শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন সময়ের দাবি

সরকার সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তা হচ্ছে উচ্চ আদালতের রায় এবং রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে। এর ওপর জনরায়ও আছে। সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে আগে থেকেই বিভিন্ন মহল থেকে দাবি-দাওয়াও ছিল। দাবি এসেছিল পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকেও।


নৃতাত্তি্বক জনগোষ্ঠী কিংবা আদিবাসী, যে নামেই পরিচয় দেওয়া হোক না কেন, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসার ব্যবস্থা করতে হবে এখনই। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে তারা যাতে রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ-সুবিধা পায়, তাদের অধিকার যাতে সংবিধানে নিশ্চিত করা হয়, সেই কাজটি করতে হবে রাষ্ট্রকেই। আর সে জন্যই বিষয়টি সংবিধানভুক্ত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই পাহাড়ের মানুষ তাদের পরিচয় সংকট নিরসনে রাষ্ট্রের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সংগত কারণেই তাদের দাবিগুলো নিয়ে তারা আবার সোচ্চার হয়েছে। এর কারণও আছে। এই সরকারই ১৯৯৭ সালে পাহাড়ের মানুষের শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য শান্তিচুক্তি সম্পাদন করেছিল। এই সরকার আন্তরিকভাবেই চায়, দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মানুষ যেন তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়।
তারা পাহাড়ে থাকে বলে মূল ভূখণ্ডের মানুষের সঙ্গে তাদের কোনো ভেদরেখা টেনে দেওয়ার সুযোগ নেই। এটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিকও বটে। পাহাড়ের মানুষকে আস্থায় আনার জন্য শান্তিচুক্তি সম্পাদন করাটা ছিল একটি ঐতিহাসিক উদ্যোগ। সেই চুক্তিরও সামান্যই এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়েছে। সরকারের উচিত শান্তিচুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের পাশাপাশি সংবিধানে তাদের স্বীকৃতি প্রদান করা।
আমরা জানি, তাদের সংবিধানে স্বীকৃতি না দেওয়াটা যে ভুল পদক্ষেপ ছিল, তা সংবিধান প্রণয়নকালে যাঁরা নেতৃত্বে ছিলেন, তাঁরাও স্বীকার করেন। আর সেই ভুলের খেসারত জাতি হিসেবে আমাদের দিতে হয়েছে। এরই সূত্র ধরে পাহাড়ের অধিবাসীরা সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল। শান্তিচুক্তি সম্পাদনের পর পাহাড়ে সশস্ত্র সংগ্রাম বন্ধ হয়ে যায়। পাহাড়ি মানুষ ঘরে ফিরেছে ঠিকই, কিন্তু তাদের মধ্য থেকে অস্থিরতা কেটে গেছে_এমন কথা বলা যাবে না। আর এই অস্থিরতা থেকেই যদি সহিংস কোনো ঘটনা ঘটে যেতে থাকে, তাহলেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।
দীর্ঘদিন ধরে ফুঁসে ওঠা অনাকাঙ্ক্ষিত যে দ্বন্দ্ব, তা নিরসন করতে হলে সাংবিধানিকভাবে তার সমাধান অপরিহার্য। কারণ দেশের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকেই সমান অধিকার ভোগ করবে_এটা সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা এবং আমাদের সংবিধানেরও মূল প্রতিপাদ্য। এ পরিস্থিতিতে পাহাড়ের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে রাষ্ট্রকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.