তিন বছরে সেতুর পিলারও হয়নি, ঘটছে দুর্ঘটনা by জহিরুল ইসলাম খান

ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার পান্তাপাড়া এলাকায় একটি সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর। ২০১০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিল।
কাজ শেষ হওয়া তো দূরের কথা, গত তিন বছরে সেতুর পিলারও তৈরি হয়নি।


সেতু তৈরি না হওয়ায় যানবাহনগুলোকে সেতুর পাশ দিয়ে নিম্নমানের ভাঙাচোরা বিকল্প ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক দিয়ে যেতে হচ্ছে। এতে প্রায়ই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা।
সর্বশেষ গত শুক্রবার ওই সড়ক দিয়ে নামার সময় মাটি সরে গিয়ে একটি বাস পাশের খালে পড়ে উল্টে যায়। এতে বাসের ১৫ জন যাত্রী নিহত এবং আহত হয় অন্তত ৩৫ জন। এর আগে পাঁচবারের বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় ছয়জন। প্রায়ই ওই সড়কে যানবাহন নষ্ট হয়ে বা আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
শুক্রবারের দুর্ঘটনায় আহত বাসযাত্রী লিয়াকত হোসেন প্রথম আলোকে জানান, বাসে অতিরিক্ত যাত্রী ছিল ঠিকই। কিন্তু সেতুর পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বাসের বাঁ দিকের চাকার নিচের মাটি সরে গিয়ে বাসটি উল্টে খালে পড়ে যায়। সেতুটি এত দিনে তৈরি হলে অথবা পাশের রাস্তাটি ভালো হলে হয়তো এই দুর্ঘটনা ঘটত না।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, পান্তাপাড়া এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত পুরোনো সেতু ভেঙে ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর সেখানে নতুন সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। যাতায়াতের জন্য সেতুর পাশে বিকল্প সড়ক তৈরি করা হয়। কাজ শুরুর পর শুধু সেতুর পিলারের ভিত্তিমূল তৈরি করা হয়েছে।
কালকিনি পৌর এলাকার কেষ্টনগরের বাসিন্দা ইস্রাফিল শেখ বলেন, সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার এক বছর পার হলেও সেতুটি তৈরি হয়নি। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে বিকল্প সড়ক তৈরি করা হয়েছে। এতে প্রায়ই ওই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে।
যোগাযোগ করলে মাদারীপুর সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান বলেন, পান্তাপাড়া এলাকায় মহাসড়কের ওপর ওই সেতুর নির্মাণ-ব্যয় দুই কোটি ৫৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। কাজ শেষ করার মেয়াদ ছিল ২০১০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। পরে আগামী ২০ জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম রূপসা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। ঠিকাদার হলেন কালকিনির মীর মামুন।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ঠিকাদার মীর মামুন বলেন, ‘সেতুটি তৈরির কাজ আমার নয়। এই কাজের ঠিকাদার চরমুগরিয়া এলাকার মোহাম্মদ নাঈম।’
ঠিকাদার নাঈম বলেন, ‘এই কাজ আমার নয়। এই কাজ করছেন যুবদলের নেতা নূরুল ইসলাম (লেলিন)।’
জানতে চাইলে জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি নূরুল ইসলাম জানান, ‘রূপসা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মালিক খুলনার মোহাম্মদ আলী। কাজটি মূলত তাঁর। তাঁর কাজটিই কালকিনির মীর মামুন, চরমুগরিয়ার নাঈম ও আমি করছি।’
কাজ বন্ধের ব্যাপারে কোনো জবাব দিতে পারেননি নূরুল। তিনি বলেন, ‘সেতুটি আগে বরিশাল অঞ্চল সওজের আওতায় ছিল। পরে তা গোপালগঞ্জ সওজের আওতায় নেওয়া হয়। এ কারণে সেতুর বিল নিয়ে জটিলতায় অনেক দিন কাজ বন্ধ ছিল।’

No comments

Powered by Blogger.