দায়ী চালকের বিচার করার দৃষ্টান্ত চাই-সাংবাদিকের পা হারানো

যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় রাস্তায় পড়ে যাওয়া সাংবাদিক নিখিল ভদ্রের পায়ের ওপর দিয়ে বাস চালিয়ে নেওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে, সড়কব্যবস্থাপনায় নৈরাজ্য চলছে। বিআরটিসির চালক হিসেবে তাঁর কাছ থেকে অধিকতর দায়িত্বশীলতা প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু তিনি ঠান্ডা মাথায় একজন বিপন্ন পথচারীর পাশে না দাঁড়িয়ে তাঁকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ বেছে নেন। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কোনো সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ কিংবা কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে গত তিন বছরে
তেমন কোনো সরকারি উদ্যোগ দেখা যায়নি। এর আগে চিত্রতারকা ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বাধীন ‘নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন’ কিছু দাবি বাস্তবায়নে অনশন করেছিল। তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী নির্দিষ্ট আশ্বাস দিয়ে তাদের অনশন ভাঙান। কিন্তু গতকাল ইলিয়াস কাঞ্চন প্রথম আলোকে বলেছেন, যেসব বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, তার একটিও বাস্তবায়িত হয়নি। সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের মর্মস্পর্শী মৃত্যুর পর আশা করা হয়েছিল, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকারি তরফে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কিন্তু সে আশা পূরণ হয়নি।
কালের কণ্ঠ পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নিখিল ভদ্রের পা হারানোর ঘটনায় সাংবাদিক সমাজের বিক্ষোভ প্রদর্শনের পরিপ্রেক্ষিতে যোগাযোগমন্ত্রী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আশা করেছেন। এটুকুর বাস্তবায়ন বা চালককে বরখাস্ত করা যথেষ্ট নয়। অভিযুক্ত চালককে প্রচলিত আইনে গ্রেপ্তারের ১২০ দিনের মধ্যে তাঁর বিচার-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। তদন্ত কমিটির কাছ থেকে আমরা গাড়ির বিমাসংক্রান্ত বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ আশা করি। নৌ ও বিমান দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ মেটাতে তহবিল থাকলেও সড়ক দুর্ঘটনার জন্য কোনো সরকারি তহবিল নেই। অন্যদিকে গাড়ির ফিটনেস এবং চালকদের প্রশিক্ষণ দুটোরই করুণ অবস্থা অব্যাহত। ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে চালক-সহকারীদের অশুভ আঁতাত অটুট।
সারা দেশে বিআরটিসির ১৭টি প্রশিক্ষণকেন্দ্র ছিল। এর মধ্যে অল্প কয়েকটি কোনোমতে সচল রয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি ঘরে একটি করে কর্মসংস্থানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল; সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে গাড়ির চালনা পেশায় শিক্ষিত যুবসমাজকে সহজেই আকৃষ্ট করা সম্ভব। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আশু কী করতে হবে, সে বিষয়ে যথেষ্ট বিশেষজ্ঞ সুপারিশ রয়েছে। এখন দরকার সদিচ্ছার সঙ্গে এর বাস্তবায়ন।
নিখিল ভদ্রের কেটে ফেলা পা তাঁকে আর ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না। তাঁকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এরকম করুণ দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর দেখতে চাই না।

No comments

Powered by Blogger.