কুয়াশার দিনে ব্যাটিং দাপট

কুয়াশায় মোড়ানো আরেকটি দিন। প্রথম দিনের চেয়ে কুয়াশা আরও বড় বাধা হয়ে দাঁড়াল কাল দ্বিতীয় দিনে। মিরপুরের মতো বগুড়াতেও খেলা শুরু হয়েছে নির্ধারিত সময়ের চার ঘণ্টারও বেশি পর। মিরপুরে ৪১ ওভার হতে পারল, বগুড়ায় ৪৫ ওভার। আরেকটি মিল, দুই ম্যাচেই ব্যাটসম্যানদের দাপট।
কুয়াশা আর আলোকস্বল্পতা মিলিয়ে প্রথম দুই দিনে যত ওভার খেলা নষ্ট হয়েছে, অভাবনীয় কিছু না হলে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের (বিসিএল) প্রথম দুই ম্যাচে ফলাফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। প্রথম ইনিংসের লিড তাই গুরুত্বপূর্ণ। সেই সম্ভাবনা ভালোই জিইয়ে রেখেছে ওয়ালটন মধ্যাঞ্চল। মিরপুরের দ্বিতীয় দিন শেষে স্কোর ৩ উইকেটে ২১০। প্রাইম ব্যাংক দক্ষিণাঞ্চলের প্রথম ইনিংসের চেয়ে এখনো অবশ্য ১৩৩ রানে পিছিয়ে তারা। প্রথম ইনিংসের লিড নিশ্চিত করতে বগুড়ায় বিসিবি উত্তরাঞ্চল উঠছে রানপাহাড়ে। দ্বিতীয় দিন শেষে রান ৬ উইকেটে ৪৯৯।
মিরপুরে জিয়াউর রহমানের অবিশ্বাস্য ইনিংসের রেশ থাকল যেন কালও। ইনিংসজুড়েই মধ্যাঞ্চল রান তুলেছে ওভারপ্রতি পাঁচের আশপাশে। জিয়ার মতো খুনে কোনো ইনিংস ছিল না কারও। তবে ছিল শামসুর রহমানের দাপুটে ব্যাটিং আর মার্শাল আইয়ুবের দৃষ্টিনন্দন সব শট। দুপুর সোয়া একটায় যখন দিনের খেলা শুরু হলো, কুয়াশার চাদর তখনো সরেনি। মেঘের আড়ালে ঢাকা সূর্য, উইকেট ঢাকা ছিল দীর্ঘক্ষণ। কিন্তু অনুকূল কন্ডিশনের সুবিধাটা নিতে পারেননি দক্ষিণাঞ্চলের দুই পেসার রবিউল ও রুবেল। ফুল লেংথে বোলিং করে সুইং পাওয়ার চেষ্টা করার বদলে বেশির ভাগ সময় শর্ট অব লেংথে বোলিং করে দুই টেস্ট বোলার প্রতিপক্ষকে দিয়েছেন রান করার সুযোগ।
৪ ওভারের প্রথম স্পেলে রুবেল দিয়েছেন ২৭। ৮ ওভারের প্রথম স্পেলে রবিউল ৩১। তবে নির্বিষ বোলিংয়ের ফাঁকেই আউট হয়েছেন আসিফ আহমেদ। ধারহীন বোলিংয়েও ভুগেছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। ১৯ বলে ১৯ করে রবিউলের বলে লাইন মিস করে এলবিডব্লু আসিফ। আশরাফুলের ৫০ মিনিটের অস্বস্তির উপস্থিতি শেষ হয়েছে সোহাগকে ব্যাকফুটে খেলে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে।
শুরুটা খানিকটা নড়বড়ে ছিল শামসুরেরও। তবে বাজে বলগুলোর ফায়দা নিতে ভুল করেননি। ইনিংসের তৃতীয় বলেই রবিউলকে কাভার ড্রাইভে চার মেরে শুরু, বাঁহাতি স্পিনার মুরাদকে মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে ছুঁয়েছেন ৫০। ফিফটির পর মেরেছেন আরও তিন ছক্কা। বাঁহাতি স্পিনার মুরাদকেই আরেকটি, অফ স্পিনার সোহাগের পরপর দুই ওভারে স্লগ সুইপে বাকি দুটি। প্রাপ্য সেঞ্চুরিটাও মিস করেছেন সোহাগকে স্লগ সুইপ করতে গিয়েই। মার্শালের ইনিংসটা ছিল আরও অনেক গোছানো, খেলেছেন চোখকে প্রশান্তি দেওয়া সব কাভার ড্রাইভ। সেঞ্চুরি দিয়ে শেষ করা জাতীয় লিগে ছিলেন সর্বোচ্চ স্কোরার। বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগটা শুরু করলেন যেন সেখান থেকেই। দিন শেষ করেছেন ৬৫ রানে।
মার্শাল ধরে রেখেছেন জাতীয় লিগের ধারা, আর নাসির হোসেন যেন টেস্ট ক্রিকেটের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টানা দুই টেস্টে নড়বড়ে নব্বইয়ে কাটা পড়ার পর কাল বগুড়ায় আউট ৯৩ রানে। ৮ চার ও ৪ ছয়ের ইনিংসটা শেষ হয়েছে পূর্বাঞ্চল অধিনায়ক অলক কাপালির বলে বোল্ড হয়ে। আফতাব আহমেদের বলে বোল্ড হয়ে সেঞ্চুরি বঞ্চিত হয়েছেন নাঈম ইসলামও (৮২)। সেঞ্চুরির আশা নিয়ে আজ দিন শুরু করবেন অলরাউন্ডার ফরহাদ রেজা (৬৬*)।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
 দক্ষিণাঞ্চল-মধ্যাঞ্চল
প্রাইম ব্যাংক দক্ষিণাঞ্চল ১ম ইনিংস: ৩৪৩; ওয়ালটন মধ্যাঞ্চল ১ম ইনিংস: ৪১.৪ ওভারে ২০১/৩ (আসিফ ১৯, শামসুর ৮৪, আশরাফুল ১০, মার্শাল ৬৫*, মাহমুদউল্লাহ ২০*, সোহাগ ২/৫৯, রবিউল ১/৪৪)।
 উত্তরাঞ্চল-পূর্বাঞ্চল
বিসিবি উত্তরাঞ্চল ১ম ইনিংস: ১৩১ ওভারে ৪৯৯/৬ (নাঈম ৮২, নাসির ৯৩, ফরহাদ রেজা ৬৬*, সোহরাওয়ার্দী ৩৩*, তাপস ৩/৬৩, অলক ১/৩৫, আফতাব ১/৪৯, এনামুল জুনিয়র ১/১৫০)।

No comments

Powered by Blogger.