হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত জরুরি-পণ্য পরিবহন নির্বিঘ্ন হোক

গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে সাভার, ধামরাই, গাজীপুর ও টঙ্গী মহাসড়কে ১০টি পণ্যবাহী গাড়ি ছিনতাই হয়েছে। অধিকাংশ ছিনতাইয়ের ক্ষেত্রে হাইওয়ে পুলিশ মামলা গ্রহণ করেনি। কয়েকটি ঘটনায় মামলা নথিভুক্ত করলেও ছিনতাই হওয়া গাড়ি উদ্ধারে তৎপর হয়নি।


পণ্যবাহী গাড়িগুলো দিনে পুলিশের চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছে, রাতে পড়ছে ডাকাতির কবলে। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েও হয়রানি করছে।
এসব অভিযোগ তুলেছে ঢাকা মহানগর পণ্য পরিবহন এজেন্সি মালিক সমিতি। পণ্য পরিবহন সমিতির নেতারা সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), পুলিশ কমিশনার ও পুলিশের হাইওয়ে রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শকের সঙ্গে দেখা করে পণ্যবাহী গাড়ি ছিনতাইসহ নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে প্রতিকার চেয়েছেন। কিন্তু তাঁরা কোনো প্রতিকার পাননি। পণ্যবাহী গাড়ি ছিনতাই প্রতিরোধসহ পাঁচ দফা দাবিতে তাঁরা মানববন্ধন আর সমাবেশও করেছেন। তার পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। পুলিশের চাঁদাবাজি ও হয়রানি চলছে; অব্যাহত আছে পণ্যবাহী গাড়ি ছিনতাই, ডাকাতি ও ‘ত্রিপল-কাটা পার্টির’ দৌরাত্ম্য। তাই সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের মরিয়া চেষ্টায় তাঁরা আজ সোমবার থেকে সারা দেশে লাগাতার ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকারের অনুরোধে এবং জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে পণ্য পরিবহন মালিক সমিতি ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
এটা বিস্ময়কর যে হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে পণ্যবাহী গাড়িগুলো থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ করেও প্রতিকার মেলে না। মহাসড়কে মানুষ ও পণ্য পরিবহনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যে বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে, ডাকাত ও পণ্যবাহী গাড়ি ছিনতাইকারীদের হাত থেকে সুরক্ষা দেওয়া তাদের দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালন করা দূরে থাক, উল্টো তারাই চাঁদাবাজি করছে—এর চেয়ে ন্যক্কারজনক অপরাধ আর কী হতে পারে? আর হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগে কর্তৃপক্ষ কী করে নীরব ও প্রতিক্রিয়াহীন থাকতে পারে? পুলিশ চাঁদাবাজি করে—এই অভিযোগের ব্যাপারে কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি, সর্বোপরি সরকারের কিছুই করার নেই?
পদে পদে চাঁদাবাজির কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যায়, সেই বাড়তি মূল্যের চাপ পড়ে ক্রেতাসাধারণের ওপর। সরকার যখন দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণহীন ঊর্ধ্বগতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে, তখন মহাসড়কে পুলিশ ও মাস্তানদের চাঁদাবাজি, ডাকাতি, ছিনতাই প্রতিরোধ করা প্রয়োজন বলে মনে করে কি? প্রয়েজন মনে করলে পণ্য পরিবহন মালিকদের অভিযোগ ও দাবিগুলো আমলে নেওয়া হলো না কেন?
আমরা আশা করি, পুলিশের চাঁদাবাজি ও হয়রানি বন্ধে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেবে এবং পণ্য পরিবহন নিরাপদ করতে যা যা প্রয়োজন, তা করবে। কারণ পণ্য পরিবহন এমন জরুরি একটি কাজ, যা বিঘ্নিত হলে বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, পণ্যের সরবরাহ ব্যাহত হবে এবং এ কারণে দ্রব্যমূল্য আরও বেড়ে যাবে। এমনটি কারোরই কাম্য নয়।

No comments

Powered by Blogger.