বিজিবির জবাবদিহি নিশ্চিত করুন-চিনি ও সার চোরাচালান

চিনির জন্য দেশের মানুষের হাহাকার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নানা তৎপরতা ও কথাবার্তার মধ্যে বড় খবর হচ্ছে, দেশের চিনি চোরাইপথে পাচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে। শুধু চিনি নয়, পাচার হচ্ছে ইউরিয়া সারও। বৃহস্পতিবারের প্রথম আলোয় এ সম্পর্কে এক বিশদ প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে।


চিনি ও সারের বেশির ভাগ টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পাচার হয়ে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে। মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে চিনি ও সারের চাহিদা ব্যাপক, দাম বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে চোরাচালান হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য খবর হলো, রমজান মাস উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের আরাকানে বিশেষ করে চিনি চোরাচালানের মাত্রা বেড়ে গেছে। কারণ, দেশটির ওই অঞ্চলে প্রচুরসংখ্যক মুসলমানের বাস, রমজান মাসে তাদের চিনির চাহিদা বেড়েছে।
অর্থনীতির সাধারণ নিয়মে বলে, পণ্য ছোটে সেই দিকে, যেখানে তার দাম বেশি। কিন্তু পণ্যের এই ছোটা যখন দেশের প্রচলিত আইনকানুন লঙ্ঘন করে ঘটে, তখন সেটা হয় চোরাচালান। এই অপরাধ দমনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ ও বাহিনী থাকে। আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) যদি এ ক্ষেত্রে যথাযথ দায়িত্ব পালন করত, তাহলে এত ব্যাপক মাত্রায় চোরাচালান সম্ভব হতো না। ছোট-বড় মুদির দোকানের মালিক ও পাচারকারীদের যোগসাজশে প্রতিদিন কীভাবে চিনি টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারে পাচার হয়ে যাচ্ছে, সারের খুচরা ডিলাররা নিজ নিজ দোকানে ‘সার নাই’ বলে কৃষকদের ফিরিয়ে দিয়ে কীভাবে চোরাকারবারিদের হাতে সার তুলে দিচ্ছেন, তার বিবরণ পাওয়া যায় প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে। এলাকার সব মানুষ চিনি ও সার চোরাচালানের কথা জানে, কিন্তু সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা কি তা জানেন না? যোগসাজশটা কি শুধু চিনি ও সারের ডিলার আর চোরাকারবারিদের মধ্যেই? নাকি বিজিবির একশ্রেণীর সদস্যও এর সঙ্গে জড়িত? মাঝেমধ্যে তাঁরা চোরাচালানের সময় চিনি ও সার আটক করেন, কিন্তু চোরাকারবারি ধরতে পারেন না, নাকি ধরেন না?
গত বুধবার জাতীয় চোরাচালান প্রতিরোধ কমিটির সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছেন, চোরাচালান প্রতিরোধ আইন সংশোধন করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হবে। গুরুতর কথা বটে। কিন্তু তার আগে দেখা উচিত, বিদ্যমান আইনে যে শাস্তি রয়েছে, তা কতটা নিশ্চিত করা হয়। কঠোর আইন করলেই সমস্যার সমাধান হয় না, আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করাই মূল কথা। চোরাচালান রোধে বিজিবির জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.