কুষ্টিয়ায় মেলায় বোমার পর একজনকে পিটিয়ে হত্যা

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় বিজয় মেলায় দুর্বৃত্তদের ছোড়া বোমার বিস্ফোরণে সদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতা কামারুল আরেফিনসহ দুজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনার পরপর কামারুলের সমর্থকেরা এক মাইক্রোবাসের চালককে পিটিয়ে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে পৌনে ১১টার মধ্যে মিরপুরের আমলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মাইক্রোবাসচালক জিন্দার আলী ওরফে মগা
(৪০) আমলা এলাকার প্রয়াত শের আলী মালিথার ছেলে। আহত কামারুল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সাংসদ আফাজ উদ্দিন আহমেদের বাসায় বোমা হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে করা দুটি মামলার ছয় নম্বর আসামি। গত বছরের ১২ নভেম্বর ওই বোমা হামলায় তিনজন নিহত হয়েছিল।
মিরপুর থানার পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, মহান বিজয়ের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সদরপুর ও আমলা ইউপির আয়োজনে ২১ ডিসেম্বর থেকে আমলা সদরপুর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় খেলার মাঠে বিজয় মেলা শুরু হয়। বুধবার রাত ১০টার দিকে মেলার প্রধান আয়োজক কামারুল আরেফিনসহ কয়েকজন মেলার তথ্যকেন্দ্রে বসে ছিলেন। সাড়ে ১০টার দিকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত ওই তথ্যকেন্দ্র লক্ষ্য করে দুটি বোমা ছুড়ে পালিয়ে যায়। বোমার আঘাতে কামারুল ও আমলা সাঁতার ক্লাবের সভাপতি তৈমুরুল ইসলাম আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে দ্রুত কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হলে রাত দুইটার দিকে তাঁদের ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বোমা হামলার পর রাত পৌনে ১১টার দিকে কামারুলের সমর্থকসহ উত্তেজিত জনতা বিজয় মেলার পাশে আমলা বাজারে মাইক্রোবাসচালক জিন্দার আলীকে পিটুনি দেন।
জিন্দারের চাচাতো ভাই সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রাত ১১টার দিকে তিনি স্থানীয়দের সহায়তায় জিন্দারকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেন। ওই সময় সেখানে বোমা হামলায় আহত দুজনের চিকিৎসা চলছিল। সেখানে শত শত লোক থাকায় জিন্দারের চিকিৎসা করানো যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে জিন্দারকে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চিকিৎসকেরা জিন্দারকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। রাত তিনটার দিকে হাসপাতালে ভর্তির এক ঘণ্টা পর জিন্দারের মৃত্যু হয়।
আমলার বাসিন্দারা বলেন, বোমা হামলার পরপর রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সারা দিন আওয়ামী লীগের লোকজন লাঠিসোঁটাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এলাকায় মহড়া দেয়। ভয়ে আমলা বাজারে গতকাল দোকানপাট খোলেননি ব্যবসায়ীরা। সকাল ১০টার দিকে বাজারের ইসলাম মার্কেটে বিএনপির সমর্থক আনোয়ারুল ইসলামের ঝিলিক গার্মেন্টসে ভাঙচুর চালায় আওয়ামী লীগের লোকজন। এতে আনোয়ারসহ চারজন আহত হন। বিকেলে আমলা বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ।
যোগাযোগ করা হলে সদরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিয়াত আলী বলেন, ‘কামারুল আরেফিনের সুনামে ঈর্ষান্বিত হয়ে চারদলীয় জোটের লোকজন এই বোমা হামলা চালাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
জিন্দারকে পিটিয়ে হত্যার ব্যাপারে নিয়াত আলী বলেন, রাতে বিজয় মেলায় পাঁচ-ছয় হাজার লোক ছিল। বোমা হামলার পরপর ওই লোকজন বাজারে চলে এলে জিন্দারকে বোমা বহনকারী সন্দেহে পিটুনি দেয় বলে তিনি জানতে পেরেছেন।
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পলাশ (২৫) নামের একজনকে আটক করা হয়েছে। বোমা হামলা ও একজনকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গতকাল রাত পর্যন্ত কেউ মামলা করেনি। তবে দুটি ঘটনাই পুলিশ খতিয়ে দেখছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।

No comments

Powered by Blogger.