রাজধানীর কাঁচা বাজারে কুয়াশার প্রভাব, সবজির দাম বেড়েছে

শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার প্রভাব পড়েছে রাজধানীর কাঁচাবাজারে। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে পণ্যবাহী ট্রাক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রাজধানীতে ঢুকতে পারছে না। এর ফলে কাওরানবাজারসহ পাইকারি বাজারগুলোতে সবজিসহ কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে।
এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। কাঁচা মরিচ ও নতুন আলুর দাম বেড়ে গেছে। প্রতিকেজি ১০ টাকা বেড়ে মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০, আর নতুন আলুর স্বাদ গ্রহণে ভোক্তাকে ২২-২৪ টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে। অথচ একদিন আগে খুচরা পর্যায়ে নতুন আলু ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ফকিরাপুলের বাজারে সবজি বিক্রেতা রমজান আলী জনকণ্ঠকে বলেন, বেশির ভাগ শাক-সবজি আসে যশোর, সাতক্ষীরা এবং রাজশাহী অঞ্চল থেকে। ঘন কুয়াশার কারণে দৌলতদিয়ায় ফেরি চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। এ কারণে সবজিসহ অন্য পণ্য আসতে পারছে না। এ জন্য এসব পণ্যের দাম বাড়তির দিকে রয়েছে। ঘনকুয়াশা কেটে গেলে পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে তিনি জানান। তবে ডাল ও ডিম ছাড়া ভোগ্যপণ্যের বাজার কমতির দিকে রয়েছে। কমেছে নতুন পেঁয়াজের দাম। তবে এ দামও বেশি বলে মনে করছেন ভোক্তারা। দাম আরও কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা প্রয়োজন। ব্যবসায়ীরাও বলছেন, এ পণ্যের দাম আরও কমা প্রয়োজন। কারণ গত মৌসুমে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০ টাকায়। এখন নতুন পেঁয়াজ ওঠা শুরু হয়েছে তাই দাম আরও কমে আসা উচিত।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে মানভেদে ৩০-৩৫ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে নতুন পেঁয়াজ। খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি। পামওয়েল ৮৬, সুপার প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৮৪ টাকায়। এছাড়া বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে আগের দামে। দাম কমার তালিকায় স্থান পেয়েছে চিকন লবণ। প্যাকেটজাত প্রতিকেজি লবণে ২ টাকা দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ২৮ টাকা। ফার্মের ব্রয়লার মুরগির বাজার স্থিতিশীল রয়েছে।
গত দু’মাসের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কয়েকবার বাড়লেও তা খুব বেশি নয়। ১২৫-১৫০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে।
এদিকে, চিকন মসুর ডালের দাম গত সপ্তাহে এক লাফে ১০ টাকা বেড়ে ১৫০ টাকায় ওঠে। এখনও ওই দামে বিক্রি হচ্ছে। ১-২ টাকা করে ধীরে ধীরে বাড়ছে ডিমের দাম। ৩৬-৩৮ টাকায় প্রতিহালি ডিম বিক্রি হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মানভেদে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকার মধ্যে। আর আটা ৩৪ টাকায়। চিনির বাজার আগের মতো স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকা। খাদ্যপণ্যের তালিকায় অতিপ্রয়োজনীয় চাল ও আটার মূল্য স্থিতিশীল থাকায় সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে। তবে শীতকালীন সবজির ঘাটতি না থাকলেও সরবরাহে বিঘœ ঘটায় কয়েকটি পণ্যের দাম ফের বেড়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঘন কুয়াশার কারণে পণ্যবাহী ট্রাক রাজধানীতে ঢুকতে পারছে না। ফলে কিছু পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। গরু এবং খাসির মাংস বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজার ও মানভেদে খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪৮০-৫০০ টাকায়।
এছাড়া গরুর মাংসের দাম বাড়তি রাখার অভিযোগ রয়েছে। ২৮০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। এক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত মূল্য রাখা হচ্ছে না বলে মাংস ব্যবসায়ীদের প্রতি ক্রেতাদের অভিযোগ রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামে মাংস বিক্রি করা সম্ভব নয়। কারণ অনেক বেশি দাম দিয়ে ছাগল কিনতে হচ্ছে। আস্ত ছাগলের দামের সঙ্গে সমন্বয় করতে যেয়ে মাংসের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে বাজার মনিটরিং টিম, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর এবং মোবাইল কোর্টের আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। দুর্বল মনিটরিংয়ের কারণে প্রায়ই কারসাজি করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হয়ে থাকে। সম্প্রতি পেঁয়াজ নিয়ে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করছেন। ন্যায্যমূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে অধিক মুনাফা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।
কাওরানবাজারে নিয়মিত বাজার করেন তৌফিক হাসান। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, অন্যান্য বাজারের চেয়ে সবসময় এখানে একটু কম দামে পণ্য কেনার সুযোগ রয়েছে। সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মনিটরিংয়ের কারণে এটা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু এখন মনিটরিং টিম নিষ্ক্রিয় রয়েছে। আর এ সুযোগ নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন, বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা শক্তিশালী করার কোন বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.