আলোর ইশারা-ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা চাই by আইনুন নিশাত

ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান যদি স্বল্প হারে অর্থ পেত তাহলে তারাও সার্ভিস চার্জ কমাতে পারত। প্রশ্ন হতে পারে, ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতারা সঞ্চয়ীর ভূমিকাও পালন করে থাকে এবং ওই সঞ্চয়ই ঋণ প্রদানে ব্যবহৃত হতে থাকে। কথাটা সত্যি। তবে মনে রাখতে হবে, সঞ্চয়ের ওপর তারা মুনাফা পেয়ে থাকেন।
অর্থাৎ সুদের হারই বলেন আর সার্ভিস চার্জই বলেন, উঁচু হার ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাকে কোনোভাবেই নিরুৎসাহিত করে না


কয়েকদিন আগে একটি সেমিনারে গিয়েছিলাম। বিষয়টি ছিল মাইক্রো-ফাইন্যান্স বা ক্ষুদ্র অর্থায়ন সংক্রান্ত। ক্ষুদ্রঋণ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি অর্থায়ন নিয়ে বহু গবেষণা হয়েছে, বহু লেখালেখি হয়েছে। আমি এই ছোট লেখায় ক্ষুদ্র অর্থায়ন বা মাইক্রো-ফাইন্যান্স এবং ক্ষুদ্রঋণ বা মাইক্রোক্রেডিট একত্রিতভাবে দেখছি এবং সমগ্র বিষয়টিকে ক্ষুদ্রঋণ বলেছি।
বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণ বিষয়টি সমগ্র বিশ্বে নন্দিত হচ্ছে। অমর্ত্য সেন প্রমুখরা ঢোল পিটিয়ে বন্দনা করছেন। ভারত ও পাকিস্তানে সরকারিভাবে এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানানো তো বটেই, সহায়তা করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মুখে নিন্দার ঝড় শুনেছি। সরকারিভাবে ক্ষুদ্রঋণকে সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে। পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নির্বাচিত এনজিওদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে অর্থ জোগান দিয়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এ ব্যাপারে তার উৎসাহ এবং আগ্রহ জোরের সঙ্গে বলে থাকেন। বলা যায়, তিনি বাধ্য করেছেন সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ঋণ (এসএমই) প্রদান করতে। আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের এ উদ্যোগের সমর্থনে বহু ঘরোয়া বৈঠকে তার পক্ষে কথা বলেছি।
যারা ক্ষুদ্রঋণের তীব্র নিন্দুক, তাদের কথাও অনুধাবন করতে চেষ্টা করেছি। অবশ্যই তাদের কথায় গাণিতিক হিসাব-নিকাশের জোর রয়েছে। তারা বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বারবার প্রমাণ করেছেন যে, ক্ষুদ্রঋণের চাপে বহু দরিদ্র গ্রামবাসী ঘরবাড়ি বিক্রি করে শহরে পালিয়ে চলে এসেছেন। কারণ, কিস্তির বোঝা তারা সইতে পারছেন না। অর্থাৎ বিরোধীদের দুটি বড় যুক্তি তাদের নিন্দার ভিত্তি স্থাপন করে। একটি হচ্ছে, সুদের উঁচু হার এবং অন্যটি হচ্ছে ক্ষুদ্রঋণের চক্রে ঋণগ্রহীতার সর্বস্বাস্ত হওয়া। এর সঙ্গে তারা আরও একটি অভিযোগ করে থাকেন যে, ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে বহু এনজিও প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মুনাফা পকেটস্থ করে ফুলে-ফেঁপে কোটিপতি হয়েছেন।
যে সেমিনারের কথা বলছিলাম, সেখানে যাওয়ার আগ্রহ ছিল এই বিষয়গুলোতে ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনাকারীদের বক্তব্য ও উত্তর পাওয়ার আশা। আগেই বলেছি, পক্ষের এবং বিপক্ষের বিশেষজ্ঞদের কথা সুদীর্ঘ বহু প্রবন্ধে প্রকাশিত হয়েছে। আমার মতো সাধারণ মানুষের কাছে সমালোচনার ভিত্তি বেঠিক মনে হয়নি। অন্যদিকে পক্ষে যারা কথা বলেন, তাদের যুক্তিও পছন্দ হয়েছে। আমি আমার এই কনফিউশনের কিছু উত্তর খুঁজে পেয়েছি। সেটি আজকে সাধারণ পাঠকের সঙ্গে শেয়ার করছি।
ওই সভায় জানলাম, বাংলাদেশে দুই কোটির বেশি পরিবার ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণ করে থাকে। তারা এই ঋণের বিপরীতে বছরে ১০০ টাকায় ১২ থেকে ১৫ টাকা সার্ভিস চার্জ দিয়ে থাকে এবং তা ৪৬ থেকে ৪৮ সপ্তাহে সমান কিস্তিতে পরিশোধ করে। অর্থাৎ একজন ঋণগ্রহীতা পাঁচ হাজার টাকা গ্রহণ করলে তাকে ৭৫০ টাকা সার্ভিস চার্জ পরিশোধ করতে হয়। অর্থাৎ সব মিলিয়ে তাকে ৫ হাজার ৭৫০ টাকা শোধ করতে হয়। ৪৬ কিস্তিতে শোধ করলে তাকে প্রতি সপ্তাহে ১২০ টাকা শোধ করতে হয়। অর্থাৎ প্রথম সপ্তাহে প্রদত্ত টাকার মধ্যে অল্প পরিমাণ হলো সুদ আর কিছু পরিমাণ মূলধন। অর্থাৎ পরের সপ্তাহগুলোতে মূলধনের ওপর যে সার্ভিস চার্জ দিচ্ছি, তা অবশ্যই পাঁচ হাজার টাকার কম। গাণিতিকভাবে হিসাব করলে, ১০০ টাকায় ১৫ টাকা সার্ভিস চার্জের হিসাবে এক বছরে যা শোধ করা হলো, তা শতকরা ২৪ থেকে ২৮ টাকা সুদে পরিণত হয়। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মতে, এটা শতকরা ৪০ টাকা মাত্রায়ও নাকি পেঁৗছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যেখানে ১২-১৩ শতাংশ হারে ঋণ প্রদান করে থাকে, সেখানে ২৫-৩০ শতাংশ হারে কীভাবে চালু আছে? আমার এই চিন্তার উত্তর ওই সেমিনারে পেয়েছি। বর্তমানে প্রচলিত হারে পাঁচ হাজার টাকা নিলে এক সপ্তাহে ঋণগ্রহীতাকে ১২০ টাকা দিতে হয়। যদি ওই সুদের হারকে বাণিজ্যিক হারে নামিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে হয়তো সপ্তাহের কিস্তি হবে ১১৮ কিংবা ১১৯ টাকা। একজন দরিদ্র গ্রামবাসীর কাছে সপ্তাহে ওই এক টাকা বেশি দেওয়া বনাম প্রয়োজনের সময় বা তাৎক্ষণিকভাবে ঋণ পাওয়া_ কোনটি গুরুত্বপূর্ণ। কোনো জামানত ছাড়া এবং সহযোগী গ্রামবাসীর পরিচিতির ভিত্তিতে প্রয়োজনের সময় ক্ষুদ্রঋণ তার জন্য কতটা সুফল বয়ে আনে, এটি কেবল ঋণগ্রহীতাই জানে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বড় ব্যাংকগুলো যদি ১৩-১৪ শতাংশ হারে ঋণ দিয়ে বিরাট মুনাফা করতে পারে, তাহলে ক্ষুদ্রঋণ লগি্নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কেন এত উঁচু হারে চার্জ করছে? উত্তরটি হচ্ছে, ঋণের আকারের ওপর। ঋণগ্রহীতার কাছে ঋণ পেঁৗছে যায় ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রে। ঋণের আকার হচ্ছে ৫-১০ বা ১৫ হাজার। কাজেই ব্যবস্থাপনার খরচ অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান যদি স্বল্প হারে অর্থ পেত, তাহলে তারাও সার্ভিস চার্জ কমাতে পারত। প্রশ্ন হতে পারে, ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতারা সঞ্চয়ীর ভূমিকাও পালন করে থাকে এবং ওই সঞ্চয়ই ঋণ প্রদানে ব্যবহৃত হতে থাকে। কথাটা সত্যি। তবে মনে রাখতে হবে, সঞ্চয়ের ওপর তারা মুনাফা পেয়ে থাকেন। অর্থাৎ সুদের হারই বলেন আর সার্ভিস চার্জই বলেন, উঁচু হার ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাকে কোনোভাবেই নিরুৎসাহিত করে না।
একজন দরিদ্র গ্রামবাসী যদি সরকারের বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে কিংবা বিআরডিবির মাধ্যমে খুব সহজে ঋণ পেত, তাহলে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী এনজিওগুলোকে পাততাড়ি গোটাতে হতো।
এবারে আসি ঋণের দায়ে যারা সর্বস্বান্ত হচ্ছেন, তাদের কথায়। এরা কারা? এরা হচ্ছেন যারা একসঙ্গে একাধিক সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন। কেন তারা এ কাজটি করছেন? দুটি কারণ হতে পারে। প্রথমত, তার যত টাকার প্রয়োজন ছিল, কোনো একটি সংস্থা তা দিতে রাজি হয়নি। দ্বিতীয়ত, কোনো কারণে প্রথম ঋণের টাকা বিশেষ প্রয়োজনে, যেমন_ চিকিৎসা বা বিবাহ সংক্রান্ত কারণে খরচ হয়ে গেছে এবং এই ঋণ পরিশোধ করতে আরেকটি ঋণ নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রথম ঋণ শোধের পেছনে দ্বিতীয় ঋণ চলে গেছে। দ্বিতীয়টি শোধ করতে গিয়ে নেওয়া হলো তৃতীয়টি। চক্রাকারে বাড়তে থাকে। অবশেষে ঘরবাড়ি বিক্রি করে দেশান্তরী।
এ সমস্যা মোকাবেলায় সরকারের যতটা দায়িত্ব রয়েছে, তার থেকে বেশি দায়িত্ব হচ্ছে ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলোর। তারা একটু যত্নবান হলে এ সমস্যা বহুলাংশে সমাধান করতে পারবেন। তাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি যে, যাতে কোনো একজন ঋণগ্রহীতা দুই বা ততোধিক সংস্থার কাছ থেকে সহজে ঋণ গ্রহণ করতে না পারে। এ জন্য প্রয়োজন সংস্থাগুলোর মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান। প্রয়োজন একটি কমন ডাটাবেজ। অর্থাৎ ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলো যদি গ্রামভিত্তিক বা ইউনিয়নভিত্তিকভাবে ঋণগ্রহীতাদের তথ্য জমা করে, তাহলে ঋণ প্রদানের কাজকে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে এবং বহু সংস্থার কাছে ঋণী_ এমন গ্রামবাসী সৃষ্টি হওয়ার কাজ বন্ধ করা যাবে।
দেশে যেখানে প্রত্যেক নাগরিকের ব্যক্তিগত পরিচিতি সংখ্যাসহ পরিচয়পত্র রয়েছে, সেহেতু কাজটি করা সম্ভব। ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনাকারী বড় বড় সংস্থা, অর্থাৎ গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক, আশা ও প্রশিকা হাত মেলালেই ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে যে ওভারল্যাপ আছে, তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
সরকার সম্প্রতি যে ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক রেগুলেটরি অথরিটি তৈরি করেছে, তাদেরও এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে পরামর্শ দিতে পারে। আলোচনায় শুনেছি, তারা ঋণের সুদ কিংবা সার্ভিস চার্জের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে চাচ্ছে। আমি মনে করি, নিয়ন্ত্রণের আগে জরুরি ওভারল্যাপিং বন্ধ করা।
এবারে আসি তৃতীয় বিষয়ে, অর্থাৎ লাভ হচ্ছে কী এবং লাভের টাকা কোথায় যাচ্ছে? এ বিষয়ে আমি মনে করি, স্বচ্ছতা আসা উচিত। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের হিসাবের কাগজপত্র যে কোনো অনুসন্ধিৎসু নাগরিকের জন্য প্রাপ্তব্য হতে হবে। ক্ষুদ্রঋণ প্রোগ্রাম চালানোর মাধ্যমে যুক্তিসঙ্গত খরচ বাদ দিয়ে যদি লাভ থাকে, তা কি করা হচ্ছে। সেটির গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা ও বর্ণনা সহজলভ্য হতে হবে এবং তা নিয়মিত প্রকাশ করতে হবে। ক্ষুদ্রঋণ সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেশের জন্য যে কোনো প্রতিষ্ঠান যে নিয়মে চলবে, তার থেকে পৃথকভাবে দেখার কোনো কারণ নেই। প্রতি বছর শেষে যতটুকু টাকা লাভ থাকে তার পুরোটাই যদি পরের বছরে পরবর্তী ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে বিতরণ করে দেওয়া হয়, তাহলে লাভের প্রশ্ন আসে না। কিন্তু প্রতিষ্ঠান পরিচালনাকারীরা যে টাকা এবং সুযোগ-সুবিধাদি এবং বেতন ও ভাতা হিসেবে নিয়ে থাকেন, তা স্বাভাবিকভাবেই আয়করের আওতায় আনা উচিত।
যে কথাগুলো লিখলাম, সেগুলো কোনোমতেই নতুন নয়। তবে ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থাপনা, এর সাফল্য ও ব্যর্থতা_ সব বিষয়েই খোলা মন নিয়ে পর্যালোচনার সময় এসেছে। ক্ষুদ্রঋণ থেকে প্রকৃতপক্ষে সমাজ কী পেয়েছে বা পাচ্ছে, তা তলিয়ে দেখা দরকার। ক্ষুদ্রঋণ কি কেবল ছোটখাটো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা বা হাঁস-মুরগি পালন কিংবা মাছের খামার স্থাপনে ব্যবহৃত হচ্ছে? কৃষিকাজে এর ভূমিকা কতটুকু? কৃষক বীজ কিনতে বা সেচযন্ত্রের ভাড়া দিতে কিংবা সময়মতো সার-কীটনাশক জোগান দিতে এটি ব্যবহার করেন? তার ছেলে কিংবা মেয়ের স্কুলের বেতন বা পোশাক কিনতে এটি কি কাজে আসে? অসুস্থতার সময় ক্ষুদ্রঋণের টাকা কি ব্যবহার হয়? চাকরি খুঁজতে ছেলে শহরে যাবে_ এ জন্য মা কি ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণ করেন? ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী সংস্থা মাঝে মধ্যে কসাইয়ের মতো ব্যবহার করে_ এর মাত্রা কতটুকু? ঋণ প্রদানের পর প্রদানকারী কতটুকু তদারক করেন_ ঋণগ্রহীতা কী করলেন সে বিষয়ে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর ঋণগ্রহীতার পরিশোধ ক্ষমতা হারিয়ে গেলে ঋণ প্রদানকারী কতটুকু নমনীয় ভাব গ্রহণ করে? এ ধরনের আরও অনেক প্রশ্ন করা যেতে পারে এবং এর সঠিক উত্তর পুরো বিষয়টিকে সঠিক রাস্তায় চালিত করার ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা দিতে পারে।
শেষ করার আগে একটি অভিজ্ঞতার কথা বলি। দেশের বাইরে এক সেমিনারে গেছি। এক সাহেব ক্ষুদ্রঋণ সম্পর্কে জানতে চাইলেন। যতটুকু জানি বললাম। তিনি সরাসরি প্রশ্ন করলেন, তোমার দেশের কতজন লোক ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে বড়লোক হয়েছে কিংবা দারিদ্র্যসীমা অতিক্রম করেছে? আমি তাকে বলেছিলাম, একশ' ডলার (বোধকরি সাত হাজার টাকা) গ্রহণ করে সেই টাকা খাটিয়ে তুমি বল, কতদিনে কোটিপতি হওয়া যাবে? সে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল অনেকক্ষণ। ক্ষুদ্রঋণ যে কত ক্ষুদ্র, তা বুঝতে তার সময় লেগেছে। তখন সে বলল, এ দিয়ে কী হয়? আমার উত্তর ছিল, ওই গরিব লোকটি প্রয়োজনের সময় এই অল্প টাকাতেই অনেক কিছু অর্জন করতে পারে। ক্ষুদ্রঋণে ক্ষুদ্র আয় হয়। আর তার আকাঙ্ক্ষা বড় থাকলে তাৎক্ষণিক চাহিদাও ক্ষুদ্র থাকে। সব ঋণগ্রহীতা হয়তো একভাবে সাফল্য পায় না। কিন্তু এদের অনেকেই ধীরে ধীরে এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে দারিদ্র্যের প্রচণ্ড চাপ একটু একটু করে কমাতে পেরেছে। কেউ কেউ দারিদ্র্যের সীমা পেরিয়ে উপরে উঠেছে, তারও নজির আছে। বিষয়টি ওই যৎসামান্য মূলধনের সহজ প্রাপ্যতাটুকু। সুদের হার কত হলো, এটির চেয়ে এর ব্যবস্থাপনার মধ্যে যেসব প্রশ্নবোধক চিহ্ন আছে, সেগুলো দূর করা যেতে পারে। ক্ষুদ্রঋণের বিষয়ে বিদেশিরা যতটা গবেষণা করেছে, দেশের ভেতরে হয়তো ততটা গবেষণা হয়নি। ক্ষুদ্রঋণের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতা প্রদান করাটাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। এবং এ কাজে এনজিওদের যতটা ভূমিকা থাকবে, সরকারের ভূমিকা তার থেকে বেশি হওয়া উচিত। সরকার যেখানে দুর্বল হয়, সেখানেই এনজিওরা শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত : পরিবেশ বিশেষজ্ঞ

No comments

Powered by Blogger.