বিশেষ সাক্ষাৎকার-ভূমিবিরোধের নিষ্পত্তি না হলে ভূমি জরিপ অর্থবহ হবে না by রাজা দেবাশীষ রায়

ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় চাকমা জনগোষ্ঠীর রাজা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা সার্কেলের প্রধান। পদাধিকারবলে তিনি সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা কমিটি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য। পার্বত্য এলাকার গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর ভূমিকা পালন করেন।


মন্ত্রী পর্যায়ের এই দায়িত্বের অধীনে ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সঙ্গে সরকারের শান্তিচুক্তি নামে পরিচিত পার্বত্যচুক্তি হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রায় তিন দশকের সশস্ত্র যুদ্ধের অবসান হয়। কিন্তু তারপরও ভূমি সমস্যা, শরণার্থী প্রত্যাবর্তনসহ পাহাড়ি-বাঙালি বিরোধে প্রায়শই এই অঞ্চলে অশান্তির সৃষ্টি হতে দেখা যায়। প্রথম আলোর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রাজা দেবাশীষ পাহাড়ি আদিবাসীদের সঙ্গে বসতি স্থাপনকারী বাঙালিদের সাম্প্রতিক সংঘাত, ভূমি সমস্যা, উন্নয়ন-সংকট, শান্তিচুক্তির বাস্তবায়নসহ বেশ কিছু বিষয়ে কথা বলেছেন।
 সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফারুক ওয়াসিফ

প্রথম আলো  সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি ও সহিংসতার যে ঘটনা ঘটেছে, তার কারণ কী বলে মনে করেন?
দেবাশীষ রায়  ঘটনা কেন ঘটল তা যথাযথভাবে উদ্ঘাটন করার জন্য এবং এমন ঘটনা আবার যাতে না ঘটে, সে লক্ষ্যে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য সরকারি তরফ থেকে উচ্চপর্যায়ের যথাযথ ক্ষমতাসম্পন্ন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করা উচিত।
প্রথম আলো  সরকারের তরফ থেকে এর পেছনে একটি গোষ্ঠীর অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির ‘ষড়যন্ত্রের’ কথা বলা হয়েছে। দৃষ্টিভঙ্গিটি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
দেবাশীষ রায়  যারা পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সমগ্র দেশে গণতন্ত্র, সুশাসন, ন্যায়বিচার, অসাম্প্রদায়িকতা ও স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে, তারা তো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকতেই পারে। কেবল ষড়যন্ত্রের কথা বলে গেলেই এর সমাধান হবে না। ষড়যন্ত্র মোকাবিলার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। নিরপেক্ষ উচ্চপর্যায়ের তদন্তের মাধ্যমে সেই ষড়যন্ত্র উদ্ঘাটন করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। এ ক্ষেত্রে সরকার ও দেশের সব সম্প্রদায়ের জনগণ একসঙ্গে কাজ করতে পারে বলে আমার বিশ্বাস।
প্রথম আলো  বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে কিছু অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করবে বলে জানায়। ইতিমধ্যে কিছু কিছু প্রত্যাহারও হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, সেনা প্রত্যাহারের কারণেই পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তির প্রশ্নে সেনাবাহিনীর ভূমিকার বিষয়ে আপনার অভিমত কী?
দেবাশীষ রায়  সাম্প্রতিককালের বাঘাইহাট ও খাগড়াছড়ির ঘটনার সঙ্গে স্থানান্তরিত ৩৫টি সেনাক্যাম্পের কোনো সম্পর্ক দেখছি না। ১৯৯৭ থেকে আজ পর্যন্ত পার্বত্যাঞ্চলের যেসব স্থান থেকে সেনাক্যাম্প সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, সেখানে শান্তি-শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে, এ মর্মে কোনো তথ্য নেই। বরং সেসব অঞ্চলে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে এসেছে। যেহেতু ১৯৯৭ সালের চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র কার্যক্রমের অবসান হয়েছে, সুতরাং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রয়োজন ছাড়া সেখানে সেনাবাহিনীর বিশেষ অবস্থানের কোনো যৌক্তিকতা দেখি না। পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থায়ী ক্যাম্প রাখার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কোনো সম্পর্ক নেই। অস্থায়ী ক্যাম্পগুলো যখন পার্বত্য চট্টগ্রামে ছিল না, তখন পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশেরই ছিল এবং ক্যাম্পগুলো চলে গেলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশেরই থাকবে। আর এটাও মনে রাখা দরকার, ১৯৯৭ সালের চুক্তি অনুসারে অস্থায়ী ক্যাম্পগুলো সরিয়ে নেওয়া হলেও এ অঞ্চলে ছয়টি সেনানিবাস রয়ে গেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলায় ছয়টি সেনানিবাস আর দেশের অন্য জেলাগুলোয় আছে আরও ১০-১২টি বা কিছু বেশি সেনানিবাস। বিশেষ প্রয়োজনে সেই ছয়টি সেনানিবাস থেকে সহজে সেনা মোতায়েন করা যায়। তা ছাড়া সেনানিবাস থেকে দূরে সেনাক্যাম্প থাকলে তা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নজরের বাইরে রয়ে যায়। এরকম হলে স্বাভাবিকভাবেই বেসামরিক বিষয়ে সেনাসদস্যদের জড়িয়ে পড়া ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি তো থাকবেই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সেনা মোতায়েনে যেমন এ রকম ঝুঁকি দেখা যায়, বাংলাদেশও এই ঝুঁকির বাইরে নয়।
প্রথম আলো  ভূমি বিরোধকে পাহাড়িদের বঞ্চনা ও বাঙালিদের অসন্তোষের মূল কারণ বলে মনে করা হয়। পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর এবং আংশিক বাস্তবায়নের পরও এ বিষয়ে অগ্রগতি হলো না কেন?
দেবাশীষ রায়  পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমিসংক্রান্ত সমস্যার অন্যতম প্রধান প্রকাশ হলো বাঙালি অধিবাসীদের সঙ্গে স্থানীয় পাহাড়িদের বিরোধ। আদালতের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য বলে ১৯৯৭ সালের চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন স্থাপিত হয়েছে। এই কমিশনের কাজের মাধ্যমে পার্বত্য ভূমি সমস্যার একটি বড় দিক সমাধান সম্ভব বলে আমি আশাবাদী।
প্রথম আলো  পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১ সালে জাতীয় সংসদে পাস করা হলেও তাতে চুক্তির সঙ্গে বিরোধাত্মক ১৯টি ধারা অন্তর্ভুক্ত হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। একে কি সরকারের সদিচ্ছার অভাব বলা যাবে?
দেবাশীষ রায়  অবসরপ্রাপ্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির নেতৃত্বে এই কমিশনের সদস্যদের মধ্যে আঞ্চলিক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা, সার্কেল চিফ বা রাজাগণ ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার সদস্যভুক্ত আছেন। এই কমিশন দেওয়ানি আদালতের ক্ষমতাপ্রাপ্ত এবং কমিশন পার্বত্যাঞ্চলে প্রচলিত আইন, রীতি ও পদ্ধতি অনুসারে বিচারকার্য পরিচালনা করবে। এই কমিশনের বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে পাহাড়ি-বাঙালি সবাই সুবিচার পেতে পারে। তবে সংশ্লিষ্ট আইনটিতে কিছুু মৌলিক ত্রুটি এবং ১৯৯৭ সালের চুক্তির সঙ্গে অসংগতি রয়েছে। এর যথাযথ সংশোধনের জন্য সরকারের কাছে আঞ্চলিক পরিষদ পরামর্শ পাঠিয়েছে। এই পরামর্শ অনুযায়ী আইনটি সংশোধন করা অতি জরুরি। আমি আশা করি, জরুরি ভিত্তিতে সংশোধনী করা হবে। তা না হলে কমিশন তার কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আমি মনে করি না।
প্রথম আলো  পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি জরিপ হওয়া বা না হওয়া বিষয়ে বিতর্কটি কোথায়?
দেবাশীষ রায়  ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির সঙ্গে ভূমি জরিপ কেন গুলিয়ে ফেলা হচ্ছে আমি বুঝি না। ভূমি জরিপ হলে ভূমির ভৌগোলিক বিবরণ ও তথ্য পাওয়া যাবে। জমিটা কি জঙ্গলা না আবাদি, ঢালু না সমান, ঝিরি না নালা, ভূমি না জলাশয় ইত্যাদি। পাওয়া যাবে জমির বর্তমান দখলদারের পরিচয়। কিন্তু এই তথ্য দিয়ে কমিশন কী করবে? উপরিউক্ত যে ধরনের ভূমিই হোক না কেন, কমিশনের কাজ হলো বলা যে বিরোধপূর্ণ জমিটির আসল স্বত্বাধিকারী কি দরখাস্তকারী, নাকি তার প্রতিপক্ষ? জমিটি নালা না ঝিরি, ঢালু না জঙ্গলা তাতে কমিশনের কী আসে-যায়? আর জমির পরিমাপ যদি করতে হয়, তার জন্য তো জরিপ লাগে না। কমিশনের সদস্য বা প্রতিনিধি পরিদর্শন করেই দখলদারদের পরিচয় উদ্ঘাটন করতে পারবে। তা ছাড়া ভূমি জরিপ একটি সময় ও শ্রমসাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল ব্যাপার। কাজেই পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী জরিপ হওয়া উচিত ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি ও স্থানান্তরিতদের তথা ভারত প্রত্যাগত পাহাড়ি শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের পর, তার আগে নয়। কেননা, ভূমিবিরোধের নিষ্পত্তি না হলে ভূমি জরিপ অর্থবহ হবে না। সনাতনি পদ্ধতিতে ভূমি জরিপের চেয়ে স্যাটেলাইট ও অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তির যথাযথ সময়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে অবশ্যই তা বিরোধ নিষ্পত্তির পর।
প্রথম আলো  আপনি কি মনে করেন, পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামের অস্থায়ী বসতকারীদের বঞ্চিত না করে পাহাড়িদের তাদের জমি ফেরত দেওয়া সম্ভব?
দেবাশীষ রায়  হ্যাঁ, বহুলাংশে সম্ভব। যদি কমিশন বা উপযুক্ত আদালত এ রকম নির্দেশনা প্রদান করে যে, বাঙালি অভিবাসীদের প্রদানকৃত বন্দোবস্ত বেআইনি ও ভিত্তিহীন। তাহলে সেই অভিবাসী কী করবে? অনেক ক্ষেত্রে তো সরকারই তাদের দলিল দিয়ে অপরের জমিতে বসিয়েছে। তার কী দোষ? তাই মানবিক খাতিরে তাকে পুনর্বাসন করতে হবে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরোধহীন ও স্বত্বাধিকারীহীন তেমন জমি তো তার জন্য ফাঁকা নেই। ভৌগোলিক কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকাংশ জমি চাষযোগ্য নয়। এবং মাথাপিছু ভূমির পরিমাণ বেশি মনে হলেও ফসলের পরিমাণ যাচাই করলে পার্বত্য চট্টগ্রামে মাথাপিছু চাষযোগ্য জমির পরিমাণ দেশের সমতলের চেয়ে অনেক কম। মনে রাখা উচিত, ১৯৬০ সালের পর পর্যাপ্ত চাষযোগ্য জমির অভাবেই কিন্তু কাপ্তাই বাঁধের অনেক পাহাড়ি ও বাঙালি উদ্বাস্তুকে পুনর্বাসিত করা যায়নি। ফলে বেশ কয়েক হাজার চাকমা উদ্বাস্তু ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। সুতরাং ১৯৬০-এ জমি ছিল না, এখন কোথায় জমি পাওয়া যাবে? সমতলেও পর্যাপ্ত জমি না থাকতে পারে। তবে এমন অভিবাসীদের ভূমিনির্ভর নয় সমতলের এমন পেশায় পুনর্বাসিত করা যায়। আর্থিকভাবে ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমেও তাদের সাহায্য করা যায়। মূল প্রয়োজন হলো কর্মসংস্থান ও জীবিকার নিরাপত্তা দেওয়া, ভূমি নয়। তবে এ রকম পুনর্বাসন হতে হবে স্বেচ্ছায়।
প্রথম আলো  পার্বত্য পরিষদের অনুমোদনের বাইরে কোনো জায়গা-জমি ইজারা প্রদানসহ বন্দোবস্ত, ক্রয়, বিক্রয় ও হস্তান্তর না করা বা অধিগ্রহণ না করার বিধান আইনে অন্তর্ভুক্ত হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ‘ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা’ বিষয়টি এখনো পরিষদের কাছে হস্তান্তর হয়নি কেন?
দেবাশীষ রায়  সরকারি কর্মকর্তাদের অসহযোগিতার কারণে ভূমি ব্যবস্থাপনায় ও ভূমি প্রশাসনে পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে যথাযথ ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়নি। এটা করার জন্য আইন লাগবে না, লাগবে পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রবিধান প্রণয়ন। এ ছাড়া সরকার এ কাজে বিধি প্রণয়ন বা নির্দেশনাও দিতে পারে।
প্রথম আলো  বর্তমান সরকারের মেয়াদে শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন বিষয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?
দেবাশীষ রায়  পার্বত্যচুক্তির আক্ষরিক ও পূর্ণ বাস্তবায়ন্রআশা করি না। তবে অবাস্তবায়িত ও আংশিক বাস্তবায়িত অনেক বিষয়ে অগ্রগতি হবে বলে আমি আশাবাদী।
প্রথম আলো  শান্তির জন্য জরুরিভাবে কী করা দরকার বলে মনে করেন?
দেবাশীষ রায়  শান্তির জন্য আমি নিম্নলিখিত পদক্ষেপ প্রয়োজন মনে করি। (ক) ১৯৯৭ চুক্তির অপব্যাখ্যা মোকাবিলা করা, (খ) পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশেষ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ইতিহাসে ব্যাখ্যা প্রদান, (গ) মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ, (ঘ) অস্থায়ী সেনাক্যাম্প স্থানান্তর, (ঙ) জাতিগতভাবে মিশ্র পুলিশ নিয়োগ ও পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বিষয় পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনে স্থানান্তর, (চ) পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রশাসনে অধিকসংখ্যক স্থানীয় পাহাড়ি ও বাঙালি বাসিন্দাদের নিয়োগ ও বদলি, (ছ) পার্বত্য চট্টগ্রামে পাঠানো সেনা ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মানবাধিকার বিষয়ে এবং্র পার্বত্য চট্টগ্রামে আইন ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও প্রতিবেশগত কৃষ্টিচর্চা সম্পর্কে সম্যক ধারণা প্রদান করা, (জ) সর্বোপরি, ঐতিহাসিকভাবে বঞ্চিত জাতিগোষ্ঠীর সত্যিকার অর্থে সম-অধিকার চর্চার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নিলে যে তা বাঙালি জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক হবে না, সেই মর্মে সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীকে ও সব নাগরিককে যথাযথ ধারণা প্রদান করা উচিত। এটি জাতিগতভাবে বৈষম্যের অবসানের মূলমন্ত্র, যা বাংলাদেশ সংবিধানের ১৪, ২৭, ২৮ ও ২৯ নম্বর অনুচ্ছেদ এবং বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত আন্তর্জাতিক বর্ণবৈষম্যবিরোধী কনভেনশনে (১৯৬৫) অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ ব্যাপারে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, আইন, বিচার ও সংসদ মন্ত্রণালয় এবং মানবাধিকার কমিশন যৌথ উদ্যোগ নিতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন্র স্থানে দেখা যায় যে ঔপনিবেশীকরণ ও বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীসমূহকে রাষ্ট্রীয় গঠনপ্রক্রিয়ায় হয় একেবারে বাদ দেওয়া হয় অথবা অত্যন্ত গৌণভাবে জড়িত করা হয়। ফলে পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশের সংবিধান, অন্যান্য আইন ও নীতি প্রণয়নে আদিবাসীদের ভূমিকা ছিল না বলেই চলে। রাষ্ট্র শাসন ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সেই একই কথা। এর জন্য জাতিসংঘ কিছু বিশেষ দলিল প্রবর্তন করে। যার মধ্যে অন্যতম হলো বিশ্ব শ্রম সংস্থার আদিবাসী ও ট্রাইবাল জনগোষ্ঠীবিষয়ক কনভেনশন (১৯৫৭), বাংলাদেশ কর্তৃক অনুমোদিত। ১৯৬৫ সালের আন্তর্জাতিক বর্ণবৈষম্যবিরোধী কনভেনশন এবং আদিবাসীবিষয়ক ২০০৬ সালের সনদও বাংলাদেশ কর্তৃক অনুমোদিত। উল্লেখযোগ্য, গত বছর ঢাকায় আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে পাঠানো বার্তায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আদিবাসী সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে সদিচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এগুলোর পূর্ণ বাস্তবায়ন শান্তি ও সুষম বিকাশের স্বার্থে খুবই দরকার।
প্রথম আলো  আপনাকে ধন্যবাদ।
দেবাশীষ রায়  ধন্যবাদ।

No comments

Powered by Blogger.