ্বাসের পাশাপাশি মানবতাবিরোধী বিচারকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলেও মন্তব্য করেন।


পাকিস্তান এ বিচারের বিরুদ্ধে বহির্বিশ্বে প্রচারণা চালাচ্ছে বলে বিভিন্ন পত্রিকায় যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তাকেও তিনি অসত্য বলে দাবি করেছেন। এ ছাড়া বিচারের প্রভাব দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে পড়বে না বলে পাকিস্তানের হাইকমিশন থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আমরা পাকিস্তানের এ বক্তব্যকে স্বাগত জানাই।
অন্যদিকে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ তথা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে স্বার্থান্বেষী মহল যে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালাচ্ছে, তাদের সম্পর্কেও সজাগ থাকতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটির প্রস্তাবে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রতিরোধের জন্য আলেম-ওলামাসহ সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। তাদের ভাষায়, সরকার ‘বিচারের নামে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা চালাচ্ছে’। কাকে কীভাবে ঘায়েল করা হচ্ছে, সে সম্পর্কে তারা স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। যে বিচার-প্রক্রিয়া শুরুই হয়নি, তার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কাজটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নেওয়া দলটির মধ্যে সীমিত থাকলে এতটা উদ্বেগের কারণ ছিল না। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত বিএনপিও একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিচারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। যুদ্ধাপরাধের বিচার যাতে না হয়, সে জন্য কোনো কোনো দল সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশে ধরনা দিচ্ছে বলে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী যে অভিযোগ করেছেন, তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। স্বার্থান্বেষী মহলের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে।
আইনমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন, মানবতাবিরোধী বিচারের নামে কাউকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করা হবে না। তাঁর কথায় কেউ আশ্বস্ত না হলে আদালতের আশ্রয়ও নিতে পারেন। ইতিমধ্যে কেউ কেউ নিয়েছেনও। বিচার প্রতিরোধ বা প্রতিহত করার হুমকি যারা দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। একাত্তরে গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ গুরুতর অপরাধ সংঘটনকারীদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া যায় না। তদন্তকাজ শুরু হওয়ার আগে কোনো পক্ষ থেকে উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্য-বিবৃতি কাম্য নয়। আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিতে হবে।
বিলম্বে হলেও সরকার গুরুতর অপরাধ সংঘটনকারীদের বিচারের যে উদ্যোগ নিয়েছে, দলমত-নির্বিশেষে সবারই কর্তব্য তার প্রতি সমর্থন জানানো এবং তথ্য-প্রমাণ দিয়ে তাকে সহায়তা করা। রাজনৈতিক বিভাজনের যূপকাষ্ঠে এ মহতী উদ্যোগকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের স্বার্থেই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.