শিক্ষা বিস্তার-সেবার অনুকরণীয় আদর্শ

তবুও আশা আছে। দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন ও অবক্ষয় যখন সমাজের নানা স্তরকে আকীর্ণ করে ফেলে, এ সমাজ পতনের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে আসতে পারবে না_ এ দুর্ভাবনা যখন তীব্র হয়ে ওঠে, তখনও গুহার শেষ প্রান্তে আলোর রেখা দেখা দেয়। নিরাশার অভিযাত্রায় আলো জ্বালিয়ে রাখেন কিছু সাধারণ মানুষ। অনেক ক্ষেত্রে অতি সাধারণ মানুষ।


যদি প্রশ্ন করা হয়, এত অনিয়ম, অনিচ্ছা, দুর্নীতির মধ্যেও বাংলাদেশের অগ্রগতির কারণ কী? তবে তার অন্যতম কারণ হতে পারে অগণিত সাধারণের সম্মিলিত শক্তি। এই শক্তিই আমাদের সম্মুখগতির আলোকিত প্রেক্ষাপট রচনা করে দেয়। আশ্বস্ত হওয়ার মতো খবর হলো, এদেশের অধিকাংশ মানুষকে এখনও স্পর্শ করেনি ক্লেদ, ক্লান্তি ও গ্গ্নানি। এই বিপুল সাধারণের সর্বতো চেষ্টার ওপর দাঁড়িয়ে আছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। এই সাধারণের মধ্যে বিরাজ করছে অসাধারণ মানুষও। তারা নিজেদের শুভবোধ ও সেবার আদর্শ দিয়ে এগিয়ে নিচ্ছেন আমাদের সমাজকে। এ মানুষগুলোর বিন্দু বিন্দু প্রচেষ্টায় অন্ধকারে আলো জ্বলে উঠছে। শনিবারের সমকালে 'ঈশ্বরদীর তাহেরুল দম্পতি ছড়াচ্ছেন জ্ঞানের আলো' খবরটি যারা পড়েছেন তারা একবাক্যেই বলবেন, তবুও আশা আছে। আছে আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাও। ৩৯ বছর নানা স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন তাহেরুল দম্পতি। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা নিয়ে অবসর নিয়ে ফিরেছেন গ্রামে। কিন্তু গ্রামে ফিরে অবসরযাপনের কথা ভাবেননি তারা। বরং গ্রামের শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। অর্থাভাবে যে শিশুরা স্কুলে যেতে পারে না তাদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন বিনামূল্যের শিক্ষালয়। গরিব পরিবারের সন্তানদের শিক্ষাদানের কাজ শুরু করেছেন, সন্তানস্নেহে তাদের গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন। অনেক শিশুকে ভর্তি করে দিয়েছেন স্কুলে। তাদের এ কর্মোদ্যোগ এলাকায় সৃষ্টি করেছে দারুণ উদ্দীপনা। যে শিশুরা একদা স্কুলে যাওয়ার কথা চিন্তা করত না তারা আর শুধু স্কুলে যায় না, তাহেরুল দম্পতির তত্ত্বাবধানের কারণে এখন মেধাবী শিক্ষার্থী বলে বিবেচিত হয়। তাদের এ উদ্যোগ এলাকায় শিক্ষার এক অনন্য বাতাবরণ সৃষ্টি করেছে। মানুষ সচেতন হয়েছে। পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে প্রত্যন্ত গ্রামেও। জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার এমন উদ্যোগ শুধু প্রশংসনীয় নয়, অনুকরণীয়ও বটে। আমাদের সমাজে বহু মানুষ অবসর গ্রহণ করেন_ অবসরযাপনের জন্য আরাম-আয়েশের ব্যবস্থাও থাকে যথেষ্ট। কিন্তু এ আরাম-আয়েশের অধিকাংশ ব্যবস্থাই নিঃসঙ্গ ও নাগরিক। খুব কম ক্ষেত্রেই অবসরযাপনকারীরা গ্রামে ফিরে যান। এক্ষেত্রে তাহেরুল দম্পতি ব্যতিক্রম। সন্তান-সন্ততিরা নিজেদের সংসার পেতেছে, তাহেরুল দম্পতিও নিঃসঙ্গ নাগরিক জীবনের আয়েশ বেছে নিতে পারতেন; কিন্তু তা না করে তারা বেছে নিয়েছেন সেবার কর্মপন্থা। ছোট শিশুদের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়ানোর কাজ নেওয়ার ফলে পরিণত বয়সের একাকিত্বের স্থান নেই তাদের জীবনে। নিজেদের ছড়ানো আলো_ আলো জুগিয়েছে তাদের জীবনেও। সেবার এমন আদর্শ বাংলাদেশে বিরল নয়। কিন্তু এ আদর্শ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া দরকার। এমন অনেক উদাহরণ তৈরি হলে আমাদের সমাজে অন্ধকার আর কখনও দানা বাঁধতে পারবে না। পরোপকার ও সেবার এমন উদাহরণ তৈরি হোক_ সমাজ আবার জেগে উঠুক। তাহেরুল দম্পতির উদাহরণ অনুপ্রাণিত করুক সবাইকে।

No comments

Powered by Blogger.