সড়ক দুর্ঘটনা-মন্ত্রীর গাড়িই যখন বিপন্ন...

যোগাযোগমন্ত্রীর গাড়িই যখন বিপন্ন হওয়ার উপক্রম হয়, তখন দেশে সড়কপথে চলাচল কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সংস্কারবিহীন রাস্তার বেহাল অবস্থা তো আছেই, তার চেয়েও বেশি আছে গাড়ি চালনায় চালকদের দক্ষতা ও মানবিক গুণের অভাবজনিত সমস্যা। গত বুধবার যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও গণফোরাম চেয়ারম্যান ড. কামাল হোসেনের গাড়ি দুটি যেভাবে প্রায় টক্কর লাগার অবস্থায় চলে গিয়েছিল তাতে দেশের দুই বিশিষ্ট ব্যক্তিই দুর্ঘটনার


কবলে পড়তে পারতেন। মন্ত্রীর গাড়ির চালকের খামখেয়ালিপনার কারণে হোক আর দক্ষতার অভাবেই হোক একটি বিপজ্জনক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত। যোগাযোগমন্ত্রী ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের অবস্থা সরেজমিন পরিদর্শন ও কোথায় কী ধরনের ব্যবস্থা নিলে এই সড়কে দুর্ঘটনার হার কমানো যায় তা প্রত্যক্ষভাবে উপলব্ধি করার জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক পরিদর্শন করছিলেন। একই সময়ে ড. কামালও ওই পথ ধরে যাচ্ছিলেন। মন্ত্রীর গাড়িটি সামনে আর ড. কামালের গাড়িটি পেছনে ছিল। সে সময় মন্ত্রীর গাড়ির ড্রাইভার হঠাৎ করে জোরে ব্রেক কষায় ড. কামালের গাড়িটি পেছন দিক থেকে মন্ত্রীর গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে যেতে পারত। ড. কামালের গাড়ির চালক সাবধানী ছিলেন বলেই সৌভাগ্যক্রমে এ যাত্রা দেশের দু'জন বরেণ্য মানুষ সমূহ দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন। মন্ত্রী অবশ্য এর শাস্তিস্বরূপ তার গাড়ির ড্রাইভারকে তাৎক্ষণিকভাবে গাড়ি চালনা থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। একই দিন প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তায় সিনিয়র সাংবাদিক নিখিল ভদ্রের একটি পা বিআরটিসির বাস ড্রাইভারের হৃদয়হীন খামখেয়ালিপনার জন্য গাড়ির নিচে পড়ে খোয়াতে হয়েছে। রাস্তা পারাপারের সময় বিআরটিসি বাসের সঙ্গে ওই সাংবাদিক ধাক্কা লেগে পড়ে যাওয়ার পর ড্রাইভার গাড়িটি থামালে একজন কর্মরত সাংবাদিককে পঙ্গুত্ববরণ করতে হতো না। এভাবে দেশে প্রতিদিন যতগুলো সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে তার কার্যকারণ বিশ্লেষণ করলে প্রায় ক্ষেত্রে চালকরা প্রধানত দায়ী বলে প্রমাণ পাওয়া যাবে। অধিকাংশ সড়কের বেহাল দশার কারণে দুর্ঘটনার হার বেড়ে যায় এটাও সত্যি। তবে রাস্তা খারাপ থাকলে চালকদের যতটা দেখেশুনে গাড়ি চালানো উচিত তা কি তারা করেন? রাস্তা সংস্কারের পাশাপাশি চালকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদান ও মানবিকতায় উদ্বুদ্ধ করা না গেলে সড়ক দুর্ঘটনার অভিশাপ থেকে জাতি মুক্তি পাবে না। তবে যোগাযোগমন্ত্রী ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দুর্ঘটনার হার হ্রাসের জন্য যে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছেন সেটি প্রশংসার যোগ্য।

No comments

Powered by Blogger.