প্রতি কেজি বোরো ধানে ব্যয় বাড়ছে দেড় টাকা by ইফতেখার মাহমুদ

বোরোর উৎপাদন খরচ বাড়ছে। কৃষককে এবার প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে দেড় টাকা পর্যন্ত খরচ বেশি করতে হবে।
গত মৌসুমের তুলনায় এবার সেচকাজে ব্যবহূত ডিজেলের দাম প্রতি লিটারে ১৬ টাকা এবং প্রধান সার ইউরিয়ার দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে।


এতে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে বলে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) এক হিসাবে দেখা গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আশা করছে, এ বছর ৪৭ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে এক কোটি ৮৭ লাখ মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদিত হবে। আর এই পরিমাণ ধান উৎপাদনে কৃষককে অতিরিক্ত দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকা বেশি ব্যয় করতে হবে। হিসাব অনুযায়ী, আগামী দুই মাসের মধ্যে সেচ বাবদ এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা ও ইউরিয়া সার বাবদ ৬০০ কোটি টাকা খরচ করতে হবে।
খরচ বাড়লেও ধানের দাম কিন্তু বাড়েনি, উল্টো কমেছে। প্রতি মণ ধান গত বছরের একই সময়ে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। এ বছর বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭৫০ টাকায়। এপ্রিলে ধান কাটা শুরু হলে ধানের দাম সাধারণত ১০০ থেকে ২০০ টাকা কমে যায়। দামের এই হাল অব্যাহত থাকলে কৃষকের জন্য ন্যায্যমূল্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা।
আলু বিক্রি করে খরচ ওঠাতে না পেরে এমনিতেই এখন কৃষকেরা দিশেহারা। তাঁদের সামনে এখন বড় দুশ্চিন্তা বোরো। আলু নিয়ে বেহাল পরিস্থিতি যাতে বোরোতে না হয়, সে জন্য সরকারকে এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদেরা।
বোরোর খরচ বাড়ার সম্ভাব্য ওই হিসাব তুলে ধরে বিএডিসির কৃষি, পরিবেশ ও পানি প্রকৌশলী ইফতেখারুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, এখনো কৃষকেরা জমিতে সেচ বাবদ ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পানি অতিরিক্ত ব্যবহার করেন। ইউরিয়া সারের ব্যবহারও প্রয়োজনের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি। এই দুটি উপাদানের দাম বাড়ায় এগুলোর অতিরিক্ত ব্যবহার কমবে। এতে পর্যায়ক্রমে উৎপাদন বাড়বে ও খরচ কমবে। তবে শেষ পর্যন্ত কৃষক লোকসান না লাভ করবেন, তা নির্ভর করছে ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার ওপর।
কৃষকের যাতে লোকসান না হয় সে জন্য বোরো ধান ওঠার আগেই আগাম দাম নির্ধারণ করে সরকারি সংগ্রহের পুরোটাই কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি কেনার পরামর্শ দিয়েছেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক ড. মাহবুব হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্বজুড়ে খাদ্যের দাম আবারও বাড়তির দিকে। ফলে উচ্চমূল্যে বিদেশ থেকে আমদানির চেয়ে কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাল কিনলে ধানের দাম কৃষকের প্রত্যাশার মধ্যে থাকবে।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বোরো ধানের মাঠ পর্যায়ের অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। কৃষক যাতে লোকসানের মুখে না পড়েন, সে জন্য সরকার সচেষ্ট। সরকারি সংগ্রহের বেশির ভাগই অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সংগ্রহের ব্যাপারেও সরকারের পরিকল্পনা আছে।’
২০০৯ সালের কৃষিশুমারি অনুযায়ী, দেশে কৃষক পরিবারের সংখ্যা এক কোটি ৮০ লাখ। এদের মধ্যে এক কোটি ২০ লাখ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি। এই কৃষক পরিবারগুলোর সদস্য প্রায় ছয় কোটি। তাদের মোট জমির পরিমাণ মাথাপিছু দুই বিঘা। সুতরাং বোরো চাষে যে অতিরিক্ত দুই হাজার কোটি টাকা খরচ বাড়বে, তার বোঝা ওই ছয় কোটি কৃষক পরিবারের সদস্যের ওপরে পড়বে।
কোথায়, কীভাবে খরচ বাড়বে: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, বোরো চাষের ৪৭ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র থেকে পানি দেওয়া হয় ৩৪ লাখ হেক্টর জমিতে। গত বছর বোরোর সময়ে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ছিল ৪০ টাকা। গত এক বছরে তিন দফা প্রতি লিটারের দাম বেড়ে হয়েছে ৫৬ টাকা। এই হিসাবে প্রতি বিঘা (৩০ ডেসিমেল) জমিতে এক বছর আগে ডিজেল লাগত দুই হাজার টাকার, এবার লাগবে দুই হাজার ৬০০ টাকার।
কৃষকেরা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন ইউরিয়া সার। গত বছর প্রতি কেজি ইউরিয়ার দাম ছিল ১২ টাকা। এবার তা বেড়ে কৃষক পর্যায়ে হয়েছে ২২ টাকা। বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১১-১২ অর্থবছরের জন্য ৩০ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বোরোতে ব্যবহূত হবে ২০ লাখ টন। সুতরাং ব্যয় বাড়ছে সারের ক্ষেত্রেও।

No comments

Powered by Blogger.