মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের পদমর্যাদা বাড়ল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের পদ তৃতীয় শ্রেণী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীর গেজেটেড পদমর্যাদায় উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এক সমাবেশে তিনি এই ঘোষণা দেন। বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি আয়োজিত ওই সমাবেশে দেশের ৩১৭টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিরা যোগ দেন।


সকালে প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দেওয়ার পর সন্ধ্যায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কারণ, তাদের কেউ কেউ প্রথম শ্রেণীর পদমর্যাদা প্রত্যাশা করেছিলেন।
সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন না করা এবং তাদের আদর ও ভালোবাসা দিয়ে গড়ে তুলতে শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের অনুরোধ জানাব, শিক্ষার্থীদের আপনারা শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করবেন না। আদর, মমতা ও ভালোবাসা দিয়ে তাদের গড়ে তুলুন।’
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, শিক্ষাসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নোমান-উর-রশীদ ও সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইনছান আলী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সমিতির সভাপতি মো. শামসুল হক।
শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে পিতা-মাতা ও অভিভাবকের চেয়ে শিক্ষকদের ভূমিকা বেশি—এ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার বিষয়ে শিক্ষা দিতে হবে। তাদের সৃজনশীলতা বিকাশে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’
শিশুদের ওপর অতিরিক্ত বইয়ের বোঝা চাপানোর মানসিকতা পরিহার করতে হবে এবং শিক্ষা হতে হবে আনন্দদায়ক—অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তাঁর এই উক্তি পুনর্ব্যক্ত করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬-এর আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অধ্যাপক শামসুল হকের নেতৃত্বে কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের আলোকে আমরা একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলাম। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে রাজনৈতিক কারণে সে শিক্ষানীতি বাতিল করা হয়। এবার দায়িত্ব গ্রহণের পর আমরা একটি আধুনিক, বিজ্ঞানসম্মত ও যুগোপযোগী জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছি। ইতিমধ্যেই এর বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে এবং জনগণ এর সুফল পেতে শুরু করেছেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা শিক্ষাক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা চালু করেছি। বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দিচ্ছি বিনা মূল্যে পাঠ্যবই। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের ক্রমবর্ধমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় জেলা শহরে অবস্থিত ৮৩টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুই শিফট চালু করা হয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে ভালো পাঠদানের লক্ষ্যে প্রায় দুই হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা এক হাজার ৬২৪টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করেছি। ফলে দেশের প্রায় ২০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী সরকারি বেতন-ভাতা পাচ্ছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা মহানগরের আয়তন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা আরও ১১টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ছয়টি সরকারি মহাবিদ্যালয় নির্মাণ করছি। আমি আশা করি, এর ফলে ঢাকা শহরে ভর্তির চাপ অনেকটাই কমবে।’
তিনি বলেন, আমরা শহর ও গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার বৈষম্য দূর করতে চাই। এ লক্ষ্যে যেসব উপজেলায় সরকারি উচ্চবিদ্যালয় নেই, এমন ৩০৬টি উপজেলায় কম্পিউটার ল্যাব ও বিজ্ঞানাগারসহ মানসম্মত একটি করে আধুনিক মডেল উচ্চবিদ্যালয় স্থাপনের কাজ শুরু করেছি।

No comments

Powered by Blogger.