বছরের প্রথম দিনে নতুন বই- এবারও সরকার শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের প্রথম দিনে যাতে নতুন বই পৌঁছায় তার উদ্যোগ নিয়েছে

ইংরেজী নতুন বছরে অন্য বহু দেশের মানুষের মতো এ দেশের মানুষও আনন্দে এবং নতুন আশায় উজ্জীবিত হবে। পুরনো বছরের বিদায় শেষে নতুন বছরের প্রথম দিনে মানুষ প্রত্যাশা করে নতুন বছরটি তাদের কাটবে ভাল।
পুরনো বছরের অনেক ভুল-ত্রুটির কথা ভেবে সে ধরনের ভুল-ত্রুটি যাতে এ বছর না হয় সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকবে এবং প্রত্যাশা করবে নতুন বছরটি তাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তি ও কল্যাণ বয়ে আনবে। তাই বলা যায়, নতুন বছরের প্রথম দিনটি হচ্ছে প্রত্যাশার দিন, স্বপ্নের দিন, স্বপ্ন সফল করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার দিন। আমাদের দেশে সামগ্রিক এই স্বপ্নের পাশাপাশি আরেকটি বিষয় রয়েছে যেটি এটা ছাড়া আরেক স্বপ্নে উজ্জীবিত করবে নবীন শিক্ষার্থীদের। নতুন বছরে নতুন ক্লাসে বসার একটা আনন্দ তাদের মনে রয়েছে। এর সঙ্গে আরেকটি আনন্দ তাদের উদ্বেলিত করবে। সেটা হচ্ছে তারা হাতে পাবে নতুন বই। নতুন বছরের প্রথমেই তাদের হাতে পৌঁছবে নতুন বই। এটা তাদের মনে কতখানি আনন্দের সঞ্চার করবে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এবারও সরকার শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের প্রথম দিনে যাতে নতুন বই পৌঁছায় তার উদ্যোগ নিয়েছে। আগের কয়েক বছরের মতো এবারও তার প্রস্তুতি শেষ। এবার প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই যাবে। সরকারের ঘোষিত নীতি অনুযায়ী এই ব্যবস্থা চলছে। কাজটি যে কত ভাল, এর ফল যে কত সুন্দর এবং সুদূরপ্রসারী, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ছেলেমেয়েরা পরীক্ষা দিয়ে পাস করে নতুন ক্লাসে উঠল। তারপর নতুন বইয়ের খোঁজে অভিভাবকরা ছুটলেন এখানে-ওখানে। কেউ দু’চার দিনের মধ্যে পেলেন। কেউ বইয়ের জন্য হন্যে হয়ে বইয়ের দোকানে দোকানে ঘুরছেনÑ এ ছিল অতীতের মোটামুটি একটা ছবি। বই সব ছাত্রের হাতে আসুক না আসুক ক্লাস যথারীতি শুরু হয়ে যেত। এর মধ্যে ছাত্ররা ক্লাস করত। কিন্তু সবার হাতে নতুন ক্লাসের বই পৌঁছাতে দেরি হয়ে যেত অনেক দিন। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। এই সরকার বছরের প্রথম দিনে সবার হাতে নতুন বই তুলে দিচ্ছে। এটা একটা আনন্দের কথা। এই আনন্দ শুধু ছাত্রদের নয়, তাদের অভিভাবকদের, একই সঙ্গে দেশবাসীরও। সরকার যে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে আন্তরিক এবং সফল তারই প্রমাণ মিলছে এই কাজে। এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যেতে পারে, একবার বই ছাপানোর প্রস্তুতির পর্যায়ে বইয়ের গুদামে অগ্নিকা-ে বই এবং কাগজ পুড়ে গিয়েছিল। সেই ক্ষতি সামলে নিয়েও সে বছরও যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দিয়েছিল।
অনেক সমস্যার এ দেশে বড় একটি সমস্যা নিরক্ষরতা তথা শিক্ষাহীনতা দূর করা। এখনও অনেকে নিরক্ষর, নিরক্ষর অনেক শিশু। অনেক শিশু পড়তে পড়তে মাঝখানে ঝরে পড়ে। এসব সমস্যা চিরকাল থাকতে পারে না। দেশের উন্নয়নের জন্য, প্রয়োজন শিক্ষিত নর-নারী। আধুনিক যুগের প্রয়োজন মেটাতে তথা ভবিষ্যত দেশের সকল ক্ষেত্রে হাল ধরতে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ছেলেমেয়ের প্রয়োজন। সরকারের এই যে বিনামূল্যে নতুন বছরের প্রথম দিনে নতুন বই দেয়ার কর্মসূচী এতে শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়বে। এতে ঝরে পড়ার হারও কমবে এবং দেশে শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এবার নতুন বই, নতুন পড়া। হাতে বই সবাই পেলে খুশি হবে। কারণ পুরনো বইয়ের পাঠ্যসূচী বদল হয়েছে, তাই পুরনো বই কাজে আসবে না। নতুন বই তাই সবাইকে উৎসাহিত করবে।
কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুপুরে শিক্ষার্থীদের খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের সকল নবীন শিক্ষার্থী ছেলেমেয়ের জন্য সব পর্যায়ের সকল শিক্ষায়তনে দুপুরে কিছু খাওয়ার ব্যবস্থা চালু করার কথাও সরকারকে ভাবতে হবে এবং ক্রমান্বয়ে এ উদ্যোগের বাস্তবায়ন করতে পারলে সেটা হবে আরও উত্তম। শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যত। এদের জন্য আমাদের সম্ভাব্য সব করা উচিত।

No comments

Powered by Blogger.