বুড়িগঙ্গা-একটি সুসংবাদ

অন্তহীন সমস্যায় জর্জরিত ঢাকার পরিস্থিতি অনেকটা এমন যে, সর্বাঙ্গে ব্যথা ওষুধ দেব কোথা? বিশেষজ্ঞদের কাছেও এটি এক বড় প্রশ্ন। কোথা থেকে শুরু করতে হবে। ঢাকা নগরীর পত্তন ঘটেছিল বুড়িগঙ্গা তীরে। আজ সে নগরী ফুলেফেঁপে বড় হয়েছে। দশদিকে প্রসারিত এ বিশাল নগরী অন্তহীন সমস্যায় আকীর্ণ। সমস্যা থেকে বের হওয়ার জন্য চাই উদ্যোগ।


আর সে উদ্যোগের শুরুটা হতে হবে বুড়িগঙ্গার তীর থেকেই। বিশেষজ্ঞদের মত এমনই। ঢাকা নগরী চারশ' বছরের প্রাচীন। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে গড়ে উঠলেও গত চারশ' বছরে নগরীটি বুড়িগঙ্গাকেই সবচেয়ে বেশি কলুষিত করেছে। নদীর তীরে গড়ে ওঠা পৃথিবীর সব নগরী যেখানে যত্নে লালিত, সৌন্দর্য ও স্বস্তির আধার সেখানে বুড়িগঙ্গা পরিণত হয় ভাগাড়ে। নগরীর বর্জ্য ফেলার জায়গা, স্যুয়ারেজের লাইনগুলো বুড়িগঙ্গার দিকেই ধাবিত হয়েছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, এ নদীর অক্সিজেন নিঃশেষ হওয়ার আগে, নদীর প্রাণসম্পদ বিলুপ্ত হওয়ার আগে, নদীটির নাব্যতা তলানিতে এসে ঠেকার আগে, পানি ব্যবহার অনুপযুক্ত হওয়ার আগে আমাদের সম্বিত ফেরেনি। ফলে বুড়িগঙ্গা নতুন প্রজন্মের কাছে কোনো নদী নয়, ময়লার ভাগাড়। মানববর্জ্য, কারখানার বর্জ্য এ নদীকে সর্বস্বান্ত করেছে। শুধু বর্জ্য বা নানাবিধ দূষণই শেষ কথা নয়_ সুবিধাভোগী দখলদারদের রুদ্র রোষের শিকার হয়েছে নদীটি। নদীর পাড় দখল করে অবৈধ স্থাপনা তৈরি হয়েছে। প্রতিনিয়ত চলছে নিত্যনতুন দখল-দূষণের পাঁয়তারা। শুধু বুড়িগঙ্গা নয়, ঢাকার আশপাশের সব নদীই এখন কমবেশি দখল-দূষণে নাস্তানাবুদ। এমন অবস্থা থেকে নদী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা কঠিন। সন্তোষজনক উদ্যোগ খুব বেশি আছে তা-ও নয়। তবু অতিসম্প্রতি কিছু উদ্যোগ এসেছে। দৃশ্যমানভাবে বুড়িগঙ্গার খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি। তবু সামান্য হলেও একটি সুসংবাদ আছে। তা হলো, বুড়িগঙ্গার পানিতে অক্সিজেন শূন্যের কোঠা থেকে বাড়তে শুরু করেছে। এখন অক্সিজেনের পরিমাণ বিভিন্ন পয়েন্টে বাড়ছে। গত বছরও যেখানে পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন ছিল শূন্য এমজি, এখন তা কোথাও এক হাজার, কোথাওবা দুই হাজার এমজি হয়েছে। সরকারের উদ্যোগ, দাতা সংস্থার সহযোগিতা, গণমাধ্যমে ধারাবাহিক তাগিদ, নাগরিকদের দাবির ফলে এ অগ্রগতি। আমরা মনে করি, এ অগ্রগতিটুকু সামান্য হলেও তাৎপর্যপূর্ণ। বুড়িগঙ্গায় প্রাণসম্পদের চলাচল স্বাভাবিক করতে, পানিকে ব্যবহার উপযুক্ত করতে আরও অনেক উদ্যোগ নিতে হবে। নদীকে দখলমুক্ত করতে হলে কঠোর উদ্যোগ নিতে হবে। দূষণমুক্ত করতে দূষণের সব উৎস বন্ধ করতে হবে। এ কাজটিও কঠিন। নগরীতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই সেকেলে, এ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো দরকার। অতিসত্বর নবায়নযোগ্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু হওয়া দরকার। পাশাপাশি কারখানার বর্জ্য যাতে নদীতে পড়তে না পারে সে জন্য আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে ভবিষ্যতে যদি বুড়িগঙ্গা তার প্রকৃত রূপে ফিরতে পারে, যদি এ নদীর তীরে নগরবাসী ভ্রমণ করতে যেতে পারে, যদি এ নদীর তীরে আবার সবুজের ছোঁয়া লাগে তাহলে সেটিই হবে চূড়ান্ত স্বস্তির খবর।
 

No comments

Powered by Blogger.