পিংকির আত্মহত্যা- স্থানীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন পিংকির জানাজা পড়ালেও এখন তিনি পঞ্চায়েত কমিটির ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন

দেশে অনেক নারী এখনও নির্যাতনের শিকার। এখনও এসব কারণে কোন কোন নারী আত্মহননের পথ বেছে নেয়; কারও কারও মৃত্যুর পরও তাদের যেন নিস্তার নেই। অনেক ক্ষেত্রে অপবাদ ও অত্যাচারের শিকার হতে হয় তার পরিবারকে।
সমাজের দুর্বল ও দরিদ্র পরিবারের মানুষদের প্রতি এ ধরনের অত্যাচার আর কতকাল চলবে? সম্প্রতি রাজধানীর ধলপুরে পিংকি নামে অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রী এলাকার বখাটেদের অপমান-লাঞ্ছনা সইতে না পেরে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। আত্মহত্যার পর তার লাশ দাফনের জন্য নিয়ে আসা হয় গ্রামের বাড়ি সোনারগাঁর বুরুমদিতে। বেঁচে থাকার সময় বকাটেদের কাছ থেকে সম্মান ও মর্যাদা পায়নি পিংকি; মৃত্যুর পরও ন্যায়বিচার পায়নি সে। পঞ্চায়েত কমিটি আত্মহত্যার দোহাই দিয়ে গ্রামের কবরস্থানে পিংকির লাশ দাফন করতে দেয়নি। এর আগেও কোন কোন স্থানে এই ধরনের ঘটনায় জানাজা না পড়ানো ও দাফন না করার ফতোয়া দেয়া হয়েছিল। অনেক ক্ষেত্রে নিহতের পরিবারটিকেও বছরের পর বছর ধরে নানাভাবে অপদস্ত হতে হয়েছে। পিংকির পরিবারের ক্ষেত্রেও এর কোন ব্যতিক্রম হয়নি। গ্রামের কবরখানায় পিংকির লাশ দাফন করতে না দেয়ায় পিংকির পরিবার প্রতিবাদ করেছিলেন। তাদের ‘একঘরে’ করার হুমকি দেয়। এই একবিংশ শতকেও এমন অবস্থা কিভাবে চলতে পারে? বখাটের অত্যাচারে ‘পিংকি’ আত্মহত্যা করেছে, এ জন্য তার পরিবারকে সমবেদনা ও সহযোগিতা করা উচিত।
এ ধরনের অন্যায় যদি অব্যাহত থাকে, তবে আইনের শাসন কিভাবে নিশ্চিত হবে? পিংকিকে বখাটেরা দিনের পর দিন লাঞ্ছনা ও অপমান করেছে; অথচ বখাটের উপদ্রব থেকে কেউ রক্ষা করতে পারেনি। জানা গেছে, গ্রামের কবরস্থানে দাফনের অনুমতি না পাওয়ায় তাকে নিজ বাড়িতে দাফন করা হয়।
জানা যায়, স্থানীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন পিংকির জানাজা পড়ালেও এখন তিনি পঞ্চায়েত কমিটির ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এসব ফতোয়াবাজের কবল থেকে সমাজকে রক্ষা করতে হবে। পিংকির আত্মহত্যার জন্য দায়ী বখাটেদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হোক। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুবী।

No comments

Powered by Blogger.