বাড্ডায় দোকান থেকে টেনে এনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকে হত্যা

রাজধানীর বাড্ডায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা মামুন হোসেনকে (৩২) গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ত্রাসীরা দোকান থেকে টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় এনে ককটেল মেরে ও গুলি করে হত্যা করেছে। তিনি ঢাকা মহানগরের ১ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। মামুন সপরিবারে বাড্ডার আনন্দনগরে থাকতেন এবং ইট-বালির ব্যবসা করতেন। মেরুলে তাঁর রিকশার একটি গ্যারেজ ছিল। পরিবারের দাবি, মামুন সম্পর্কে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমানের ভাগনে।


প্রত্যক্ষদর্শী ও বাড্ডা থানার পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইট-বালি কিনতে এক ব্যক্তি মামুনের বাসায় যান। তিনি ওই ব্যক্তির সঙ্গে হেঁটে কাছেই নিজের ইট-বালির দোকানের দিকে রওনা দেন। পথে মামুনকে লক্ষ্য করে সশস্ত্র চার-পাঁচজন সন্ত্রাসী ককটেল নিক্ষেপ করে। এতে তিনি সামান্য আহত হন এবং ওই অবস্থায় দৌড়াতে থাকেন। সন্ত্রাসীরা তাঁর পিছু নেয়। প্রায় ৫০০ গজ দৌড়ে মামুন একটি মুদির দোকানে ঢুকে পড়েন।
ওই দোকানের কর্মচারী আহসানউল্লাহ জানান, সন্ত্রাসীরা মামুনকে দোকান থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে আনন্দনগর সমাজ উন্নয়ন সমিতির কার্যালয়ের সামনে নিয়ে যায়। সেখানে তারা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি ও ককটেল নিক্ষেপ করে। এতে তাঁর হাত, মাথা ও বুকে জখম হয়।
নিহত মামুনের বড় ভাই সুমন হোসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম আলোকে বলেন, গুলি ও ককটেলের শব্দ শুনে তাঁরা বাসা থেকে ঘটনাস্থলে গিয়ে মামুনকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। প্রথমে বাড্ডা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা দ্রুত তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলেন। সেখানে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মামুনকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালে বিলাপ করছিলেন মামুনের মা ফরিদা বেগম, স্ত্রী শাহিদা বেগমসহ স্বজনেরা।
সুমন ও মামুনের বন্ধু লিটন প্রথম আলোকে বলেন, মামুন ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন করতেন। বাড্ডার ফকিরাখালী থেকে নামাপাড়ায় ড্রেজারের পাইপ বসাতে তাঁকে বাধা দেয় স্থানীয় সন্ত্রাসী আলম ও জাহাঙ্গীর। দুই দিন আগে তারা মামুনকে আনন্দনগরে ডেকে নেয় এবং মাছের খামারের ওপর দিয়ে ড্রেজিংয়ের পাইপ নেওয়া হলে তাঁর লাশ ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়।
জানতে চাইলে বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, মামুন আনন্দনগরে একটি জমিতে বালি ভরাটের কাজ পেয়েছিলেন। এ নিয়ে আলমগীরের সঙ্গে তাঁর বিরোধ দেখা দেয়। এ ছাড়া ড্রেজিং নিয়েও দুজনের মধ্যে বিরোধ ছিল। এসবের জের ধরেই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর অনেক প্রত্যক্ষদর্শীও রয়েছে। এ ব্যাপারে মামুনের বাবা নূর মোহাম্মদ ২২ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেছেন।
ওসি বলেন, হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। মামুনের বিরুদ্ধে পুলিশকে মারধর, চাঁদাবাজিসহ বাড্ডা থানায় চারটি মামলা রয়েছে।
মামুনের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে রাতে স্বজনেরা মামুনের লাশ গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নিয়ে যান। মর্গ সূত্র জানায়, ময়নাতদন্তকালে মামুনের শরীর থেকে নয়টি স্প্লিন্টার পাওয়া গেছে।

No comments

Powered by Blogger.