কাবাডি গ্রামের’ তিন ভাই by মাসুদ আলম

শামসুজ্জামান, মাসুদ রানা, ওমর ফারুক। জাতীয় ক্রীড়ায় তিনটি নামই অচেনা। তবে বড়ুয়ায় পরিচিতি। তিনজনই সহোদর—এটাই সবচেয়ে বড় কারণ নয়। তিনজনই বগুড়া জেলার হয়ে কাবাডি খেলছেন অনেক দিন ধরে। এ যেন কাবাডি পরিবার! সেই সূত্রেই আরও একবার তাঁদের ঢাকা আসা। পল্টন কাবাডি স্টেডিয়ামে চলমান জাতীয় কাবাডিতে তিন ভাই খেলছেন। পাঁঁচ ভাইয়ের বড়জন আবদুল হান্নানও একসময় বগুড়া জেলা কাবাডি দলের জার্সি পরতেন।
সেনাবাহিনী থেকে যিনি এখন অবসরজীবনে। শামসুজ্জামান ও মাসুদ রানার পরেরজন সোহেল রানা থাকেন মালয়েশিয়ায়। সবার ছোট ওমর ফারুক ঢাকায় পড়ছেন। অনার্স পরীক্ষা দেবেন সামনে। তার পরও খেলার টান বলে কথা। জাতীয় কাবাডি এলে তিন ভাইকে এক জার্সিতে পায় বগুড়া জেলা দল।
বাবা হাবিবুর রহমানও কাবাডি খেলতেন। এখন বয়স হয়ে গেছে। কিন্তু খেলার নেশা যায়নি। ছেলেদের খেলা দেখতে পরশু ঢাকায় ছিলেন। এমন বাবার ছেলেরা তো পারিবারিক ঐতিহ্যের পথেই হাঁটবেন! শুধু এই পরিবারটাই কেন, বগুড়ার কাহালু থানার দ্বারাই গ্রামটাই আসলে ‘কাবাডির গ্রাম’। পাশের জামগ্রামেরও একই পরিচিতি। ওই গ্রামের বাবা-ছেলে তো বগুড়ার হয়ে খেলছেন অনেক দিন থেকে। সে এক অন্য রকম গল্প।
কাবাডির প্রতি এই খেলোয়াড়দের মোহটা ছোটবেলা থেকেই। একজনের দেখাদেখি আরেকজন এসেছেন। শামসুজ্জামান এই কাবাডির মধ্যেই খুঁজে পান অনেক রোমাঞ্চ, ‘কাবাডির খেলাটা ফুটবল-ক্রিকেটের চেয়েও ভালো। রেইড করে বা প্রতিপক্ষকে আটকে পয়েন্ট পেলে দর্শক কী যে হাততালি দেয়! ফুটবল-ক্রিকেটে এই আনন্দ নেই।’
শুধু একদলেই খেলা নয়, গ্রামে এই ভাইয়েরা প্রতিপক্ষও হয়ে যান! ‘গ্রামে ছোট ভাইয়ের বিপক্ষে খেলেছি। আমার দল জিতেছে। সেদিন যে কেমন লেগেছে, ভাইয়ের বিরুদ্ধে খেলা...’—সাব রেজিস্ট্রার অফিসের মুহুরি শামসুজ্জামান স্মৃতিটা ভুলতে পারেন না। এখন একটু আর্থিক সংকটে আছেন শামসুজ্জামান। ছেলেকে ঢাকায় এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে ভর্তি করেছেন। সেই খরচ জোগাতেই হিমশিম খান।
যতই আর্থিক টানাপোড়েন থাকুক, তিন ভাইয়ের সম্পর্কটা বেশ গভীর। ‘আমরা তিন ভাই একসঙ্গে খাই। এক খাটেও অনেক ঘুমাইছি। আজ মাঠে আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে বড় ভাই অস্থির হয়ে যান। সুখে-দুঃখে আমরা এক হয়ে থাকি’—বললেন মাসুদ রানা।
যৌথ পরিবার। আয়ের উৎস পুকুরে মাছ চাষ। কাবাডি থেকে পাওয়া যৎসামান্য টাকা নাকি চা-নাশতা খেয়েই শেষ। ওটা নিয়ে তাঁরা ভাবেনও না। বছর দশেক ধরে খেলে চলেছেন। কিছুদিন মালয়েশিয়ায় চাকরি করে আসা মাসুদ রানা এখন একটা এনজিওর আঞ্চলিক ম্যানেজার। খেলাটা তাঁর কাছে শুধুই উপভোগের আনন্দ, ‘খেলার চেয়ে মজার কিছু নেই। খাচ্ছি-দাচ্ছি, এই তো...। এলাকায় কাবাডি খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের অনেক পরিচিতি। হা-ডু-ডু খেলা হলেই আমরা আছি। এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।’
পাওয়া না-পাওয়ার হিসাব মেলাতে রাজি নন সবার ছোট ওমর ফারুক। তাঁর একটাই কথা, ‘যত দিন পারি তিন ভাই একসঙ্গে খেলে যাব। এটাই বড় আনন্দের।’
তিন ভাই যখন এক আত্মা, তাঁরা তো অনেক দিন একসঙ্গে খেলতেই পারেন!

No comments

Powered by Blogger.