বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দনঃ জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক সিরিজ জয়

দেশবাসী সব সময় একটি সুসংবাদের অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু কোথায় সেই সুখবর? স্বপেম্নর জাল বাস্তবে এসে ছিঁড়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। বিশেষ করে যেখানে আইন-শৃগ্ধখলা ব্যবস্থার চরম অবনতি, ভোজ্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি, জীবিকার সঙ্কট, গ্যাস ও বিদ্যুতের দুরবস্থা নিয়ে সাধারণ মানুষকে সারাক্ষণ দুর্ভাবনার মধ্যে থাকতে হয়, সেখানে একটি সুখবর শোনা সত্যিই সৌভাগ্যের ব্যাপার। হ্যাঁ, সেই সুসংবাদ তৈরি করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
তারা সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ৫টি আন্তর্জাতিক একদিনের ম্যাচের মধ্যে ১টি বাকি থাকতেই গত ৩ নভেম্বর চট্টগ্রামে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে নিয়েছে। চারদিকে জনজীবনে নানা অস্থিরতার মধ্যে এমন একটি সুখবর তৈরি করার জন্য আমরা দেশবাসীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।
রেকর্ডবুক বলছে, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ললাটে যুক্ত হয়েছে সৌভাগ্যের তিলক। চলতি বছরেই তারা একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের চার চারটি সিরিজ জয় করে নিয়েছে। তার মধ্যে ৩টি ছিল জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক সিরিজ জয়ের অনন্য রেকর্ড। চলতি বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশের ওয়েসল্ট ইন্ডিজ সফরটিও ছিল অত্যন্ত সফল। সেখানে ৩টি ওয়ানডে ও ২টি টেসেল্ট ওয়েসল্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করে জোড়া সিরিজ জয়ের বিরল কৃতিত্ব দেখায় বাংলাদেশ। বলার অপেক্ষা রাখে না, জয়ের এই ধারায় উঠে আসার জন্য বাংলাদেশকে এ পর্যন্ত খেলতে হয়েছে ২০৯টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ। তার মধ্যে ছিল জয় ৫৩টি, পরাজয় ১৫৪টি আর বাতিল ২টি ম্যাচ। সব মিলে সাফল্যের হার ২৫। আইসিসি র্যাংকিংয়ে ওয়ানডে সল্ট্যাটাসপ্রাপ্ত ১২ দেশের মধ্যে ১৩৯৩ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের স্থান এখন ৯-এ। ৮ নম্বর স্থানে আছে ওয়েসল্ট ইন্ডিজ আর ১০, ১১ ও ১২ নম্বরে আছে যথাক্রমে জিম্বাবুয়ে, কেনিয়া ও আয়ারল্যান্ড।
তিন-তিনটি সিরিজ জয়ের রেকর্ড ঝুড়িতে থাকা সত্ত্বেও সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশকে হোঁচট খেতে হয়। ৪ উইকেটে বাংলাদেশকে পরাজিত করে তারা তাদের উজ্জ্বল প্রত্যাবর্তনের কথা জানান দিচ্ছিল। কিন্তু ২য় ও ৩য় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। এ দুটি ম্যাচে বড় ব্যবধানে জয় তালুবন্দি করে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ২-১-এ। গত ৩ নভেম্বর চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ৪র্থ ম্যাচে তারা জিম্বাবুয়েকে ৬ উইকেটে পরাজিত করার মধ্য দিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে। এত বড় জয় পাওয়ার পরও দুঃখ একটাই—জিম্বাবুয়েকে ৪৪ রানে বেঁধে দিয়ে ৪৫ রানের টার্গেট পেরুতেই বাংলাদেশকে ৪টি মূল্যবান উইকেট হারাতে হয়। এটা মেনে নেয়া অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়নি। কারণ একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের নান্দনিক সৌন্দর্য প্রকাশিত হওয়ার আগেই ম্যাচটির ইতি ঘটে। সব মিলে দুই ইনিংসে খেলা হয়েছে মাত্র ৩৬.৪ ওভার। তার মধ্যে জিম্বাবুয়ে ৪৪ রান করতে গিয়ে সবক’টি উইকেট হারিয়ে খেলেছে ২৪.৫ ওভার আর বাংলাদেশ খেলেছে ১১.৫ ওভার। এতেই বোঝা যায় উইকেটের চরিত্র ছিল কীরকম! উইকেটের এই খামখেয়ালিপনার জন্যই সম্ভবত এই প্রথম স্লিপে এবং সিলি পয়েন্টে দু’দুজন করে ফিল্ডারকে খেলতে হয়েছে। মানতেই হবে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য বড় বেশি টার্নিং হয়ে গেছে এই উইকেট। তাছাড়া ঢাকায় আগের তিনটি ম্যাচ ডে-নাইটে খেলার পর হঠাত্ করে চট্টগ্রামে সকাল সাড়ে ৯টায় (ডিজিটাল সময়ের আগে এটি ছিল সকাল সাড়ে ৮টা) ম্যাচ শুরু হওয়ায় প্রথমে ব্যাট করতে আসা জিম্বাবুয়েকে ময়েশ্চার ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ২৪.৫ ওভারের পর উইকেটের ধরন কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছিল, ময়েশ্চার ঝামেলাটিও অনেকটা দূর হয়ে গেছে ততক্ষণে। সেই অবস্থায় ১১.৫ ওভার খেলতে গিয়ে বাংলাদেশকে টপ অর্ডারের ৪টি মূল্যবান উইকেট হারাতে হয়; এটা সহজে মেনে যায় না।
সে যাই হোক, সিরিজ জয়টাই বড় কথা। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টানা ৩টি সিরিজ জয় কম কথা নয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সেই অসম্ভব কাজটি করে দেখিয়েছে। তার রেকর্ডবুকে এখন লেখা থাকবে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক সিরিজ জয়ের বিরল গৌরবের কথা। এই সুসংবাদ সৃষ্টি করার জন্য আমরা আরও একবার বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে জানাই অভিনন্দন।

No comments

Powered by Blogger.