হুমকির মুখে আবাসন শিল্পে কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ- গ্যাস, বিদ্যুতের অভাবে ২৫ থেকে ৩০ হাজার ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা যাচ্ছে না ॥ রিহ্যাবের চার দফা সুপারিশ

 নানাবিধ সঙ্কটে আবাসন শিল্পে চরম দুরবস্থা বিরাজ করছে বলে জানিয়েছে এ খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। সংগঠনটির মতে, হুমকির মুখে পড়েছে এ খাতের কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ।
এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ২২২টি শিল্পও আজ রুগ্ন হয়ে পড়েছে। গ্যাস, বিদ্যুতের অভাবে ২৫ থেকে ৩০ হাজার তৈরি ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা যাচ্ছে না। সংগঠনটির নেতারা বলছেন, গত চার বছরে এই শিল্পে কোন প্রবৃদ্ধি হয়নি। অপরদিকে, প্রায় ৩০ শতাংশ ব্যবসা হ্রাস পেয়েছে। তাঁরা বলছেন, আগে যেখানে বছরে ২০ হাজার ফ্ল্যাট তৈরি করা সম্ভব হতো, এখন তা নেমে ১৫ হাজারে এসেছে। আবাসন শিল্পকে বাঁচাতে অপ্রদর্শিত অর্থ এই খাতে বিনিয়োগ করার সুযোগ দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান রিহ্যাবের নেতারা।
শুক্রবার রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে রিহ্যাব ফেয়ার-২০১২ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়। সংগঠনের পক্ষে এসব সঙ্কটের কথা তুলে ধরে সরকারের সহযোগিতা ও সঙ্কট উত্তরণে তারা চার দফা সুপারিশ করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন রিহ্যাব সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান ভূঁইয়া। এ সময় এর সদস্য ও মেলা কমিটির চেয়ারম্যান ড. মোঃ আব্দুর রহিম খানসহ সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সঙ্কট, সঠিক পরিকল্পনার অভাব, সরকারের অসহযোগিতা, জমির উচ্চমূল্য, সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা, নির্মাণ সামগ্রীর উচ্চমূল্য, ব্যাংক ঋণের সীমাবদ্ধতা ও উচ্চসুদ সর্বোপরি, নকশা অনুমোদনে রাজউকের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কারণে দেশের গৃহায়ন শিল্প বাধা ও সঙ্কটের মুখে পড়েছে। সংগঠনটির পক্ষে আনিসুজ্জামান বলেন, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা বিবেচনায় রেখে রিহ্যাব মানুষের আবাসন সঙ্কট নিরসনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এর সদস্যদের প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য হলোÑ পরিকল্পিত আবাসিক নগরী গড়ে তোলা। জাতীয় অর্থনীতিতে এখাতের অবদান ১৫ শতাংশ। কিন্তু, এই শিল্প আজ নানা সঙ্কটের মুখে। কিন্তু এত সমস্যার পরও আমরা মানুষকে ন্যায্যমূল্যে আবাসন দিতে চেষ্টা করছি। তবে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এখান থেকে বের হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২৫ থেকে ৩০ হাজার ফ্ল্যাট বিক্রি অথবা হস্তান্তর করা যাচ্ছে না গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে। তবে সরকার যেহেতু বলছে, এসবের উৎপাদন বেড়েছে তাই রিহ্যাবের দাবি, লাইনের ৫০০ গজের মধ্যে শর্তহীনভাবে অবিলম্বে সংযোগ দিতে হবে। সাংবাদিককের এক প্রশ্নের জবাবে রিহ্যাব সম্পাদক প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান বলেন, সরকারী প্রতিষ্ঠান হওয়ার পরও সাধারণ মানুষের রাজউকের প্লটের প্রতি কোন আগ্রহ নেই। তাদের প্রকল্পে প্লট নেয়ার চুক্তি বাতিল করছেন অনেকে। তাছাড়া রাজউক একাধারে নিয়ন্ত্রক ও সরকারী ব্যবসা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। পৃথিবীর কোন দেশে এমনটি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজউক আমাদের অবৈধভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।
সংবাদ সম্মেলনে চারটি সুপারিশ তুলে ধরে রিহ্যাবের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান বলেন, গত ২ থেকে ৩ বছরে আমরা তেমন কোন ব্যাংক ঋণ পাইনি। একইভাবে গ্রাহকেরাও। আমাদের দাবি, ক্রেতাদের জন্য ৭ শতাংশ হারে ন্যূনতম ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া সরকারের নিবন্ধন ব্যয় হ্রাস, অপ্রদর্শিত অর্থ এই খাতে বিনিয়োগ করার সুযোগ দিতে হবে। এতে অর্থ পাচার কমবে বলেও মত দেন এই ব্যবসায়ী নেতা। এ সময় জমির মূল্য সহনীয় রাখতে সরকারের খাসজমি বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানান তিনি। এছাড়া শর্তবিহীন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ দ্রুত চালু করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
রিহ্যাব-২০১২ মেলার বিস্তারিত তুলে ধরে আনিসুজ্জামান বলেন, শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২ জানুয়ারি থেকে শুরু এবারের মেলায় ২৫০টি স্টল থাকবে। এতে ২২৬টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে। ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এবারের মেলায় অনুমোদনহীন কোন প্রকল্প থাকছে না। তিনি আরও বলেন, রিহ্যাব নিজেই নিশ্চিত করবে যাতে মেলায় কোন অনুমোদনহীন প্রকল্প না থাকে। তাই, মেলায় রাজউককে অবৈধ হস্তক্ষেপ করতে দেয়া হবে না। এর অবৈধ ও বেআইনী খবরদারি চায় না ব্যবসায়ীরা। এতে করে ক্রেতা ও অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয় বলে তিনি জানান।
২ জানুয়ারি বিকেল ৩টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খান মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. খন্দকার শওকত হোসেন ও রাজউকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল হুদা। ৫ দিনব্যাপী এবারের রিহ্যাব মেলায় মোট ২৫০টি স্টলে ২২৬টি প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য প্রদর্শন করবে। এর মধ্যে রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান ২১৯টি, ভবন নির্মাণ সামগ্রীর প্রতিষ্ঠান ৬টি ও অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠান ১টি। রিহ্যাব ফেয়ার-২০১২ তে কো স্পন্সর হিসেবে থাকছে ১৫টি প্রতিষ্ঠান। মেলা ২ জানুয়ারি সাধারণ দর্শকদের জন্য বেলা ১১টা থেকে রাত ৮পর্যন্ত খোলা থাকছে। এদিকে ৩-৬ জানুয়ারি সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খেলা থাকবে রিহ্যাব ফেয়ার। মেলার টিকেট নির্ধারণ করা হয়েছে জনপ্রতি ৫০ টাকা।

No comments

Powered by Blogger.