এডিপি বাস্তবায়ন-উন্নয়নের স্বার্থেই শতভাগ হওয়া দরকার

এডিপির আকার এবারও কমাতে হচ্ছে। পরিমাণও কম নয়। এখনই সিদ্ধান্ত হয়েছে, এডিপি থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা কমাতে হবে। সরকারের এই ব্যর্থতা নতুন কিছু নয়। প্রতিবছরই এডিপিতে কাঁচি না চালিয়ে সরকারগুলো যেন চলতে পারে না।
স্বাধীনতা লাভের পর থেকে এ বছর পর্যন্ত এমন কোনো একটি বছর গেল না, যখন এডিপি কাটছাঁট করতে হয়নি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে কাঁচি চালানোর কাজটিকে তাই ধারাবাহিক বলেই মনে হয়। কারণ বিশ্লেষণ করলেও সেই শুরু থেকে আজ পর্যন্ত একই অবস্থা পরিলক্ষিত হবে। এডিপি প্রণয়ন করলেও কর্মপরিকল্পনা এমনভাবে নেওয়া হয়, যার ফলে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হয় না প্রকল্পগুলোর। অর্থ বরাদ্দ দেওয়া আর কর্মসূচি বাস্তবায়ন এক কথা নয়। এটা প্রমাণিত হয়, যখন দেখা যায়, প্রকল্প পরিচালকদের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার ঘাটতি হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। এখানেও সরকারের অদূরদর্শিতা কাজ করে। দেখা যায়, রাজনৈতিক পরিচয়ের ওপর ভিত্তি করে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করা হয়। ফলে তারা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও নিজেদের দায়বদ্ধতাকে পাশ কাটিয়ে যায়। সেখানে তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। ফলে কর্মসূচি বাস্তবায়নের প্রয়োজনে নিয়মবহির্ভূত অনেক কিছুই তাদের করতে হয়। এমনকি কোথাও কোথাও দুর্নীতির অভিযোগও শোনা যায়। এটা প্রধানত হয় টেন্ডারবাজির মাধ্যমে।
উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য বাংলাদেশের মতো গরিব দেশটিকে বৈদেশিক সহযোগিতার ওপর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্ভর করতে হয়। এ বিষয়ে জাতীয় সংসদেও বেশ আলোচনা হয়ে থাকে। সরকারি দলও এ কথা স্বীকার না করে পারে না। কিন্তু নিরুপায় এই গরিব দেশ। এ দেশকে হাত পাততে হয় বিদেশের কাছে। কিন্তু সেই অর্থপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে যেসব শর্ত দাতারা আরোপ করে, সেগুলো মেনে চলতে গেলে অহেতুক সময়ক্ষেপণ হয়। পরিণতিতে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না।
আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় করতে গিয়ে হয়রানির মুখে পড়তে হয়। ফাইলপত্র চালাচালি করে অর্থ ছাড় করাতে গিয়ে বছর শেষ হয়ে যায়। ফলে কাজ করতে হয় দায়সারা গোছের। এই প্রক্রিয়ার কারণে বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে যেটুকু কাজ করা হয়, তাও হয় নিম্নমানের। এই সময় প্রকল্প বাস্তবায়নকারীদের সামনে উদ্দেশ্য থাকে স্বল্প সময়ের মধ্যে অর্থ ব্যয় করে ফেলা। কাজ কী হলো, তা দেখার মতো সময় এবং মানসিকতাও থাকে না তাদের। ফলে অর্থ ছাড় করিয়ে আনতে পারলেও প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না।
এমন পরিস্থিতিতে তাই সবার আগে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন করতে হবে, সরকার এবং উন্নয়ন সহযোগীদের ক্রয়নীতি সহজ করতে হবে, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে, দুর্নীতি কমিয়ে আনতে হবে, পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগকে আরো শক্তিশালী করতে হবে, প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.