যে কথা যায় না বলা-সব অনুভূতি সবাই বোঝে না

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার জন্য মহাকাণ্ড ঘটে যায়। আজ বাবার এক ডাকেই ঘুম ভাঙল। কারণ, আজ স্কুলে নতুন বই দেবে। মাকে দেখলাম, খুব তাড়াহুড়ো করে রান্নাবান্না শেষ করছেন। এর কারণ না বুঝেই স্কুলে চলে গেলাম। নতুন বই নিয়ে মহা-আনন্দে বাড়ি ফিরলাম।


কিন্তু ঘরে ঢুকে দেখি, আমার বোন রিমাকে ঘিরে সবাই কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছে। ও কাঁদছিল। কিছুই বুঝতে পারছি না যে, আসল কারণটা কী। একটু পরে কেউ একজন আমাকে এসে বলল, ‘মীরা, তোর একটা বোন হয়েছে।’ এই খবর আমার মধ্যে কোনো অনুভূতির জন্ম দিল কি না, তা বুঝে ওঠার আগেই আমি চিন্তিত হয়ে পড়লাম রিমার কান্না নিয়ে। তখন বাবা রিমার কান্না থামাতে ওকে নিয়ে কৌতুক করতে লাগল। কারণ, বাবা আমাদের অনেক ভালোবাসেন, সব সময় ‘আব্বু’ বলে ডাকেন, সবাই যখন জানতে চায় বাবার কাছে যে, আপনার ছেলে-মেয়ে কয়জন? বাবা খুব আনন্দে উত্তর দেন, ‘আমার দুই কন্যা।’ এখন আমরা হলাম ‘তিন কন্যা।’ আমাদের পড়াশোনার ব্যাপারে কোনো কার্পণ্য করেননি বাবা। আর যার কারণে আমি মনে মনে সব সময় বলতাম, আমাকে ভালো পড়াশোনা করতে হবে। অনেক বড় মানুষ হতে হবে। তিনি আমার ‘মা’। যখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি, তখন ক্লাস ছুটির ১০ মিনিট আগে বাড়ির পাশের এক মেয়ে আমাকে বলেছিল, ‘মীরা, তোর আবার বোন হয়েছে!’ আশ্চর্য আমার চোখ বেয়ে পানি ঝরছিল। আর বারবার মায়ের মুখ ভাসছিল মনে। সব অনুভূতি সবাই বোঝে না। তাই নারীমঞ্চকে জানালাম।
মারিয়া খান

No comments

Powered by Blogger.