পাস করতেই শিক্ষার্থীদের চাকরির মেয়াদ পার-জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

স্নাতক পর্যায়ে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার সুবিধার জন্যই গেল শতকের নব্বইয়ের দশকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠানটি এখন শিক্ষার্থীদের সুবিধার চেয়ে অসুবিধা ও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে পাঁচ বছরের শিক্ষাক্রম শেষ করতে আট বছরের বেশি সময় লেগে যায়।


পত্রিকার খবর অনুযায়ী, ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া এক শিক্ষার্থীর পাঠ ২০১২ সালেও শেষ হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার আগেই অনেকের সরকারি চাকরির বয়স চলে যায়। এসব নিয়ে বহু লেখালেখি হলেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভর্তি, ক্লাস, পরীক্ষা, খাতা মূল্যায়ন কোনো কিছুই সময়মতো হয় না। এইচএসসি পাস করার পর যেকোনো শিক্ষার্থী অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পাঁচ বছর বা তার কিছু বেশি সময়ে পাঠ শেষ করতে পারেন। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তা কবে শেষ হবে কেউ বলতে পারেন না। গত বছর এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁরা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন, তাঁরা প্রথম বর্ষের পাঠ প্রায় শেষ করলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হয়েছে মাত্র। এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষাও শেষ হওয়ার পথে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির জালে বন্দী হয়ে পড়েছে। দু-একজন ছাড়া সব উপাচার্যকে বিদায় নিতে হয়েছে দুর্নীতির অপবাদ মাথায় নিয়ে। কোনোটিরই সুষ্ঠু তদন্ত ও শাস্তি হয়নি। কেবল গত জোট সরকারের আমলে নিয়মবহির্ভূত নিয়োগ বাতিল হয়েছে উচ্চ আদালতের নির্দেশে। দুর্ভাগ্যজনক যে সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে উপাচার্য-কর্মকর্তা বদল হলেও দুই হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভিভাবক এ প্রতিষ্ঠানটির চরিত্র বদল হয় না। মহাজোট ক্ষমতায় এসে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কারের নানা আওয়াজ তুলেছিল, এখন তা-ও শোনা যায় না।
দেশের শিক্ষার উন্নয়নে শিক্ষামন্ত্রীর অনেক উদ্যোগই প্রশংসিত হয়েছে। আশা করি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট নিরসনেও তিনি কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন। কেননা, স্নাতক পর্যায়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত রেখে শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন একেবারেই অসম্ভব।

No comments

Powered by Blogger.