পবিত্র কোরআনের আলো-জিহাদ ফরজে কেফায়া, সবার জন্য সব সময় তা ফরজ নয়

১২২. ওয়ামা- কা-নাল মু'মিনূনা লিইয়ানফিরূ কা-ফ্ফা-তান; ফালাওলা- নাফারা মিন কুল্লি ফিরক্বাতিম্ মিনহুম ত্বা-য়িফাতুল লিইয়াতাফাক্কাহূ ফিদ্ দীনি ওয়ালিইউনযিরূ ক্বাওমাহুম ইযা- রাজাঊ' ইলাইহিম লাআ'ল্লাহুম ইয়াহ্যারূন।
১২৩. ইয়া-আইয়্যুহা ল্লাযীনা আ-মানূ ক্বা-তিলু ল্লাযীনা ইয়ালূনাকুম্ মিনাল কুফ্ফা-রি ওয়ালইয়াজিদূ ফীকুম্ গিলযাহ্; ওয়া'লামূ আন্না ল্লা-হা মাআ'ল মুত্তাক্বীন।


১২৪. ওয়াইযা- মা- উনযিলাত্ ছূরাতুন ফামিনহুম্ মাইঁয়্যাক্বূলু আইয়্যুকুম্ যা-দাত্হু হা-যিহী ঈমা-না-; ফাআম্মা ল্লাযীনা আ-মানূ ফাযা-দাত্হুম ঈমা-নাওঁ ওয়াহুম ইয়াছ্তাবশিরূন।
১২৫. ওয়াআম্মা ল্লাযীনা ফী ক্বুলূবিহিম্ মারাদ্বুন ফাযা-দাতহুম রিজছান ইলা- রিজছিহিম ওয়ামা-তূ ওয়াহুম কা-ফিরূন। [সুরা : আত্ তাওবা, আয়াত : ১২২-১২৫]

অনুবাদ : ১২২. মুসলমানদের জন্য এটাও সমীচীন নয় যে, তারা সবাই একসঙ্গে জিহাদে বের হয়ে যাবে। যদি এমন করা যায় যে তাদের প্রতিটি বড় দল থেকে একটি অংশ জিহাদে বের হয়ে যাবে। অপরদিকে যারা যুদ্ধে যাবে না, তারা ধর্ম সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের চর্চায় নিয়োজিত থাকবে এবং যখন তাদের কওমের লোকেরা তাদের কাছে (প্রয়োজনীয় বিষয়াদি জানতে) আসবে, তখন তারা এদের জ্ঞান দিয়ে সচেতন করবে। এর ফলে তারা (ভুলভ্রান্তি থেকে) সতর্ক হবে।
১২৩. হে মুমিনরা! কাফিরদের মধ্যে যারা তোমাদের আশপাশে আছে, তাদের বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ করো যাতে তারা তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়। নিশ্চয়ই আল্লাহ দায়িত্বনিষ্ঠদের সঙ্গে আছেন।
১২৪. যখনই কোনো সুরা অবতীর্ণ হয়, তখন তাদের কেউ কেউ এসে (বিদ্রূপ করে) বলে, এ সুরাটি তোমাদের মধ্যে কার কার ইমান বাড়িয়ে দিয়েছে? যারা সত্যিকারে ইমান এনেছে, এ সুরা বাস্তবিকই তাদের ইমান বৃদ্ধি করে এবং তারা এতে আনন্দিতও হয়।
১২৫. আর যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, এই আচরণ তাদের মনের কালিমার সঙ্গে আরো কালিমা যুক্ত করে দিল। তাদের মৃত্যু ঘটবে কাফির অবস্থায়।

ব্যাখ্যা : মুসলমানদের যারা তাবুকের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি, সুরা তাওবার সুদীর্ঘ অংশে তাদের নিন্দা করা হয়েছে। বিভিন্ন রেওয়ায়েতে আছে, এসব আয়াত শুনে সাহাবায়ে কিরাম সংকল্প করেছিলেন, ভবিষ্যতে যখনই কোনো যুদ্ধ আসবে, তখন তাতে সবাই অংশগ্রহণ করবে। অর্থাৎ জিহাদে অংশগ্রহণ করাকে ফরজে আইনের মতো একটা বিষয়ে তারা পরিণত করে ফেলা হলো। ১২২ নম্বর আয়াতে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে, এরূপ চিন্তা সর্বদা সংগত নয়। এমনকি ইসলাম রক্ষার জন্য যে যুগে সর্বাত্মক যুদ্ধ চলছিল তখনো নয়। তাবুকের যুদ্ধে একটা বিশেষ প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। অর্থাৎ সেটা ছিল তৎকালীন বিশ্বের এক পরাশক্তির চোখ রাঙানির সামনে মুসলমানদের সদর্প উত্থান জানান দেওয়ার সময়। সে কারণে সব মুসলিমকে তাতে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সাধারণ অবস্থায় বিশেষ বিশেষ দায়িত্ব ও কর্মবণ্টন নীতি অনুসারে কাজ করতে হবে। জিহাদ ফরজে কেফায়া। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যারা এ দায়িত্বে নিয়োজিত, তারাই এটা করবে। তবে রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষ থেকে যদি সবাইকে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়, তবে তা ভিন্ন কথা। এই আয়াতে কর্মবিভাজনের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং বিশেষ করে জিহাদ ও জ্ঞানার্জন_এ দুটো গুরুত্বপূর্ণ খাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
১২৩ নম্বর আয়াতটি একটি উপসংহারমূলক আয়াত। যে বিষয়বস্তুর দ্বারা এ সুরার সূচনা হয়েছিল, এ আয়াতে তার সারমর্ম বলে দেওয়া হয়েছে। এ আয়াতের শুরুতে মুশরিকদের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। মুশরিক ও কাফিররা যেহেতু ইসলামকে অঙ্কুরে বিনাশ করে দিতে চেয়েছিল, তাই তাদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সব মুসলমানকেই যে তার আশপাশের শত্রুদের মোকাবিলা করতে হবে, এ রণকৌশল বলে দেওয়া হচ্ছে। তবে এ কথা তো সত্য, তাদের আশপাশের শত্রুদের সঙ্গে তাদের আত্মীয়তার বন্ধনও রয়েছে। আত্মীয়দের প্রতি নানা কারণেই দুর্বলতা থাকতে পারে যা নৈতিক দুর্বলতার শামিল। ইসলাম এই দুর্বলতার ঊর্ধ্বে উঠতে নির্দেশ দিয়েছে। ইসলামের জিহাদই মানবজাতির ইতিহাসে একমাত্র যুদ্ধ যা গোত্রের বিরুদ্ধে গোত্রের, জাতির বিরুদ্ধে জাতির বা দেশের বিরুদ্ধে দেশের যুদ্ধ নয়। এ যুদ্ধ সর্বাত্মকভাবে আদর্শের। এই আয়াতে এটাই স্পষ্ট করা হয়েছে যে, আত্মীয়তার বন্ধন বা অন্য কোনো স্বার্থের বিবেচনা যেন এ যুদ্ধের ওপর প্রভাব বিস্তার না করে।
১২৪ নম্বর আয়াতে মুনাফিকদের কিছু ব্যঙ্গোক্তির সমালোচনা করা হয়েছে। এরা কোরআন মজিদের কিছু উক্তি নিয়ে বিদ্রূপ করত। এর মধ্যে একটা প্রসঙ্গ ছিল সুরা আনফালের একটি আয়াত। তাতে বলা হয়েছে, মুমিনদের সামনে যখন কোরআনের আয়াত পাঠ করা হয়, তখন তাদের ইমান বৃদ্ধি পায়। ১২৫ নম্বর আয়াতে সেই চূড়ান্ত মুনাফিকদের জীবনের শেষ পরিণতির কথা বলা হয়েছে। চূড়ান্ত মুনাফিকরা কাফির অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করবে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.